সাইবার নিরাপত্তার বৈশ্বিক মানদণ্ড চায় প্রভাবশালী ২৫ কেন্দ্রীয় ব্যাংক

Slider অর্থ ও বাণিজ্য সারাবিশ্ব

31620_lead

 

ঢাকা: আন্তঃসীমান্ত ব্যাংকিং-এর বিশাল নেটওয়ার্ককে সাইবার হামলা থেকে সুরক্ষিত করতে বোর্ড রুল বেঁধে দেয়ার জন্য একটি টাস্কফোর্স চালু করেছে বিশ্বের বৃহৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংকসমূহ। এ বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে সাইবার আক্রমণের মাধ্যমে ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরির প্রেক্ষিতে এ উদ্যোগ নিয়েছে ব্যাংকগুলো। দুইটি সূত্রের বরাতে এ খবর দিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
খবরে বলা হয়, এ গ্রীষ্মে সুইজারল্যান্ডের বাসেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর একটি কমিটি এই টাস্কফোর্স গঠন করে। বিশ্বের প্রভাবশালী ২৫টি ব্যাংকের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত এই কমিটি ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্টস (বিআইএস)-এর অংশ। টাস্কফোর্সেও এই ২৫টি ব্যাংকের প্রতিনিধিরা থাকবেন। দুই সূত্র জানায়, প্রতারণার বিরুদ্ধে নিজেদের সুরক্ষার কৌশল স¤পর্কে সদস্য ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে কমিটি। এ টাস্কফোর্স শেষপর্যন্ত আন্তঃব্যাংক লেনদেনের জন্য একটি বৈশ্বিক নিরাপত্তা মানদ- তৈরি করতে পারে, যা গৃহীত হতে পারে বিশ্বব্যাপী। এই নতুন নীতিমালা বা দিকনির্দেশনা অর্থ লেনদেনে জড়িত ব্যাংক ও সুইফটের মতো নেটওয়ার্কসমূহের দায়িত্বের আওতায় পড়তে পারে যারা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর পেমেন্ট ইন্সট্রাকশন আদানপ্রদান করে।
হ্যাকারদের কাছে নিজেদের সিস্টেম সুরক্ষিত করতে কোন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেয়া ব্যবস্থায় ঘাটতি থাকলে প্রত্যেক সদস্যের কী পদক্ষেপ অনুসরণ করা উচিৎ তা সুপারিশ করারও লক্ষ্য আছে টাস্কফোর্সের। এছাড়া সুপারিশ করা হবে এমন প্রেক্ষাপটে স্থানীয় রেগুলেটরদের কী ভূমিকা পালন করা উচিৎ এবং আরেকটি অনুপ্রবেশের ঘটলে কী করা উচিৎ তা নিয়েও।
একটি সূত্রের ভাষ্য, ‘এটি এখনও রূপদানের পর্যায়ে রয়েছে। তবে এটি কোন দ্রুত প্রক্রিয়া নয়।’ আরেকটি সূত্র জানায়, টাস্কফোর্সের একটি লক্ষ্য হবে কারেসপন্ডেন্ট ব্যাংকিং-এর ‘ভাঙ্গন’ (ব্রেকডাউন) কোথায় লুকিয়ে আছে তা খুঁজে বের করা।
কমিটি অন পেমেন্টস অ্যান্ড মার্কেট ইন্সফ্রাসট্রাকচার্স (সিপিএমআই) এই উদ্যোগ শুরু করেছে। তবে মূল প্রতিষ্ঠান বিআইএস এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেনি। দুই সূত্র জানিয়েছে, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার চুরির চেষ্টা ও পরবর্তীতে অন্যান্য সাইবার হামলার ঘটনাগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর এই কমিটিকে তৎপর হতে নাড়া দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক চুরির ঘটনাটি ঘটে ফেব্রুয়ারির গোড়ার দিকে। রয়টার্সের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, বাংলাদেশ ব্যাংক ও নিউ ইয়র্ক ফেডের মধ্যে যোগাযোগে ঘাটতি ছিল। এছাড়া সতর্কতার লক্ষণ গুরুত্ব সহকারে নিতে ব্যর্থ হয় ফেড। কয়েক মাস ধরে একে অপরের ওপর দায় চাপানোর পর্ব শেষে, একাধিক কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও পুলিশের তদন্তকারীরা অর্থ উদ্ধার, দায়ীদের খুঁজে বের করা ও ঝুঁকিতে থাকা ব্যাংকিং সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে একে অপরকে সহযোগিতা করছে।
মার্কিন ডেমোক্রেট সিনেটর গ্যারি পিটার্স সম্প্রতি বিশ্বের শীর্ষ ২০ অর্থনীতির জোট জি২০-র প্রতি সাইবার অপরাধকে অগ্রাধিকার দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এক সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এটি দুর্বলতা দেখিয়ে দিয়েছে। আর বাংলাদেশের নজির দেখিয়ে দিয়েছে কীভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ অল্প সময়ের মধ্যেই স্থানান্তরিত করা সম্ভব।’
রয়টার্সের খবরে আরও বলা হয়, একটি সূত্র জানিয়েছে বেলজিয়ামের ন্যাশনাল ব্যাংক, যেটি সরাসরি সুইফটের তত্বাবধানে রয়েছে, সেটিও টাস্কফোর্স গঠনে নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা পালন করছে। নিউ ইয়র্ক ফেডও এই টাস্কফোর্সে অংশ নিয়েছে। প্রতিদিন বিশ্বব্যাপী প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলারের মতো অর্থ লেনদেন করে ব্যাংকটি। জুনে ফেড জানায়, সাইবার নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক পেমেন্ট কাঠামোর ব্যাপারে অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করছে তারা। তবে এ ব্যাপারে বেলজিয়ামের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, নিউ ইয়র্ক ফেড, সুইফট Ñ কেউই কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
এই টাস্কফোর্সে সবচেয়ে প্রভাবশালী ২৫টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিনিধিরা থাকবেন। বিআইএস’র ওই কমিটিতেও এ ব্যাংকগুলোর প্রতিনিধিরা রয়েছেন। ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যাংক অব জাপান, দ্য ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক, পিপলস ব্যাংক অব চায়না ও ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক (আমেরিকা)। তবে কাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তা এখনও ¯পষ্ট নয়।
কমিটিতে বাংলাদেশ ব্যাংক নেই। তবে ব্যাংক-টু-ব্যাংক পেমেন্ট ও সেটেলমেন্টের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিয়ে কাজ করে এ কমিটি। এ বছরের মধ্যেই কমিটি বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে পরামর্শ শুরু করতে পারে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। তবে কোন কিছু আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *