যদি মনে করো ভালোবাসা মরে গেছে
যদি মনে করো ভালোবাসা আর নেই
যদি মনে করো ভালোবাসা বলে কখনো ছিল না কিছু—
তখন তাকিয়ে দেখো বাগানের দিকে—
সূর্যের দিকে শিমলতা চেয়ে আছে!
অথবা গাছের গুঁড়িতে পিঁপড়ে বাসা করে দেখে নিয়ো,
বেরিয়েছে ওরা তোমার গলার মতির মালার মতো
দীর্ঘ সারিতে মানুষের দিকে শর্করা সন্ধানে,
যদি মনে করো ভালোবাসা মরে গেছে
ভালোবাসার এই শব্দের মানে ওখানে উল্টে দেখো।
পথের কুকুর শুয়ে থাকে ঘুমে ল্যাম্পপোস্টের নিচে,
ভিখিরি খোঁড়ায় হেঁটে যায় তবু হাত তার পেতে রাখে,
কোথাও কিছুই মরে যায়নি তো,
ঘুমে জাগরণে অভাবে অধীরে তবু
রৌদ্রের দিকে।
পাতা ঝরে যায়, পাতা ধরে ওঠে মাঠ,
শাকান্ন তবু পরিতৃপ্তিতে সংশয়ী হাত চাটে—
যদি মনে করো ভালোবাসা বলে কখনো ছিল না কিছু,
অন্তত নিয়ো আমার অন্ন তোমাদের পাতে তুলে।
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫, লন্ডন, সকাল সাড়ে আটটা
শূন্যতা
এ বড় কঠিন রাত
কনকনে শীতের রাত
হাড়ের ভেতরে শীত
কনকনে শীত
যদি এ কেমন শীত—এই জিজ্ঞাসায়
নিজের ভেতরে যে তাকায়
সে দেখতে পায়
ভালোবাসায় যে ছিল
সে যখন চলে গিয়েছিল
তখন হৃদয়ে তার নেমে এসেছিল
বরফের মতো যে শূন্যতা
তাকে বলে শীত
কনকনে শীত
হাওয়ার ভেতরে যদি কারও শব্দ ওঠে
পায়ের কোমল শব্দ যদি অকস্মাৎ—
তখন বসন্তদিন শীত ছিন্ন করে
তখন এ বড় নয় কনকনে রাত
তখন বসন্ত আর পাখিদের গাঢ় কলরব—
কিন্তু এ এখন আমি মধু থেকে এত দূরে
বরফে জমাট এক মানবিক শব।
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫, লন্ডন, রাত সাড়ে আটটা
গাঢ় সন্ধ্যার অমাবস্যা
শব্দের দোকান খুলে সেই কোন প্রথম প্রহরে
অপেক্ষায় আছি, আর এখন দুপুর,
কেউ তো আসেনি, শুধু এক ক্ষুধার্ত কুকুর—
তাকেই দিয়েছি সব শব্দধ্বনি দুই থালা ভরে।
নদীতে নির্জন নৌকো, জলের নূপুর
স্তব্ধতাকে চুমো খেয়ে শীর্ণ খাতের ভেতরে
শুয়ে আছে—চোখে দেখা যায় যত দূর
দীর্ঘ ছায়া পড়ে আছে মানবের পাঁজরে পাঁজরে।
আমি তো এখন শুয়ে চৌকিতে যে পড়ে আছি একা—
কেউ যদি আসে তার দেখো
পাথর মুহূর্তে যদি ঘুমে চোখ জড়ানোই থাকে—
তবে কাকে
পাব আর—এসে চলে যাবে সে হতাশ—
আমিও স্বপ্নের ঘোরে কেটে যাব ফেটে যাব তাস
যদি এতে জমে ওঠে খেলা!
দোকানটা বন্ধ করে দিতে হলো—এখন যে ঘোর
সন্ধেবেলা—
সন্ধ্যাকাল—নক্ষত্রের দীপ্তিহীন—অমাবস্যা গাঢ় সন্ধ্যার
বুকের ভেতরে শুধু না-লেখা পদ্যের স্বর, যত হাহাকার।
৩১ জুলাই ২০১৬, লন্ডন
প্রথমা প্রকাশন থেকে ‘শব্দই চিকিৎসিত করে’ নামে কবির প্রকাশিতব্য কাব্যগ্রন্থের পাণ্ডুলিপি থেকে কবিতাগুলো ছাপা হলো।