বিদ্যালয়ের মাঠে ধান চাষ

Slider ফুলজান বিবির বাংলা শিক্ষা

ad2671d063d0de08abc4c5a12e1ae0bd-182_thakurgaon-pic-3

ঠাকুরগাঁওয়; মেঠো পথের ধারে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ঝিকড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি টিনের চালার। বিদ্যালয়ে সামনে উড়ছে জাতীয় পতাকা। বিদ্যালয়ের মাঠ দু-তিন মণ ধানের বিনিময়ে আমন চাষাবাদের জন্য বর্গা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে বিদ্যালয় ঘরের সামনেই শিক্ষার্থীদের ছোটাছুটি করতে হচ্ছে। মাঠে ধান চাষ হওয়ায় খেলাধুলার সব সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
গতকাল রোববার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের বারান্দার সামনে কয়েকজন ছেলে-মেয়ে ছোটাছুটি করছে। আর বাকিরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ওদের ছোটাছুটি দেখছে। পাশের দুটি শ্রেণিকক্ষে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠ চলছে। মাঝেমধ্যে শিক্ষার্থীদের গোলমাল থামাতে শিক্ষক তাড়া করছেন। অন্য একটি কক্ষের মেঝেতে পলিথিনের মাদুর বিছিয়ে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বসে হইচই করছে। আর প্রধান শিক্ষক আলী আহমেদ বারান্দার এক কোণে একটি বেঞ্চ বসিয়ে দাপ্তরিক কাজ সেরে নিচ্ছেন।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে উপজেলার বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নের ঝিকড়া গ্রামে ৫০ শতক জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়টি। ২০১৩ সালে রেজিস্টার্ড প্রাইমারি বিদ্যালয় জাতীয়করণের সময় বিদ্যালয়টি সরকারীকরণ হয়। এরপরও বিদ্যালয়টির অবকাঠামোর কোনো পরিবর্তন হয়নি। ফলে দিন দিন বিদ্যালয়ের ঘর ভেঙে জরাজীর্ণ হচ্ছে। বর্তমানে ১২৬ শিক্ষার্থী এখানে পড়াশোনা করছে। শিক্ষক আছেন তিনজন। বিদ্যালয়টির নিজস্ব জমির সাত-আট শতক জমির ওপর ঘরটি দাঁড়িয়ে রয়েছে। পেছনের জায়গা দখল করে বসবাস করছেন মো. দবিরউদ্দিন নামের এক ব্যক্তি। আর বিদ্যালয়ের ঘরের সামনের ফুট দশেক জায়গা রেখে মাঠটি আমন চাষের জন্য জিয়ারুল হক নামে এক চাষিকে বর্গা দেওয়া হয়েছে।

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. পারভেজ বলে, ‘স্কুলে একটা ফুটবল আছে, কিন্তু মাঠে ধান লাগানোর কারণে আমরা খেলতে পারি না।’ পঞ্চম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী মোছা. জান্নাতুন বলে, বিদ্যালয়ে বেঞ্চ-সংকটে তাদের মাটির মেঝেতেই পলিথিন বিছিয়ে ক্লাস করতে হয়। সামান্য বৃষ্টি হলেই ভেসে যায় ক্লাসরুম। তখন বন্ধ থাকে পড়ালেখা।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুলতানা পারভিন বলেন, বিদ্যালয়ে প্রায় আট জোড়া বেঞ্চ আছে। তা-ও আবার অর্ধেকই ভাঙা। মূল্যবান কাগজ ও খাতা সংরক্ষণের নেই আলমারি। ফলে জরুরি কাগজপত্র শিক্ষকেরা তাঁদের বাড়িতে নিয়ে যান। স্কুলে নেই কোনো শৌচাগার। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীরা এদিক-ওদিক গিয়ে কাজ সেরে আসে।

বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আনসার আলী বলেন, ‘মাঠে ছেলেমেয়েদের খেলাধুলা করার কথা। কিন্তু আজ সেখানে ধান চাষ হচ্ছে। আশপাশে আর স্কুল না থাকায় আমরা বাধ্য হয়ে এখানে বাচ্চা পড়াচ্ছি।’

বিদ্যালয়ের মাঠে ধান চাষের কারণ জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক আলী আহমেদ বলেন, বিদ্যালয়টি সরকারীকরণ হলেও তাঁরা কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। ফলে তাঁদের আর্থিক সংকটে দিন কাটছে। এ সংকট কিছুটা লাঘবের জন্য বিদ্যালয়ের মাঠের জমি চাষাবাদের জন্য বর্গা দেওয়া হয়েছে।

কত টাকায় বর্গা দেওয়া হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে আলী আহমেদ বলেন, ‘সামান্য কিছু। যিনি ধান আবাদ করছেন, তিনি দু-তিন মণ ধান দিতে চেয়েছেন। জানি, এটা ঠিক হচ্ছে না, তবু করতে বাধ্য হয়েছি।’

বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. দবিরুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যালয়ের সামান্য আয়ের জন্য বিষয়টি কিছুটা নমনীয়ভাবে দেখছি।’

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আফজাল হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি তিনিও শুনেছেন। সরকারীকরণ হলেও বিদ্যালয়টির সরকারি সুবিধার আওতায় আসেনি। সে কারণে বিদ্যালয়টি আর্থিক সংকটে রয়েছে। সরেজমিনে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *