ঢাকা; চারদিকে মানুষের ঢল নেমেছে। হাজার হাজার নয়, লাখ লাখ মানুষ। তারা ডানে বামে তাকাচ্ছেন না। এক আল্লাহর ধ্যান করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছেন পবিত্র নগরী মিনার দিকে। এ এক অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য।
শুক্রবার সূর্য ডোবার পর থেকে এসব হজযাত্রী পবিত্র মিনায় সমবেত হওয়া শুরু করেছেন। তাদের মুখে আল্লাহর বাণী। দমে দমে আল্লাহকে ডাকছেন। হাতে পানির বোতল। কব্জিতে বাঁধা নাম, পরিচয়বাহী ব্রেসলেট। পিঠে ব্যাগ। পবিত্র হজের ৫ দিনের আনুষ্ঠানিকতার প্রথম পর্ব সম্পন্ন করতে তারা ছুটছেন সবাই। কোন বর্ণ, গোত্র, সাদা, কালোর ভেদাভেদ নেই। সবাই সেখানে এক আল্লাহর অতিথি। আজ শনিবার সৌদি আরবে ৮ই জিলহজ। এদিনে সব হজযাত্রী সমবেত হবেন ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে। এখানেই আজকের দিন শেষে রাত কাটাবেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, অগ্নিপ্রতিরোধী তাঁবুতে। রাত শেষে আগামীকাল ৯ই জিলহজ তারা ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যাবেন সেই ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে, যেখানে দাঁড়িয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) তার বিদায়ী হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। আর সেই ভাষণের মধ্য দিয়ে তিনি ইসলামের পূর্ণতা দেয়ার ঘোষণা দিয়ে গিয়েছেন। দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন সারা মুসলিম উম্মাহর জন্য। সেখানে গিয়ে ‘লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক’ ধ্বনিতে মুখরিত করে তুলবেন হজযাত্রীরা।
শুক্রবারই হজের প্রস্তুতি হিসেবে লাখ লাখ হজযাত্রী সমবেত হতে থাকেন পবিত্র মক্কা নগরীতে। গ্রান্ড মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন প্রায় ১৫ লাখ মুসল্লি। সূর্যের প্রখর রোদ তাদের গতিবিধি, উদ্দেশ্যে কোন বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে নি। শুক্রবার মক্কায় দিনের তাপমাত্রা ছিল ৪০ থেকে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার মধ্যেই আল্লাহকে রাজি, খুশি করার জন্য মুসল্লিরা, হজযাত্রীরা ছুটে যান গ্রান্ড মসজিদে। আদায় করেন জুমার নামাজ। তবে এবার মক্কা থেকে মদিনা, মদিনা থেকে আরাফাত আবার ঠিক উল্টো যাত্রা মসৃণ, নিরাপদ করতে পবিত্র দুই মসজিদের রক্ষ বাদশা সালমানের নেতৃত্বে সরকার চমৎকার ব্যবস্থাপনা করেছে। এ বিষয়ে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেজর জেনারেল মানসুর আল তুর্কি হজযাত্রীদের এই বিশাল সমাবেশকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আয়োজন বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, হজযাত্রীদের সফরকে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে সব রকম আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। হজ সিকিউরিটি ফোর্সেসের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল খালেদ আল হারবি বলেছেন, যা করা হয়েছে তা মহান আল্লাহর অতিথিদের সম্মানে করা হয়েছে। পবিত্র এই মক্কা নগরীকে আল্লাহ বেছে নিয়েছেন। আমরা সৌদি নাগরিকরা হজযাত্রীদের সর্বোত্তম সেবা দেয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। উল্লেখ্য, মিনায় যাত্রার আগে জুমার নামাজের আগে হজযাত্রীরা পবিত্র কাবা ঘর তাওয়াফ করেছেন। জেদ্দা, রিয়াদ ও দাম্মাম থেকে হজযাত্রীবাহী শত শত গাড়ি ও অন্যান্য যানবাহন শুক্রবার ছুটে যায় মক্কায়। কোনো কোনো গাড়ি সরাসরি চলে যায় মিনায়। মিনায় পৌঁছে তাদের মাঝে আনন্দের যেন সীমা নেই। জীবনে হজের আনুষ্ঠানিকতায় পৌঁছাতে পেরে আনন্দে কাঁদেন অনেক হজযাত্রী।