আন্তর্জাতিকভাবে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ রামসার সাইট’ হিসেবে ঘোষিত সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী ‘জোছনা উৎসব’। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন টাঙ্গুয়ার হাওরের পর্যটন সম্ভাবনাকে দেশে-বিদেশে তুলে ধরতে এর আয়োজন করেছে। বিশাল হাওরের রোপাবই বিলে এই উৎসব হচ্ছে।
সন্ধ্যা ছয়টায় উৎসবের উদ্বোধন করেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের (তাহিরপুর-জামালগঞ্জ-ধরমপাশা) সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন। উৎসবের প্রধান উদ্যোক্তা ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ শামসুন্নাহার বেগম, সাবেক সাংসদ নজির হোসেন, সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. হারুন অর রশিদ প্রমুখ।
আয়োজকেরা জানিয়েছেন, হাওরে নৌকায় রাত্রি যাপন করে সবাই জোছনা উপভোগ করবেন। আজ শনিবার হাওরের পাশের বারেকটিলা, যাদুকাটা নদী, টেকেরঘাট এলাকা ঘুরে দেখবেন তাঁরা। ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের কোল ঘেঁষে থাকা টাঙ্গুয়ার হাওর ও এসব এলাকা পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়।
সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওর শুধু সুনামগঞ্জের নয়, সারা দেশের সম্পদ। রামসার সাইট ঘোষণার পর থেকে এই হাওর ও হাওরপারের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য সরকার কাজ করছে। হাওরটি সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। হাওরের সম্পদ রক্ষায় সবাইকে সচেতন হতে হবে।
সাবেক সাংসদ নজির হোসেন অবশ্য বলেন, এই হাওরে সরকারি-বেসরকারি যে ব্যবস্থাপনা রয়েছে সেটি ফেল করেছে। দীর্ঘ ১৩ বছরেও হাওরের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। মাছ, গাছ, পাখি সবই কমেছে। হাওরের সম্পদ উজাড় হয়ে যাচ্ছে। তাই টাঙ্গুয়ার হাওরের উন্নয়নে নতুন করে ভাবতে হবে।
কামরুজ্জামান বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওর এখন পর্যটকদের প্রিয় স্থান। উত্তরে ভারতের মেঘালয় পাহাড় হাতছানি দেয়। প্রতিদিন বহু পর্যটক এখানে আসেন। কিন্তু হাওরে পর্যটকদের বিশ্রাম, রাত্রি যাপনের কোনো সুবিধা নেই। রয়েছে নানা সমস্যা। এখানে হাওরকেন্দ্রিক পর্যটন গড়ে তুলতে হবে। টাঙ্গুয়ার হাওরের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে।
কামরুজ্জামান বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওর এখন পর্যটকদের প্রিয় স্থান। উত্তরে ভারতের মেঘালয় পাহাড় হাতছানি দেয়। প্রতিদিন বহু পর্যটক এখানে আসেন। কিন্তু হাওরে পর্যটকদের বিশ্রাম, রাত্রি যাপনের কোনো সুবিধা নেই। রয়েছে নানা সমস্যা। এখানে হাওরকেন্দ্রিক পর্যটন গড়ে তুলতে হবে। টাঙ্গুয়ার হাওরের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে।
ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন সৃজন দেব। দুই বন্ধু মিলে হাওর উৎসবে এসেছেন। সজীব দেব বলেন, খুবই ভালো লেগেছে। একদিকে হাওর, অন্যদিকে পাহাড়—এই দুইয়ে মিলে এলাকার প্রকৃতি খুবই সুন্দর।
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহনাজ পারভিন বলেন, ‘আমরা ১০ জন এসেছি। রাতে সবাই মিলে নৌকায় থাকব। আনন্দ করব, জোছনা উপভোগ করব।’
গতকাল উৎসবে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী শাহনাজ বেলি, আশিক, ঐশী ও স্থানীয় শিল্পীরা।
টাঙ্গুয়ার হাওর ব্যবস্থাপনা প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও ধরমপাশা উপজেলার ৯ হাজার ৭২৭ হেক্টর এলাকা নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর। এ হাওর এলাকায় ছোট-বড় ৫২টি বিল এবং ৮৮টি গ্রাম আছে। ১৪১ প্রজাতির দেশি মাছ, ১১ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ছয় প্রজাতির কচ্ছপ, সাত প্রজাতির গিরগিটি, ২১ প্রজাতির সাপ, ১৫০ প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ, ১১০ প্রজাতির দেশি এবং ৯০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখির বিচরণক্ষেত্র এই হাওর। এ হাওরে দেখা মেলে পৃথিবীর বিরল প্রজাতির প্যালাসাস ফিশ ইগলের। ২০০০ সালে ইজারা প্রথা বাতিলের পর ২০০৩ সালের ১০ নভেম্বর হাওরের নিয়ন্ত্রণ নেয় জেলা প্রশাসন।