বাংলাদেশ যুব দলের হৃদয় ভেঙে এভাবেই আজ মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে উৎসব করল ভারত। তাদের এই উৎসব অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপ হকির শিরোপা জয়ের। রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে ৫-৪ গোলে জিতে যেভাবে আনন্দে মেতে উঠেছিল ভারতের যুবারা, তা দেখে তিরবিদ্ধ আশরাফুল-রুমনরা!
শেষ ক্ষণে স্নায়ুটা আর ধরে রাখতে না পারলেও বাংলাদেশের তরুণেরা অভিনন্দন পাবেন। দুবার এগিয়ে গিয়েও হয়তো তারা গোল ধরে রাখতে পারেনি, তবে দুবার পিছিয়ে পড়েও ম্যাচে ফিরে প্রমাণ দিয়েছে নিজেদের হার না–মানা মানসিকতার। শেষ ওই তিনটা সেকেন্ড…ইশ্…হকি স্টেডিয়ামজুড়ে শুধুই আক্ষেপ।
তবে সব ছাপিয়ে এটি হয়ে উঠল আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে দারুণ উপভোগ এক ফাইনাল। যার প্রতিটি পরতে থাকল উত্তাপ, উত্তেজনা, গোলের শিহরণ।
২০ মিনিটে নিজেদের প্রথম পেনাল্টি কর্নারেই গোল করে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। রাব্বির পুশ, নাইম স্টপ করেন। আশরাফুলের ফ্লিক ভারতীয় এক ডিফেন্ডারের স্টিকে লেগে ফিরে আসে বল। ফিরতি বল দারুণ হেঁটে পোস্টে পাঠালেন অধিনায়ক রুমন সরকার। তবে এই গোলের আনন্দ মিলিয়ে যেতে সময় লাগেনি। পরের মিনিটেই বাংলাদেশের বক্সে এককভাবে ঢুকে হাওয়ায় ভাসিয়ে লক্ষ্যভেদ করলেন শিবম আনন্দ।
এগিয়ে যাওয়ার লড়াইয়ে বাংলাদেশ আবারও সফল বিরতির ঠিক আগে। দ্রুতগতির আক্রমণে সজীবের বক্সে ফেলা হিট বক্সে ওত পেতে থাকা মহসীনের স্টিকের ছোঁয়া নিয়ে পাস্টে। কিন্তু ৪৩ মিনিটে এই গোল আর ধরে রাখা যায়নি। নিজেদের তৃতীয় পেনাল্টি কর্নার গোলে পরিণত করল ভারত। হিটে ২-২ করলেন হার্দিক সিং।
গোল খেয়ে বাংলাদেশ চাইছিল তৃতীয়বারের মতো এগিয়ে যেতে। কিন্তু সতর্ক ভারত সেই সুযোগ আর দেয়নি স্বাগতিক দলকে। উপরন্তু আক্রমণে বারবার উঠে এসেছে। তৃতীয় গোলটাও পেয়ে গেছে ৫০ মিনিটে। বাংলাদেশের রক্ষণের ভুলে গোললাইনের খুব কাছ থেকে কনজেংবামের আলতো টোকায় ৩-২।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়। ভারত প্রাধান্য নিয়ে খেলতে থাকলেও ম্যাচের ফেরার চেষ্টা চালিয়ে গেছে বাংলাদেশ। ৫৯ মিনিটে নিজেদের তৃতীয় পেনাল্টি কর্নার হয়ে এল স্বস্তির উপলক্ষ। আশরাফুল করে দিলেন ৩-৩। এই গোল যখন নতুন করে সবাইকে উজ্জীবিত করছে, ঠিক তখনই আবার গোল খেয়েছে বাংলাদেশ। ৬২ মিনিটে জটলার মধ্যে কনজিংবামের স্টিকে ৪-৩।
ভারত জিততে চলেছে ধরে নিয়ে গ্যালারিতে আসা সমর্থকেরা যখন মন খারাপ করে বসে, ঠিক তখনই ম্যাচ শেষ হওয়ার ছয় মিনিট আগে স্কোরলাইন ৪-৪। এবার বাংলাদেশকে ম্যাচে দারুণ হিটে ম্যাচে ফেরান মাহবুব। কিন্তু শেষ মুহূর্তে শিবম আনন্দের গোল বাংলাদেশের উৎসবের প্রস্তুতি ভন্ডুল করে দিয়েছে। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের কাছে ৫-৪ গোলে হারের প্রতিশোধও নেওয়া হলো ভারতের। আর তা দেখে হতাশায় টার্ফে শুয়ে পড়ে বাংলাদেশের লড়াকু যোদ্ধারা।
৩ সেকেন্ড আগে স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশের
ঢাকা; ঘড়ির কাঁটা শেষ মিনিটে প্রবেশ করেছে। আস্তে আস্তে ফুরিয়ে আসছে সময়। আর আট সেকেন্ড, সাত সেকেন্ড, ছয় সেকেন্ড…। তারপরই ৪-৪ ম্যাচটা টাইব্রেকারে যাবে। তাতে হেরে গেলে হয়তো এত কষ্ট পেত না বাংলাদেশ। কিন্তু ম্যাচ শেষ হওয়ার তিন সেকেন্ড আগে গোল খেয়ে হারলে কোনো সান্ত্বনাই মন মানাতে পারে না।