আজ মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের শুভকরদী চর ধলেশ্বরী নদীর শাখা খালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তিদের পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, পল্লী বিদ্যুতের লাইন মেরামত করার সময় দায়িত্বে অবহেলার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে পল্লী বিদ্যুৎ বন্দর জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপকসহ (ডিজিএম) পাঁচজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
নিহত তিনজন হলেন বন্দর উপজেলার শুভকরদী এলাকার সেন্টু ঘোষের স্ত্রী তৃষ্ণা রানি ঘোষ (৩০) ও তাঁর শিশুকন্যা সায়ন্তিকা রানি ঘোষ (৫) এবং ওই এলাকার কেতাব উদ্দিনের ছেলে সৌদিপ্রবাসী মাসুদ (৩৩)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বন্দর উপজেলার শুভকরদী এলাকায় চর ধলেশ্বরী নদীর শাখা খালে গোসল করতে যায় ওই এলাকার লোকজন। তখন বন্দর পল্লী বিদ্যুতের লাইন মেরামত করার সময় তার ছিঁড়ে খালে পড়ে যায়। এতে বিদ্যুতায়িত হয়ে ঘটনাস্থলেই ওই এলাকার সেন্টু ঘোষের স্ত্রী তৃষ্ণা রানি ঘোষ ও মেয়ে সায়ন্তিকা রানি ঘোষ এবং ওই এলাকার কেতাব উদ্দিনের ছেলে সৌদিপ্রবাসী মাসুদের মৃত্যু হয়। ওই সময় গোসল করতে থাকা অবস্থায় আহত হন বন্দর কলাগাছিয়া পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই মিজানুর রহমান ও নিহত তৃষ্ণা রানি ঘোষের জা ববিতা রানি ঘোষ। স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পল্লী বিদ্যুতের লাইনম্যানদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ করেন এলাকাবাসী ও নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা।
মা-মেয়ের মৃত্যুতে শোকার্ত হয়ে পড়েছে পুরো পরিবার। নিহত তৃষ্ণার সূর্য চন্দ্র ঘোষ নামের সাত মাস বয়সী শিশুপুত্র রয়েছে। মা-বোন হারানো এই শিশুটিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলেন পরিবারের সদস্যরা।
আহত ববিতা রানি ঘোষ জানান, ‘বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খালে স্নান করতে গেলে ওপর থেকে আগুনের মতো কী যেন জলে এসে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে স্নানে থাকা সবাই বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়ি। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে আমার জা তৃষ্ণা রানি মেয়ে সায়ন্তিকাকে জল থেকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু মেয়ের সঙ্গে তিনিও বিদ্যুতায়িত হন।’ তিনি বলেন, ‘সাত মাসের সূর্যের এখন কী হবে? কে তার দায়িত্ব নেবে?’
নিহত মাসুদের আত্মীয় মনির হোসেন এ দুর্ঘটনার জন্য পল্লী বিদ্যুৎকর্মীদের দায়িত্বে অবহেলাকে দায়ী করে বলেন, বিদ্যুৎ-সংযোগ লাইন বন্ধ না করেই তাঁরা মেরামতকাজ করার কারণে এ ঘটনা ঘটে। তিনি পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা ও লাইনম্যানদের বিচার দাবি করেন।
ঘটনার খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া জানান, নিহত পরিবারগুলোকে লাশ দাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে পল্লী বিদ্যুৎ বন্দর আঞ্চলিক অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন, সহকারী মহাব্যবস্থাপক আবদুস সালাম, প্রকৌশলী মমিনুর রহমান, লাইনম্যান নুরুল ইসলাম ও হোসেন আলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।