ঢাকা: আসছে ঈদুল আজহা। এরপর দুর্গাপূজা। এই দুই উৎসবে রাজধানীতে কয়েক হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়ে থাকে। এই বিপুল অর্থপ্রবাহকে সামনে রেখে এবারও সক্রিয় প্রতারকচক্র। রাজধানীর ২৩টি পশুর হাটসহ নগরীর ব্যস্ততম পয়েন্টে এরই মধ্যে শতাধিক প্রতারকচক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।
এর মধ্যে রয়েছে অজ্ঞান পার্টি, জালনোট, ছিনতাই ও প্রতারকচক্র। সমপ্রতি পুলিশ, গোয়েন্দা ও র্যাবের হাতে ধরা পড়া এসব প্রতারকচক্রের অর্ধশতাধিক সদস্যের দেয়া স্বীকারোক্তি ও সংশ্লিষ্টদের পর্যবেক্ষণে এসব তথ্য উঠে আসে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ ইউসুফ আলী মানবজমিনকে বলেন, আগামী ঈদ ও পূজাকে সামনে রেখে রাজধানীর বিভিন্ন পশুর হাট এবং ব্যস্ততম পয়েন্টে বিভিন্ন ধরনের প্রতারকচক্র নানা কৌশলে তৎপরতা চালাচ্ছে। গোয়েন্দা সদস্যরাও বসে নেই। বেড়েছে পুলিশের কার্যক্রমও। এরই মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বেশ কয়েকটি জালনোট, অজ্ঞান পার্টি ও ছিনতাইকারীচক্র ধরা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীজুড়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া চেকপোস্ট, পুলিশি টহল ও তল্লাশিসহ পুলিশের নিয়মিত কার্যক্রমও বাড়ানো হয়েছে। ঈদ সামনে রেখে গত মাস থেকে ক্রমেই বাড়ছে ছিনতাই, জালনোট, অজ্ঞান পার্টিসহ বিভিন্ন প্রতারকচক্রের তৎপরতা। সর্বস্ব হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ। চলতি মাসের শুরু থেকে এ ক’দিনে এরকম বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। ধরা পড়েছে একাধিক চক্র। যেমন শিকার হয়েছেন সাইকেল ও পার্টস ব্যবসায়ী কামাল হোছাইন। রাজধানীর খিলক্ষেতে মধ্যবয়সী কামালের ব্যবসা। প্রায় শুক্রবারেই তিনি তেজতুরিবাজার থেকে দোকানের জন্য নগদ টাকায় মালামাল কিনেন।
গত শুক্রবার সকালেও টাকা নিয়ে খিলক্ষেত থেকে রওনা দেন। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বাসে উঠার আগেই এক লোক তাকে অনুসরণ করছে বলে তার সন্দেহ জাগে। তিনি ৩ নম্বর বাসে উঠলে ওই লোকও একই বাসে উঠে পড়ে। দ্রুত নেমে পড়েন কামাল। পরে উঠেন অপর একটি বাসে। উঠে দেখেন বিআরটিসির ওই বাসেও লোকটি বসে আছে। বাস ছেড়ে দেয়ায় আর নামা হয়নি। মাঝপথে বাসটিতে উঠে এক খাবার বিক্রেতা (ছদ্মবেশী প্রতারক)। বাসের ১০-১২ যাত্রী তার কাছ থেকে খাবার কিনে খায়। তাদের দেখে খাবার কিনে খান কামালও। কিছুক্ষণ পর হন অজ্ঞান। মাঝপথে তার কোমরে থাকা ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা নিয়ে তাকে নামিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এরপর একটি রিকশায় উঠিয়ে দেন পথচারীরা। তেজতুরি বাজারের ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ তার গ্রাহককে এ অবস্থায় তার দোকান অতিক্রম করতে দেখে ছুটে যান। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে পাঠান। সেখানে চিকিৎসার পর সুস্থ হন কামাল। আবুল কালাম আজাদ বলেন, কামাল প্রায় শুক্রবারেই নগদ টাকায় মালামাল কিনলেও এমনটা হয়নি। পরিচিতদের অনেকের কাছেই ঈদের আগে অজ্ঞান পার্টি, ছিনতাইকারী ও প্রতারকচক্রের তৎপরতা বাড়ার কথা শুনেছি। এখন এক ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী শিকার হলেন। তার কোমরে থাকা ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা নিয়ে গেলেও শার্টের ভেতরের পকেটে টাকা থাকার কথা বুঝতে না পারায় ওই ১ লাখ টাকা রয়ে গেছে। সে প্রায় সুস্থ হয়ে উঠলেও হলুয়া জাতীয় খাবারে ক্ষতিকর ও বিষাক্ত রাসায়নিকদ্রব্য থাকায় তার শরীরের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির কারণ হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। কামাল