২০০৭ সালের ১৪ মে রাত ৮টার কিছু পরের ঘটনা। ঘটনাস্থল গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানা। আদালত থেকে ব্রিঃ জেঃ(অব:) আ স ম হান্নান শাহকে তার ছেলে শাহ রেজাউল হান্নান শাহ সহ হাজতে আনা হয়েছে। পুরুষ হাজতে জায়গা নেই। তাই নিরাপদে রাখতে তাকে মহিলা হাজতে নেয়া হয়।
সেনাবাহিনী পরিচালিত সরকার তখন থানা এলাকায় কড়া নিরাপত্তা চৌকি বসিয়ে দিয়েছে। হান্নান শাহ ও তার ছেলে রেজাউল হান্নান কে থানা হাজতে আনার পর থানার ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। আমি হান্নান শাহকে আনার একটু আগে থানায় প্রবেশ করেছি। একজন সাংবাদিক হিসেবে সেনাকর্মকর্তাদের সঙ্গে স্বাভাবিক পরিচিতি ছিল। এ ছাড়াও সাংবাদিক সংগঠন ও মানবাধিকার সংগঠনের দায়িত্বশীল পদ থাকায় সেনারা আমাকে বাইরে যেতে বলেননি। আমি তখন থানার সেকেন্ড অফিসারের রুমে বসা ছিলাম। একবার হঠাৎ রুমের সামনে বারান্দায় গেলাম। বারান্দা থেকে মহিলা হাজতে হান্নান শাহকে দেখা যায়। আমি বারান্দা দিয়ে একটু উত্তর দিকে গিয়ে তারপর একটু পূর্ব দিকে গেলাম। সালাম দিয়ে জিঞ্জেস করলাম। আঙ্কেল কেমন আছেন? তিনি সালামের উত্তর দিয়েই সঙ্গে সঙ্গে বলে ফেললেন, হান্নান শাহ এখন মহিলা হাজতে। পত্রিকায় লিখে দাও বাবা। তারপর আমি আর কিছু না বলে উনাকে দেখে থানা থেকে বেরিয়ে যাই।
বলে রাখা ভাল যে, ১৪ মে বেলা ২টা ৪০ মিনিটে হান্নান শাহকে গাজীপুর পুলিশ তার ঢাকার বাসা থেকে বড় ছেলে শাহ রেজাউল হান্নান সহ আটক করেন। সন্ধ্যায় তাকে গাজীপুর আদালতে উঠানো হয়। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে আদালত বাপ-ছেলের ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অতঃপর পুলিশ রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের থানা হাজতে আনে।
হান্নান শাহকে গ্রেফতারের আগে গাজীপুর কোর্ট পুলিশ থেকে একটি মামলার কপি পাই। ওই মামলার আসামী ছিলেন হান্নান শাহ। মামলার এজাহারে বাদী মামলা দায়েরের তারিখ দিয়েছিলেন ১৫/০৫/২০০৭। কিন্তু মামলাটি রেকর্ড হয় ১৩/০৫/২০০৭ তারিখে। হান্নান শাহকে গ্রেফতার করা হয় ১৪/০৭/২০০৭ তারিখে। তারিখের এই গরমিলের কারণে বুঝা গেল তাড়াহুড়ো করে মামলা করায় বাদীর তারিখ ভুলে ১৩ এর জায়গায় ১৫ লেখা হয়েছে। কিন্তু এই ভুল আইনের দৃষ্টিতে গুরুতর অপরাধ হওয়ায় আমি সূযোগ পেয়ে যাই। তাই ১৫তারিখ সকালে দৈনিক খবরপত্র পত্রিকার শীর্ষ শিরোনাম ছিল মামলা দায়েরের পূর্বেই রেকর্ড, ব্রিঃ হান্নান শাহ ছেলে সহ ৪ দিনের রিমান্ডে। তবে পত্রিকায় এ কে এম রিপন আনসারী গাজীপুর থেকে লেখার কারণে পরবর্তি সময় আমাকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। তবুও আমি রক্ষা করতে পেরেছিলাম, সাবেক মন্ত্রী হান্নান শাহর মহিলা হজাতে থাকা অবস্থায় একটি অনুরোধের। আজ তিনি নেই। আমি তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
ড. এ কে এম রিপন আনসারী
এডিটর ইনচীফ
গ্রামবাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম
,