বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. পারভেজ বলে, ‘স্কুলে একটা ফুটবল আছে, কিন্তু মাঠে ধান লাগানোর কারণে আমরা খেলতে পারি না।’ পঞ্চম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী মোছা. জান্নাতুন বলে, বিদ্যালয়ে বেঞ্চ-সংকটে তাদের মাটির মেঝেতেই পলিথিন বিছিয়ে ক্লাস করতে হয়। সামান্য বৃষ্টি হলেই ভেসে যায় ক্লাসরুম। তখন বন্ধ থাকে পড়ালেখা।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুলতানা পারভিন বলেন, বিদ্যালয়ে প্রায় আট জোড়া বেঞ্চ আছে। তা-ও আবার অর্ধেকই ভাঙা। মূল্যবান কাগজ ও খাতা সংরক্ষণের নেই আলমারি। ফলে জরুরি কাগজপত্র শিক্ষকেরা তাঁদের বাড়িতে নিয়ে যান। স্কুলে নেই কোনো শৌচাগার। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীরা এদিক-ওদিক গিয়ে কাজ সেরে আসে।
বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আনসার আলী বলেন, ‘মাঠে ছেলেমেয়েদের খেলাধুলা করার কথা। কিন্তু আজ সেখানে ধান চাষ হচ্ছে। আশপাশে আর স্কুল না থাকায় আমরা বাধ্য হয়ে এখানে বাচ্চা পড়াচ্ছি।’
বিদ্যালয়ের মাঠে ধান চাষের কারণ জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক আলী আহমেদ বলেন, বিদ্যালয়টি সরকারীকরণ হলেও তাঁরা কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। ফলে তাঁদের আর্থিক সংকটে দিন কাটছে। এ সংকট কিছুটা লাঘবের জন্য বিদ্যালয়ের মাঠের জমি চাষাবাদের জন্য বর্গা দেওয়া হয়েছে।
কত টাকায় বর্গা দেওয়া হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে আলী আহমেদ বলেন, ‘সামান্য কিছু। যিনি ধান আবাদ করছেন, তিনি দু-তিন মণ ধান দিতে চেয়েছেন। জানি, এটা ঠিক হচ্ছে না, তবু করতে বাধ্য হয়েছি।’
বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. দবিরুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যালয়ের সামান্য আয়ের জন্য বিষয়টি কিছুটা নমনীয়ভাবে দেখছি।’
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আফজাল হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি তিনিও শুনেছেন। সরকারীকরণ হলেও বিদ্যালয়টির সরকারি সুবিধার আওতায় আসেনি। সে কারণে বিদ্যালয়টি আর্থিক সংকটে রয়েছে। সরেজমিনে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’