সৌদি আরব করেসপন্ডেন্ট
রিয়াদঃ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আজ মুসলমানরা মার খাচ্ছে নির্যাতিত হচ্ছে। এ থেকে রক্ষা পেতে মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলার আহ্বান জানিয়েছেন গ্রান্ড মুফতি আব্দুল আজিজ আল শেইখ। আর এজন্য নিজেদেরকে তাওয় অর্জনের প্রতিও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
আরাফাতের ময়দানে মসজিদে নিমরা থেকে হজের খুৎবা প্রদান করেছেন সৌদি গ্রান্ড মুফতি আব্দুল আজিজ আল শেইখ। বিশ্বের ১৬৩টি দেশ থেকে আগত বিশ লক্ষাধিক মুসলমান আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হয়ে খুৎবা শুনেন।
স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার কিছু পরে শুরু হয়ে খুৎবা শেষ হয় ১২টা ৪৪মিনিটে।
মাত্র ১৭ বছর বয়সে দু,চোখের দৃষ্টি হারানো সৌদি গ্রান্ড ন্মুফতির এটি ৩৪তম হজের খুৎবা।
দৃষ্টিশক্তিহীন এই ইমাম তুলে ধরেন বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতি ও কোরান-হাদিসের আলোকে করণীয় দিকনির্দেশনা। মসজিদে নামিরা থেকে খুতবার শব্দ গোটা আরাফাতে শোনা না গেলেও মুসল্লিরা রেডিও এবং টিভির মাধ্যমে শুনেছেন গুরুত্বপূর্ণ এ খুতবা। তিনি খুতবায় মুসলিম উম্মাহর শান্তি, কল্যাণ ও সমৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেন।
গ্রান্ড মুফতি তার খুৎবায় বলেন, এ দ্বীন ইসলাম আমাদের কাছে আল্লাহর আমানত। সুতরাং যথাযথভাবে এর রক্ষনাবেক্ষণ এবং চর্চা ও পালন আমাদের দায়িত্ব। বিশুদ্ধ ঈমান এবং আমল এ দায়িত্ব আদায়ের প্রথম শর্ত। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সবার রাসূল। তার প্রতি একনিষ্ঠ ভালোবাসা ও গভীর বিশ্বাস ঈমানের জন্য শর্ত। মুসলমান হিসেবে প্রতিটি কাজে আমাদেরকে নীতিবান, ন্যায় পরায়ণ এবং সৎচরিত্রের অধিকারী হতে হবে।
গ্রান্ড মুফতি বলেন, মুসলমান হিসেবে আমাদের পারিবারিক,সামাজিক,অর্থনৈতিকসহ সমুদয় ক্ষেত্রে শরীয়তই আমাদের প্রধান উৎস। একে কেন্দ্র করেই আমাদের জীবন চালাতে হবে। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে ভালো কাজে ব্যয় করতে হবে। আপনি আপনার যৌবন, জীবন,সম্পদ,বুদ্ধি-বিবেকসহ প্রতিটি বিষয়ে দায়িত্ববান এবং আপনাকে এ নিয়ে জবাবদিহী করতে হবে আল্লাহর কাছে।
প্রতিটি ইবাদত আমাদের ওপর আমানত। সেগুলোকে নবীর দেখানো পথে আদায় করা আমাদের কর্তব্য। ধৈর্য, ক্ষমা, ভ্রাতৃত্ব এবং সমুদয় অসৎ স্বভাব থেকে বেঁচে থাকা ইসলামের অনুসারী হিসেবে আমাদের ওপর আমানত। অপর মুসলমান ভাইয়ের সম্মান, সম্পদ এবং তার প্রাণ আমাদের ওপর হারাম। সুতরাং পারস্পরিক সংঘাতে একে অন্যের ওপর আক্রমণাত্মক হওয়া আমাদের জন্য কখনো বৈধ নয়। নবী সা. আমাদেরকে এ থেকে সতর্ক করেছেন। তিনি তো এটাও বলেছেন, যে ধোঁকা দেয়, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা উন্নতি,প্রগতি এবং সভ্যতার মোহে অনৈসলামী আদর্শ ও সংস্কৃতির প্রতি যেভাবে মোহগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন এবং কোনটি ইসলামের সঙ্গে সম্পর্কিত কিংবা কোনটি সাংঘর্ষিক- সেসব ভুলে গিয়ে অন্ধ অনুকরণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন, এতে আমাদেরই ঈমান-আকিদা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উন্নতির পরিবর্তে বিপরীত চিত্র আজ সর্বত্র দেখা যাচ্ছে। সুতরাং বিপদঘেরা এমন দুঃসময়ে আল্লাহ পাকের নির্দেশিত পথে ফিরে আসাই সবচেয়ে কার্যকর সমাধান। এ প্রত্যাবর্তনের এখনই সময়। আল্লাহর রুজ্জু আঁকড়ে ধরা ছাড়া আমাদের কল্যাণ এবং সমাধানের কোনো অন্য বিকল্প নেই।
হজ ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরবের গৃহিত যাবতীয় পদক্ষেপের প্রশংসা করেন এবং মুসলিম উম্মাহর পক্ষ থেকে তাদেরকে কৃতজ্ঞতা জানান।
এরপর হাজীরা জুমার নামাজ আদায় করেন। সন্ধ্যায় (সূর্যাস্তের পর) তারা মুজদালিফার উদ্দেশে আরাফাতের ময়দান ত্যাগ করবেন।
মুজদালিফায় পৌঁছে আবারো এক আজানে আদায় করবেন মাগরিব ও এশার নামাজ। সেখান থেকে জামারায় (প্রতীকী শয়তান) নিক্ষেপের জন্য কঙ্কর (ছোট পাথর) সংগ্রহ করবেন।
মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে রাতযাপনের পর ১০ জিলহজ (শনিবার) সকালে সূর্যোদয়ের পর জামারায় পাথর নিক্ষেপের জন্য রওনা দেবেন হাজিরা।
সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে যাওয়ার আগে পূর্বে (দুপুরের আগে) জামারাতুল আকাবায় (বড় শয়তান) ৭টি পাথর নিক্ষেপ করবেন তারা।
জামরাতুল আকাবায় পাথর নিক্ষেপের পর আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় হাজিরা পশু কোরবানি করবেন। এরপর মাথা মুণ্ডন করে এহরাম খুলে পোশাক পড়বেন হাজিরা। একে তাহাল্লুলে আসগর বলা হয়।
তারপর তাওয়াফে ইফাদা (কাবাঘর তাওয়াফ) এবং সায়ী (সাফা-মারওয়ায় সাত চক্কর) শেষ করে ফের মিনায় ফিরে যাবেন।
১১ ও ১২ জিলহজ (রোব এবং সোমবার) মিনায় অবস্থান করে সূর্য হেলে পড়ার পর প্রতিদিন ছোট, মধ্য ও বড় জামারায় পাথর নিক্ষেপ করে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করবেন হাজিরা।
যারা ১২ তারিখ সূর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করতে পারবেন না, তারা ১৩ তারিখ মঙ্গলবার সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত মিনায় অবস্থান করবেন এবং জামারায় ১১ ও ১২ তারিখের মতো পাথর নিক্ষেপ করবেন।
এরপর বুধবার মক্কায় অবস্থান করে বিদায়ী তাওয়াফ সম্পন্ন করে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করবেন হাজিরা। আর যারা মদীনা জিয়ারত করবেন না তারা মদীনার উদ্দেশে মক্কা ত্যাগ করবেন।
—