কী হতে পারে সত্যিই ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হলে? সেই সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার আগে দু’দেশের সামরিক ক্ষমতার একটা তুলনা করা যাক৷ পাকিস্তানের হাতে পাঁচ ধরনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র আছে৷ সবকটিই পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম৷ সবথেকে স্বল্প পাল্লার হলো ‘নাসের’, যা ৬০ কিমি পর্যন্ত দূরে গিয়ে আঘাত করতে পারে৷ আর সর্বোচ্চ পাল্লার পাকিস্তানি ক্ষেপণাস্ত্র ‘শাহিন-৩’, যার আঘাতের ক্ষমতা ২৭৫০ কিমি পর্যন্ত৷ অন্যদিকে ভারতেরও আছে পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম পাঁচ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র৷ সবথেকে কম পাল্লার হলো ‘পৃথ্বী’, ১৫০ থেকে ৩৫০ কিমি, এবং সবথেকে দূর পাল্লার ‘অগ্নি-৫’, ৫০০০ কিমি৷ অর্থাৎ ভারতের ক্ষেপণাস্ত্রের মারণক্ষমতা অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত৷ কিন্তু সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধের সময় সবথেকে কার্যকরী ভূমিকা নেবে স্বল্প পাল্লার ‘নাসের’, বিশেষত সীমান্ত এলাকায়৷ অনেক সময় একটা হাতির থেকে এক ঝাঁক মশার বিক্রম বেশি হয়৷ ঠিক সেই রকম৷ পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যাও ভারতের থেকে বেশি৷ ভারতের আছে ৯০ থেকে ১১০টি পরমাণু অস্ত্র, সেখানে পাকিস্তানের ১০০ থেকে ১২০টি৷ এর বাইরে, ভারতের সামরিক ক্ষমতা প্রতিটি ক্ষেত্রে পাকিস্তানের থেকে অনেকটা বেশি৷ মোট সৈন্য সংখ্যায়, ট্যাংক, কামান, ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ব্যবস্থা, যুদ্ধবিমানের সংখ্যায় ভারতই এগিয়ে৷ বিশেষ করে নৌ-বাহিনীর ক্ষমতায়৷ পাকিস্তানের থেকে বেশি যুদ্ধজাহাজ, ডুবোজাহাজ তো বটেই, ভারতের আছে সুবিশাল বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ, যা নৌ যুদ্ধে এবং সামগ্রিকভাবে ভারতকে অনেকটাই এগিয়ে রাখবে৷ এবং ভয়টা সেখানেই, বলছেন সমর কৌশল বিশেষজ্ঞরা৷ পাকিস্তান যখন ক্ষমতায় পারবে না, যুদ্ধে কোণঠাসা হয়ে পড়বে, তখন হাত চলে যেতে পারে পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রের বোতামে৷ ভারত সেই ভয় পাচ্ছে এবং পাকিস্তান সেটা জানে৷ ফলে তারাও নজর নীচে করছে না৷
কিন্তু সমস্যা অন্যত্র৷ ভারতের নাগরিকদের এক বড় অংশের মধ্যে যুদ্ধের জিগির উঠতে শুরু করেছে৷ উরি হামলার পরই এক হিন্দুত্ববাদী নেতা আওয়াজ তুলেছেন, দাঁতের বদলে দাঁত নয়, পুরো চোয়ালটা খুলে নিতে হবে! এমনিতে সেনাবাহিনী সবসময়ই আলাপ-আলোচনার কূটনীতি নয়, মারের বদলা মারে বিশ্বাসী৷ উরি সেনা ছাউনিতে ১৮ জন নিরস্ত্র সহযোদ্ধার মৃত্যু তাদেরকে ক্রুদ্ধ করেছে৷ আজকের এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের যুগে নানা ধরনের বানানো খবর দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে৷ কাশ্মীর সীমান্তে নাকি শয়ে শয়ে ট্যাংক পাঠাচ্ছে সেনাবাহিনী, যে কোনো দিন প্রত্যাঘাত শুরু হবে৷ সদ্য শোনা গেল, পাকিস্তানে ঢুকে গিয়ে ভারতীয় বিমানবাহিনী নাকি বেশ কিছু জঙ্গিকে নকেশ করে বিজয়গর্বে দেশে ফিরে এসেছে!ভারতীয় সংবাদমাধ্যম যদিও খুব বেশি উৎসাহিত নয় এ ধরনের খবরে৷ তাছাড়া ভারত এমনটা করে থাকলে পাকিস্তান যে চুপ করে বসে থাকতো না, সেটা সকলের জানা৷ তাই এমন ভুয়া খবরে ক্ষিপ্ত অনেকেই৷তবে সাউথ ব্লকের তৎপরতার কথা উঠে এসেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে৷ ওদিকে পেশাওয়ার-ইসলামাবাদ হাইওয়েতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী টহলদারি শুরু করেছে এ খবরে গণ উন্মাদনা আরও ইন্ধন পাচ্ছে৷ভাবখানা এ রকম, এখন একটা যুদ্ধ লাগলেই যেন দেশের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে!
সুত্রঃ ডয়েচে ভেলে