জঙ্গি মোকাবিলায় ১৮ পদক্ষেপ

Slider জাতীয়

31619_leaf

 

ঢাকা: দেশব্যাপী জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় ১৮টি পদক্ষেপ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে সামাজিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বিষয়। এরই অংশ হিসেবে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কিছু কিছু অ্যাপস ব্যবহারের ওপর নিয়ন্ত্রণ করতে যাচ্ছে সরকার। পাশাপাশি অনলাইনে কোরআনের যে সব আয়াত ও হাদিসকে জঙ্গিবাদের পক্ষে ব্যবহার করা হয় তার সঠিক ব্যাখ্যা প্রচারের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংসদীয় কমিটিকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি কাজ করছে। কমিটির বিভিন্ন সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়ন অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া জঙ্গিবাদের অর্থের উৎস অনুসন্ধান কার্যক্রম আরো জোরদার এবং এ কার্যক্রম অধিকতর সমন্বয়ের লক্ষ্যে শিল্পমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। জঙ্গিবাদ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় কমিটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বড় সমস্যা জঙ্গিবাদ। বিশ্বের অনেক দেশের মতো বর্তমানে বাংলাদেশকেও জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। নব্বইয়ের দশকে আফগান ফেরত মুজাহিদ কর্তৃক হুজি গঠনের মাধ্যমে এ দেশে জঙ্গিবাদের সূচনা হলেও মূলত বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় জঙ্গিবাদ এদেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গিবাদ দমনে জিরো টলারেন্স নীতির ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করে জঙ্গি দমনে সারা বিশ্বে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে আইএসসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি উত্থানের ঘটনায় এ দেশীয় জঙ্গি সংগঠনের সাম্প্রতিক কিছু তৎপরতা পুনরায় জঙ্গিবাদের জানান দেয় এবং দেশে-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জঙ্গিবাদ দমনে সরকার ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জঙ্গিবাদের পেছনে যেহেতু মতাদর্শগত বিষয় জড়িত, তাই শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্বারা দমনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটন সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক, সামাজিক প্রতিরোধ এবং কোরআন-হাদিসের আলোকে জঙ্গিবাদবিরোধী ব্যাপক প্রচারণামূলক কার্যক্রম গ্রহণ।
জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে: সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদনে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে যেসব সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, শুক্রবার জুমার আগে ইমামদের মাধ্যমে মসজিদে জঙ্গিবাদবিরোধী বক্তব্য প্রদান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ‘জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমন’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন ও জঙ্গিবাদবিরোধী পুস্তক প্রকাশনার উদ্যোগ গ্রহণ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচার ও সমাবেশ আয়োজন, তথ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জঙ্গিবাদবিরোধী ডকুমেন্টারি, শর্টফিল্ম, বিজ্ঞাপন চিত্র, ভিডিও ক্লিপ ইত্যাদি তৈরি করে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারের কার্যক্রম গ্রহণ, প্রখ্যাত আলেম ও ইসলামী পণ্ডিত ব্যক্তিদের দ্বারা বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে কোরআন-হাদিসের আলোকে জঙ্গিবাদবিরোধী ব্যাপক প্রচারণার কার্যক্রম, প্রতিটি জেলা/মেট্রোপলিটন এলাকায় গ্রাম/মহল্লা পর্যায়ে কমিটি গঠনের মাধ্যমে জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সর্বসাধারণকে জঙ্গিবাদের কুফল সম্পর্কে অবহিতকরণ, অনলাইনে কোরআনের যে সব আয়াত ও হাদিসকে জঙ্গিবাদের পক্ষে ব্যবহার করা হয় তা সঠিক ব্যাখ্যা প্রচারের মাধ্যমে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি, একাডেমিক লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা, বিতর্ক চর্চা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ওপর জোর, শিক্ষাঙ্গনে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করে কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়ানো, শিক্ষাঙ্গন, মসজিদ কিংবা মাদরাসাতে নির্ধারিত সম ব্যতীত কেউ অবস্থান করছে কিনা সেটিও কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। একাডেমিক কার্যক্রমে সহনশীলতা ও মুক্তবুদ্ধির চর্চার উপর গুরুত্ব, সন্ত্রাসবাদবিরোধী আলোচনা ও সচেতনতা তৈরির জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ, শিক্ষাঙ্গনসহ সব প্রতিষ্ঠানে জাতীয় দিবসগুলো যথাযথভাবে প্রতিপালন এবং পহেলা বৈশাখসহ বাঙালি সাংস্কৃতিক চর্চার বিষয়ে ছাত্রদেরকে উদ্বুদ্ধ, মসজিদের ইমাম ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা যাতে জঙ্গিবাদকে উস্কে দেয়ার মতো বক্তব্য দিতে না পারে সে বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, ইমাম-শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, এনজিওসহ সকলের সমন্বয়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম, সকল পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিসহ রাজনীতিবিদদের সংশ্লিষ্ট এলাকায় জনসম্পৃক্ততা বাড়িয়ে জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচার-প্রচারণা চালানো, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক  মিডিয়াসহ সকল প্রকার প্রচার মাধ্যমে জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচারণা চালাতে হবে। এক্ষেত্রে সংবাদকর্মী ও সিভিল সোসাইটির সদস্যগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কিছু কিছু অ্যাপস ব্যবহারের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যেতে পারে। প্রতিবেদনের শেষে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষ সাংস্কৃতিকভাবে অসাম্প্রদায়িক এবং জঙ্গিবাদবিরোধী। মুষ্টিমেয় কতিপয় বিপথগামী ব্যক্তি আমাদের এ অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে নষ্ট করতে পারবে না। সকলের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ একটি নিরাপদ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্মানজনক অবস্থান তৈরি করতে পারবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *