গাজীপুর অফিস; গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের সাময়িক বরখাস্তকৃত কারারুদ্ধ মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানের বিরুদ্ধে একটি নাশকতার মামলায় পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেয়ার পর পুনঃতদন্তের আবেদন করেছে পিপি। আওয়ামীলীগ সমর্থিত কাউন্সিলরদের অভিযোগ থেকে বাদ দিতে দলীয় চাপে এই পুনঃতদন্তের আবেদন বলে অনেকেই মনে করছেন।
বুধবার গাজীপুর জেলা জজ আদালতে রাষ্ট্র পক্ষের কৌশলী(পিপি) এড. হারিছ উদ্দিন আহম্মেদ পুলিশের দেয়া অভিযোগপত্র সঠিক হয়নি বলে আবেদন করে মামলাটি পুনঃতদন্তের নিবেদন করেন। গাজীপুর আদালত সূত্র সংবাদটি নিশ্চিত করে।
এর আগে গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের সাময়িক বরখাস্তকৃত কারারুদ্ধ মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানের বিরুদ্ধে একটি নাশকতায় মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। অভিযোগপত্রে আওয়ামীলীগের ৫ কাউন্সিলর ও বিএনপির ১০ কাউন্সিলর সহ মোট ৫১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আনা হয়। তাদের মধ্যে দুই জন নারী কাউন্সিলর রয়েছেন।
গাজীপুর আদালতে দাখিলকৃত জয়দেবপুর থানার ওই নাশকতা মামলার অভিযোগপত্র থেকে এই তথ্য পাওয়া যায়। জয়দেবপুর থানার এস আই হাফিজ উদ্দিন তদন্ত শেষে এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলার বাদী হলেন একই থানার এস আই মোঃ আহাদুল ইসলাম। মামলার অভিযোগপত্রে অধ্যাপক এম এ মান্নান সহ মোট ৫১জনকে অভিযুক্ত করা হয়। আসামীদের মধ্যে জিসিসির প্যানেল মেয়র হাসান আজমল ভূইয়াও আছেন। ৫১ আসামীর মধ্যে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর হলেন ১০ জন আর আওয়ামীলীগ সমর্থিত কাউন্সিলর হলেন ৫জন। এর মধ্যে দুই নারী কাউন্সিলর আওয়ামীলীগের সালমা খাতুন ও বিএনপির শিরিন চাকলাদার রয়েছেন। মামলায় অব্যাহতি পেয়েছেন ৮জন। অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত বিএনপির কাউন্সিলররা হলেন, হাসান আজমল ভূঁইয়া, তানভীর আহম্মেদ, মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, মোঃ শফিউদ্দিন, শেখ মোঃ আলেক, মোঃ হান্নান মিয়া হান্নু, ফয়সাল সরকার ও সুলতান উদ্দিন আহম্মেদ। তবে মাহবুব-উর রশীদ খান শিপু কাউন্সিলরের নাম থাকলেও পিতার নাম ও ঠিকানার মিল নেই।
অভিযুক্ত আওয়ামীলীগ সমর্থিত কাউন্সিলররা হলেন, মোঃ রফিকুজ্জামান, নুরুল ইসলাম, গিয়াস উদ্দিন সরকর ও আজহারুল ইসলাম মোল্লা। এদিকে বিএনপির বর্তমান ভাইসচেয়ারম্যান ও গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র অধ্যাপক এম মান্নানকে বিভিন্ন মামলা দিয়ে কারাগারে রাখার কারণে বিএনপি সমর্থিত অনেক কাউন্সিলর আত্মরক্ষার জন্য আওয়ামীলীগে গোপনে যোগ দিলেও মামলা থেকে রেহাই পেলেন না। এমনকি তাদের সঙ্গে আসামী হয়ে গেলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের ৫ কাউন্সিলরও।
আওয়ামীলীগের দলীয় সূত্র ও জিসিসির একাধিক সূত্র বলছে, অধ্যাপক এম এ মান্নানের সঙ্গে যারা গোপন লিঁয়াজো করেন তাদেরকে আসামী করা হয়েছে। তব ৭৬ কাউন্সিলরের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের ৫জন সহ মোট ১৫ কাউন্সিলর আসামী হওয়ার বিষয়টি নিয়ে জল্পনা কল্পনা চলছে। এ নিয়ে আওয়ামীলীগের মুল দলেও বিরোধ আছে। আওয়ামীলীগের ওই ৫ কাউন্সিলরের মধ্যে বর্তমান মন্ত্রী, এমপি ও দলীয় জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতার আশির্বাদপুষ্ট লোক আছেন। বিষয়টি মিডিয়ায় ফলাও ভাবে প্রকাশিত ও প্রচারিত হওয়ার পর দলীয় চাপে পিপি আজ এই আবেদন করেন। আওয়ামীলীগ সমর্থিত কাউন্সিলরদে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিতেই পুনঃতদন্তের আবেদন বলে অনেকেই মনে করছেন।
ওই দিকে বিএনপির মধ্যেও আলোচনা সমালোচনা চলছে। দলীয় সূত্র বলছে, অধ্যাপক মান্নানের অনুপুস্থিতিতে যে সকল বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর গোপনে আওয়ামীলীগের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন তারাও এখন আসামী হয়ে গেছেন। তারাও মামলা থেকে মুক্তি পেলেন না।
দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, একটি সিটিকরপোরেশনে নির্বাচিত মেয়র সহ একপঞ্চমাংশ কাউন্সিলর অভিযোগপত্রে আসামী হয়ে গেলে ওই প্রতিষ্ঠানের নৈতিক ভিত্তি প্রশ্নের সম্মুখিন হয়ে যায়। কারারুদ্ধ মেয়রের মত যদি অভিযুক্ত কাউন্সিলররাও সাময়িক বরখাস্ত হয়ে যান তবে অচল হয়ে যেতে পারে জিসিসি। আর যদি গোপন লিঁয়াজোর পরিধি বাড়তে থাকে তবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের এই প্রতিষ্ঠান কতটুকু নাগরিক সেবা দিতে পারবে তা নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠাসৃষ্টি হতে পারে।
গাজীপুর সিটিকরপোরেশনে বর্তমানে মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন আওয়ামীলীগ সমর্থিত কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণ। বিএনপি সমর্থিত নির্বাচিত মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান দুই ডজনের অধিক মামলায় আসামী হয়ে কারাগারে আছেন। সকল মামলায় জামিন হওয়ার দিনই নতুন মামলায় গ্রেফতার দেখানোর কারণে তিনি মুক্তি পাচ্ছেন না।