বরগুনা; আমতলীতে এক কলেজছাত্রীকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের হরিদ্রাবাড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানিয়েছেন, তাঁদের ধারণা, ওই কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের লোকজন পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
নিহত ছাত্রীর নাম হেলেনা আক্তার (২১)। তিনি পটুয়াখালী সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। তাঁর বাবা আবদুল জব্বার চৌকিদার ১৫ বছর আগে মারা যান এবং মা সেলিনা বেগম মানসিক প্রতিবন্ধী। হেলেনা পটুয়াখালী সরকারি শিশুসদনে থেকে এসএসসি এবং গত বছর পটুয়াখালী করিম মৃধা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হেলেনার অসুস্থ বড় বোন পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। হেলেনার মা ও বড় ভাই বৃহস্পতিবার রাতে ওই হাসপাতালে ছিলেন। এ কারণে ওই দিন রাতে হেলেনা বাড়িতে একা ছিলেন। গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা সিঁধ কেটে ঘরে ঢুকে তাঁকে হত্যা করে।
গুলিশাখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য খবির উদ্দিন আকন বলেন, হেলেনাদের ঘরের পাশেই তাঁর খালা জয়নব বিবির বসতঘর। ইউপি সদস্যকে জয়নব বিবি জানিয়েছেন, রাত একটার দিকে গোঙানির শব্দ শুনে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। বাইরে এসে হেলেনার গোঙানির শব্দ শুনে তিনি চিৎকার দিলে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। তাঁরা হেলেনাকে ঘরের মধ্যে বিবস্ত্র ও রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান। ওই রাতে ট্রলারে করে তাঁকে পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল। পথে ক্লাবঘাট এলাকায় হেলেনার মৃত্যু হয়।
পুলিশ ও এলাকাবাসী বলেন, লাশের অবস্থা দেখে তাঁরা ধারণা করছেন, ধর্ষণের পর পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে হেলেনাকে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, লাশের মাথায়, গলা ও চোখে আঘাত এবং হাতে কামড়ের দাগ রয়েছে। পুলিশ ওই ঘর থেকে রক্তমাখা কাঁথা ও একটি লাঠি উদ্ধার করেছে। সেখানে তিনটি সিগারেটের ফিল্টারও পাওয়া যায়।
ঘটনার পর গতকাল শুক্রবার সকালে বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তোফায়েল, সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) কাজী কাইয়ুম ও আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পুলক চন্দ্র রায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
হেলেনার ভাই মো. মিজানুর রহমান অভিযোগ করেছেন, ‘জয়নব বিবি সম্পর্কে আমাদের খালা হন। তাঁর পরিবারের সঙ্গে আমাদের পরিবারের জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। তারা আমার পরিবারের লোকজনকে বিভিন্ন সময়ে জীবননাশের হুমকি দিয়ে আসছিল। আমাদের সম্পত্তি ভোগদখলের জন্যই তারা পরিকল্পিতভাবে ভাড়াটে খুনি দিয়ে আমার বোনকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করেছে। আমরা এই এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’
এই অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল বিকেলে বাড়িতে গিয়ে জয়নব ও তাঁর পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। প্রতিবেশীরা বলেন, শুক্রবার সকাল থেকে ঘরে তালা ঝুলিয়ে তাঁরা সবাই চলে গেছেন।
ওসি পুলক চন্দ্র রায় বলেন, এ ঘটনায় গতকাল বিকেলে হেলেনার ভাই মিজানুর রহমান বাদী হয়ে জয়নবসহ ছয়জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।