পাক-ভারত বিরোধের জের ইসলামাবাদে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অনিশ্চিত

Slider টপ নিউজ সারাদেশ সারাবিশ্ব

154908_110

কূটনৈতিক প্রতিবেদক; পাক-ভারত বিরোধকে কেন্দ্র করে ইসলামাবাদে অনুষ্ঠেয় সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কাশ্মিরের উড়িতে সেনা ব্রিগেডে সন্ত্রাসী হামলায় ১৭ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ বিরোধ এখন তুঙ্গে। ভারত এখন প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ, আফগানিস্তানসহ মিত্রদের সাথে নিয়ে পাকিস্তানকে একঘরে করার কৌশল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

পাকিস্তানকে একঘরে করার কৌশল নিয়ে ভারত অনেক দূর এগিয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের দুই পার্লামেন্ট সদস্য পাকিস্তানকে ‘জঙ্গি রাষ্ট্র’ ঘোষণার প্রস্তাব দিয়ে মার্কিন কংগ্রেসে একটি বিল উত্থাপন করেছেন। টেক্সাসের কংগ্রেসম্যান টেড পো এবং ক্যালিফোর্নিয়ার কংগ্রেসম্যান ডানা রোহরাবেকার ওই বিল উত্থাপন করেন। টেড পো কংগ্রেসের সন্ত্রাসবাদবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান, আর ডানা রোহরাবেকার বালুচ জাতিসত্তার একজন শক্তিশালী সমর্থক। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ জাতিসঙ্ঘ সাধারণ অধিবেশনে বক্তব্য রাখার ঠিক আগে এই বিলটি উত্থাপন করা হয়। নওয়াজ শরিফ তার ভাষণে ভারত শাসিত কাশ্মিরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইস্যুটি উত্থাপন করবেন বলে আগে থেকেই জানিয়েছে পাকিস্তান। আর তার পাল্টা হিসেবে পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে জাতীয়তাবাদীদের দমনে পাকিস্তানের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি জাতিসঙ্ঘে তুলে ধরবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ।

পাকিস্তানের সাথে সার্কের দুই সদস্য রাষ্ট্র বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের সম্পর্কও এখন বেশ নাজুক। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে বাংলাদেশের সাথে এবং তালেবানদের মদদ দেয়ার অভিযোগে আফগানিস্তানের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্কের টানাপড়েন চলছে। এই অবস্থায় ভারত দুইটি দেশকে সাথে নিয়ে ইসলামাবাদ শীর্ষ সম্মেলন বয়কটের মাধ্যমে পাকিস্তানকে একটি জবাব দিতে পারে। উড়ির ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের পাশে থাকার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই ধরনের মনোভাব পোষণ করেছেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি।

সার্কের নিয়ম অনুযায়ী শীর্ষ সম্মেলনে সদস্য সব ক’টি দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানদের উপস্থিতি আবশ্যক। কোনো একটি দেশ অংশ না নিলে শীর্ষ সম্মেলন হতে পারে না। এর আগেও পাক-ভারত বিরোধকে কেন্দ্র করে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অনেকবার পিছিয়েছে। ২০০৫ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের সময়ে নিরাপত্তার কারণে ভারত ঢাকায় আসতে অপারগতা প্রকাশ করায় চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়েও বাংলাদেশ যথাসময়ে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করতে পারেনি। অবশ্য সে বছরের শেষ দিকে সব দেশের অংশগ্রহণে এ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

ভারতে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত ড. শাইদা মোহাম্মদ আবদালি এনডিটিভিকে এক সক্ষাৎকারে বলেছেন, আসন্ন সার্ক শীর্ষ সম্মেলন বয়কট করে হলেও পাকিস্তানকে একটা উপযুক্ত বার্তা পাঠানো উচিত। তিনি বলেন, আমাদের এটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, আমরা যাতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক রাষ্ট্রকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারি। আমি নিশ্চিত যে আমরা যেভাবে ভাবছি সেইভাবে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশই চিন্তাভাবনা করছে। তাই আমাদের এই উদ্যোগ এতটাই ব্যাপকভিত্তিক হওয়া উচিত, যাতে আমরা একটি দেশকে চিহ্নিত করতে পারি, যা আমাদের আঞ্চলিক শান্তি ও ঐক্যের প্রতি হুমকি সৃষ্টি করছে।

২০১৪ সালের নভেম্বরে সার্কের কাঠমান্ডু শীর্ষ সম্মেলনে পাকিস্তানের আপত্তির কারণে মোটর ভেইক্যাল অ্যাগ্রিমেন্ট (এমভিএ) সই হয়নি। এর পর থেকেই পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল (বিবিআইএন) উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার জোরাল উদ্যোগ নেয় দিল্লি। এই জোটের যোগাযোগমন্ত্রীরা গত বছর জুনে থিম্পুতে বিবিআইএন এমভিএ সই করেন।

সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদশের যোগ দেয়ার সম্ভাবনা প্রসঙ্গে ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে যোগ দেবেন কিনা তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ অধিবেশনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দেখা হবে। আগামী অক্টোবরে ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে গোয়ায় যাবেন শেখ হাসিনা। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথেও নিশ্চিতভাবে এ নিয়ে আলোচনা হবে।

এর আগে ইসলামাবাদে সার্ক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে যাননি বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন ইসলামাবাদে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার। আর সার্ক অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকে যোগ দেননি আবুল মাল আবদুল মুহিত। এতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *