ঢাকা: মারজিয়া আক্তার সুমি (১৮)। থাকতো নারায়ণগঞ্জে। স্থানীয় একটি মাদরাসায় ফাজিল শ্রেণীতে পড়াশোনা করতো। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ফেসবুকে তাপসের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর থেকে ফোনে তাদের কথা হতো। দুজনের সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে। একপর্যায়ে তারা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। বিয়েও হয় তাদের। পরিবারের অমতে তারা দুজন বিয়ে করে। এরপর গাজীপুরের সাইনবোর্ড এলাকায় বাসা ভাড়া নেয়। জেএমবির নব্য জঙ্গি সংগঠন দাওলাতুল ইসলামের নারী শাখার সদস্য আকলিমার সঙ্গে পরিচয়ও সেখানে। তার প্ররোচনায় সুমি জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িায়। পরে সুমি তার স্বামীকেও জঙ্গি কার্যক্রমের সম্পৃক্ত করে। জঙ্গি সম্পৃক্তার অভিযোগে সুমি ও তাপসকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। আমিনুল ও নাহিদ সুলতান নামে আরও এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে একই অভিযোগে। এই দুই দম্পত্তি রিমান্ডে রয়েছেন। র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সুমি জঙ্গি কার্যক্রমে জড়ানোর কথা স্বীকার করেন বলে র্যাবের একটি সূত্র জানিয়েছে। মামলার তদন্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত র্যাব-২ এর সিও লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গত ১৫ই আগস্ট জেএমবি’র নতুন ধারার নারী দলের নেত্রী আকলিমা রহমান মনিসহ মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের রিমান্ডে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাবের সদস্যরা।
তিনি আরও বলেন, জেএমবির নারী সদস্য আকলিমার কাছে তথ্য পাওয়া যায় যে, তার পূর্বপরিচিত সুমি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তারা সবাই দাওলাতুল ইসলামের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এরপর তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব-২ এর তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানায়, নারী জঙ্গি গ্রেপ্তারকৃত আকলিমার ফেসবুক, ভাইভার ও ইমো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন র্যাবের সদস্যরা। ওইগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করায় গ্রেপ্তারকৃত সুমির সঙ্গে তার যোগসূত্র পাওয়া যায়। র্যাব জানায়, সুমি ফাজিল শ্রেণীতে পড়ার কারণে সে ভালো আরবি জানতো। আরবির বিষয়গুলো তার ফেসবুকে আপলোড করতো। এছাড়াও সে অন্য বন্ধুদের শেয়ার দিতো। কারও কারও আক্যাউন্টে তার পোস্টগুলো ট্যাগ করে দিতো। একপর্যায়ে ফেসবুকে তাপসের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে তাপসকে বিয়ে করে সুমি। দাওলাতুল ইসলামের নারী শাখার সদস্য আকলিমার কাছে জঙ্গি কার্যক্রমের প্রেরণা পেয়ে প্রথমে নিজে এবং পরে স্বামীকে জঙ্গিবাদের কাজে উদ্বুদ্ধ করে। র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত শরিফুল তার স্ত্রীকে নব্য জেএমবি দাওলাতুল ইসলামের সঙ্গে সংযুক্ত করে। শরিফুল জেএমবির মাওলানা সাইদুর রহমাানের অনুসারী ছিল। মাওলানা সাইদুর রহমান এবং জসিম উদ্দীন রাহমানীর মধ্যে বিরোধের ফলে অনেক জেএমবির সদস্য হতাশ হয়ে পড়ে। এরপর আমিনুল নতুন জঙ্গি সংগঠন দাওলাতুল ইসলামে যোগ দেয়। যোগ দেয়ার পর তার স্ত্রীকে নারী শাখার সদস্য করে। তারা দুজন মিলে জেহাদে অংশ গ্রহণের হিজরতে যাওয়ার জন্য সদস্য সংগ্রহ করত। দুই দম্পতি পাকিস্তান যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল। র্যাব জানায়, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ইন্টারনেটে জঙ্গিদের বিভিন্ন কার্যক্রম, লেখনী ও ভিডিও বার্তায় উদ্বুদ্ধ হয়েছে ওই দুই দম্পতি। জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার তাদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়ায় তাদের র্যাব গ্রেপ্তার করে। দুই দম্পতির কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে র্যাব। ফেসবুকসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে দুই দম্পতি বিভিন্ন জনের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করতো। তাদের একটি তালিকা করেছে। ওইসব তথ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেলে অন্যদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।