সিলেটে ৪ চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্রীকে গণধর্ষণ। হত্যার পর লাশ পুঁতেদিয়েছিলো পাহারে।

Slider টপ নিউজ সারাদেশ

24902_f2

 

সিলেট; চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সুলতানা বেগম। বয়স ৯ কিংবা ১০ বছর। গ্রামের মক্তবের কোরআন শিক্ষার ছাত্রী সে। কিন্তু ফুটফুটে সুলতানাকে চার নরপশুর থাবায় চিরতরে দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হলো। মক্তব থেকে বাড়ি ফেরার পথে নরপশুরা সুলতানাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় পাহাড়ের নির্জন স্থানে। এরপর শিশুটির উপর চালায় নির্যাতন। পালাক্রমে ধর্ষণ। নির্যাতনে এক সময় সুলতানা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। শুধু তাই নয়, সুলতানার লাশ পাহাড়ের চূড়ায় কবর খুঁড়ে পুঁতে রাখা হয়।
এ ঘটনাটি ঘটেছে সিলেটের কানাইঘাটে। আলোচিত এ ঘটনায় শোক-ক্ষোভ বিরাজ করছে উপজেলাজুড়ে। ধিক্কার, প্রতিবাদ জানাচ্ছেন সবাই। মাত্র ৯ বছরের একটি শিশুর উপর একদল নরপশু এমন বর্বরোচিত নির্যাতন চালাতে পারে- এমনটি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি এলাকাবাসী। অপহরণ করে লাশ গুম করার ৫ দিন পর বৃহস্পতিবার বিকালে পুলিশ তিন নরপশুকে গ্রেপ্তারের পর তাদের দেয়া স্বীকারোক্তি মতে সুলতানার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। রাতে পুলিশের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদে ঘাতকরা ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। লাশ উদ্ধারের পর শোকের মাতম চলছে সুলতানার পরিবারে। সুলতানার বাড়ি কানাইঘাট উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের এরালিগুল গ্রামে। পিতার নাম তেরা মিয়া। স্থানীয় ছোটফৌদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সে। ঘটনা গত রোববারের। প্রতিদিনের মতো ওইদিন সুলতানা সকালে বাড়ি থেকে মক্তবে পড়তে যায়। পড়া শেষে সকাল ৯টার দিকে বাড়ি ফিরছিল। এমন সময় একই এলাকার বড় খেয়ড় গ্রামের ইমাম উদ্দিনের ছেলে আবুল হোসেন (২৫), লিয়াকত আলীর পুত্র রাসেল উদ্দিন (২০), সুরুজ আলীর পুত্র সাদেক আহমদ (২৮) ও নিমার আলীর পুত্র বাবুল আহমদ (৩৫) তাকে অপহরন করে নিয়ে যায়। এরপর থেকে সুলতানা বেগম নিখোঁজ ছিল। সুলতানার পরিবারের লোকজন আত্মীয়-স্বজনরা অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে সন্ধান না পেয়ে পরদিন সোমবার তারা মাইকিং করেন। পাশাপাশি তারা কানাইঘাট থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। স্থানীয় সূত্রে খবর পেয়ে সুলতানার ভাই একলিম উদ্দিন লোকজন নিয়ে বড়খেয়ড় গ্রামের ইমাম উদ্দিনের ছেলে আবুল হোসেনের বাড়িতে সন্ধান করতে গেলে তারা অস্বীকার করে। সুলতানা অপহরণের খবর পেয়ে তাকে না পেয়ে মঙ্গলবার ইউপি সদস্য মজুর উদ্দিনসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে বিষয়টি অবগত করলে গ্রামবাসী সন্দেহভাজন আবুল হোসেনকে চাপ দেন। এক পর্যায়ে গ্রামবাসীর চাপের মুখে বৃহস্পতিবার সকালে আবুল হোসেনের পরিবার গোপনে গ্রাম ছেড়ে গা-ঢাকা দেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় গ্রামের লোকজন তাকে আটক করে। খবর পেয়ে কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে গ্রামের আবুল হোসেন, রাসেল উদ্দিন ও সাদেক হোসনকে আটক করে। এ সময় আটকৃতরা জানায়, সুলতানাকে তারা ধর্ষণের পর হত্যা করেছে। লাশ পাহাড়ের চূড়ায় কবর খুঁড়ে রেখে দিয়েছে। তাদের স্বীকারোক্তি মতে বিকাল ৫টার দিকে পুলিশ স্থানীয় এরালীগুল টিলার চূড়া থেকে মাটি খুঁড়ে সুলতানার লাশ উদ্ধার করে কানাইঘাট থানায় নিয়ে আসে। নির্মম এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। এদিকে, লাশ উদ্ধারের সময় এরালীগুল পাহাড়ে এলাকার শত শত মানুষ ভিড় জমান। লাশ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সুলতানার পরিবারের সদস্যরা। কানাইঘাট থানার ওসি হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন, আসামিদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা সুলতানার লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে। তারা সুলতানাকে অপহরণের পর পালাক্রমে ধর্ষন করে। এ ঘটনার অপর আসামি বড়খেয়র গ্রামের নিমার আলীর পুত্র বাবুল আহমদ পলাতক রয়েছে। পুলিশ সুলতানার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত ৩ জন ও পলাতক থাকা বাবুলের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা দায়ের করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *