প্রতি বছর মধ্যপ্রাচ্য থেকে তিন হাজারের মতো দম্পতি সাইপ্রাসে যায় বিয়ে করার লক্ষ্যে।
ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা বাদে নাগরিক আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কেউ যদি সহজে বিয়ে করতে চান, বলা হয় তার জন্যে এটাই সবচে উৎকৃষ্ট জায়গা।
এরকম একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন বিবিসির সংবাদদাতা ইউল্যান্ডে ক্নেল।
তিনি বর্ণনা করছিলেন ওই বিয়ের দৃশ্য। বলছিলেন, তরুণ এক দম্পতি যখন পরস্পরের হাত ধরে লার্নাকায় বিয়ের একটি হলের ভেতরে হেঁটে যাচ্ছিলো তখন ছোট্ট এক স্পিকারে ভেসে আসছিলো প্রেমের সঙ্গীত।
তারা হলেন র্যাচেল ও আব্দুল কাদের (উপরে তাদের ছবি দেওয়া হয়েছে)। তারা লেবাননের নাগরিক কিন্তু বিয়ে করার জন্যে তাদেরকে বিদেশে আসতে হয়েছে।
তাদের পরনে সনাতন বিয়ের পোশাক ছিলো না, ছিলো টি-শার্ট আর জিন্স। নিজেদের আরবি ভাষায় কথা না বলে বলছিলো ইংরেজিতে।
রেজিস্টার যখন তাদেরকে স্বামী স্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করেন তখন সেখানে একমাত্র উপস্থিত বিবিসির সংবাদদাতাই তাদেরকে মোবারকবাদ বা শুভেচ্ছা জানান। তারপর তারা লজ্জা মাখানো মুখে একজন আরেকজনকে চুম্বন করেন।
লেবাননে এরকম প্রেম কাহিনি প্রচুর। সেদেশে ধর্মীয়ভাবেই আছে ১৮টি গোষ্ঠী। র্যাচেল একজন ম্যারোনাইট ক্রিশ্চিয়ান আর আব্দুল কাদের সুন্নি মুসলিম।
দু’জনের কেউই তাদের পিতামাতার ধর্ম ছাড়তে চান না আবার তারা বিয়েও করতে চান ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই।
“আমি ঈশ্বরের নাম নিয়েই বিয়ে করতে চাই। কিন্তু আমাদের সামনে আর কোনো উপায় ছিলো না,” বললেন র্যাচেল।
তিনি বলেন, “লেবাননে সিভিল ম্যারেজের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় আমাদেরকে এখানে আসতে হয়েছে।”
প্রচুর সংখ্যায় বিদেশি সাইপ্রাসে আসেন শুধু বিয়ে করার জন্যে। শুধু মধ্যপ্রাচ্য থেকেই বছরে তিন হাজারের মতো।
তাদের বেশিরভাগই লেবানন ও ইসরায়েলের নাগরিক।
তারা মনে করেন এখানে বিয়ে করা অনেক সহজ ও সস্তা। এবং সবচে বড়ো কথা এই বিয়ে নিজেদের দেশে আইনিভাবেও বৈধ।
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে সময় লাগে ১০ থেকে ১৫ মিনিট।
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সিভিল ম্যারেজকে বৈধ করার জন্যে চেষ্টা চালানো হয়েছিলো কিন্তু ধর্মীয় নেতারা তাদের রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে সেগুলো নস্যাৎ করে দিয়েছেন।
কোনো কোনো দেশে মুসলিম অথবা শরিয়া আইনে বিয়ে হয়। অন্যান্যদের জন্যে আছে অটোমানের সময় বেঁধে দেওয়া নিয়ম কানুন। এর ফলে বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী তাদের নিজেদের মতো করে আদালত চালাতে ও পারিবারিক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারেন।
ফলে ইমাম, যাজক ও র্যাবাইরা বিয়ে ও বিবাহবিচ্ছেদের বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করেন। তাদের মতে সৃষ্টিকর্তাই এসব নিয়ন্ত্রণ করেন।
ইসরায়েলি এক দম্পতি সাইপ্রাসে এসেছিলো বিয়ে করতে। কারণ তারা সেক্যুলার এবং সিভিল ম্যারেজকেই তারা অগ্রাধিকার দিয়েছেন।
“ইসরায়েলে শুধু ধর্মীয়ভাবেই বিয়ে হতে পারে। যারা এভাবে বিয়ে করতে চান না তাদের সেখানে বিয়ে করার উপায় নেই,” বলছিলেন বর রাজ।
নববিবাহিত এই দম্পতি এখন আশা করছেন যে ইসরায়েলে বিবাহ সংক্রান্ত আইনের পরিবর্তন ঘটবে। না হলে এই দম্পতিরা বলছেন, তাদের সন্তান সন্ততিকেও হয়তো শুধু বিয়ে করার জন্যে বিদেশে চলে যেতে হবে।
তবে এ ফলে যে সাইপ্রাস অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে সেটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
একই সাথে এই দেশটি পরিচিত হয়ে উঠছে ‘প্রেমের এক দ্বীপ’ হিসেবে।
সূত্র:বিবিসি বাংলা