হোছাইন টাকা হারিয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এলেও অধরাই রয়ে গেছে ওই প্রতারকচক্রের সদস্যরা। একই দিন রাজধানীর দারুসসালাম, শাহবাগ, মহাখালী ও যাত্রাবাড়ি এলাকায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) একাধিক অজ্ঞান পার্টির সক্রিয় ২১ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের স্বীকারোক্তির পর রাজিব বণিক, আব্দুর রউফ শেখ, মো. আওলাদ হোসেন, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. বাবুল হোসেন, মো. আজিম, মো. সুজন, মো. আবু সিদ্দিক দেলু, মো. লিটন মিয়া, সাগর, মো. আকাশ, সুলতান বাদশা, রিপন, রুবেল মিয়া, জীবন, পলাশ মোল্লা, আবদুল মান্নান, সুমন মিয়া, রফিকুল ইসলাম, ইদ্রিস সিকদার ও মাসুদ শেখসহ চক্রের প্রত্যেককে ৬ মাস থেকে ২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন মোবাইল কোর্ট।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ২৩টি হালুয়ার কৌটা, মিলান (৭.৫ গ্রাম) ৩০টি এবং নকটিন (৫ গ্রাম) ৩৫টি ট্যাবলেট, অজ্ঞান করার আচার, ভেষজ চিকিৎসার বই, সেডিল ট্যাবলেট, ভেষজ হালুয়া ও কালো রং উদ্ধার করা হয়। এ সময় তারা রাজধানীর বিভিন্ন গরুর হাট ও পয়েন্টে যাত্রী ও হকার সেজে বিভিন্ন অভিনব কৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে গরু ক্রেতা ও যাত্রীদের কাছ থেকে সর্বস্ব হাতিয়ে নেয়ার কথা স্বীকার করেছে। তারা আরো জানায়, সেডিল (৫ গ্রাম), এপিট্রা (৫ গ্রাম), ট্রাইপটিন (২৫ গ্রাম) ও ডরমিকামসহ (৭.৫ গ্রাম) বিভিন্ন ঘুমের ওষুধ পানির সঙ্গে মিশিয়ে ছোট কৌটায় করে নিজেদের কাছে রেখে কৌশলে চা, কফি, ডাব, কোমল পানীয়ের সঙ্গে মিশিয়েও যাত্রীদের সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়ে আসছিল। গ্রেপ্তার হওয়া একাধিক অজ্ঞান পার্টি সূত্রে জানা তথ্যের ভিত্তিতে ধারণা করা হচ্ছে, এই ঈদুল আজহা ও দুর্গাপূজার আগে রাজধানীতে অন্তত দুই ডজন অজ্ঞান পার্টি সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
শুধু অজ্ঞান পার্টি নয়। তাদের চেয়ে বেশি এগিয়ে জালনোটচক্র। ৫টি সক্রিয় জালনোটচক্রের সন্ধানে গোয়েন্দারা কাজ করছে বলে জানিয়েছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। গ্রেপ্তার হয়েছে আরো একাধিক জালনোটচক্র। ৫০ কোটি টাকার জালনোট কোরবানির হাটে ছাড়ার লক্ষ্য নিয়ে জালনোটচক্র তাদের অপতৎপরতা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।
ডিএমপির সহকারী কমিশনার (মিডিয়া) ফজলে এলাহী বলেন, জালনোটচক্র ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট নকল করছে। প্রস্তুতকারীচক্র রাজধানীর বিভিন্ন বাসায় বসে গোপনে তা ছাপছে। এরপর ডিলারদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। ডিলার বা পাইকাররা প্রতিলাখ টাকা ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় পাইকারিতে বেচাকেনা করছে। খুচরায় প্রতি লাখ টাকা বেচাকেনা হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায়। তারা কোরবানির পশু বিক্রির বড় টাকার বান্ডিলের ভেতরে এই জালনোটগুলো কৌশলে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। অনেকে ১ হাজার টাকার বান্ডিলে কর্নার মিলিয়ে ঢুকিয়ে দিচ্ছে ৫০০ টাকার নোটও। এরই মধ্যে একাধিক চক্র পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে বলেও জানান তিনি।
গত ৩১শে আগস্ট রাত সাড়ে সাতটায় রাজধানীর লালবাগ থানার শহীদনগর এলাকা থেকে জালটাকাসহ এক চক্রের ২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত আলম মিয়া ওরফে আলম ও আলমগীরের কাছ থেকে ৬৩ লাখ ৭৭ হাজার টাকা মূল্যমানের জালনোট জব্দ করা হয়। একই দিন শ্যামপুর থানার জুরাইন রেলগেট এলাকা থেকে জালনোটসহ অপর চক্রের সদস্য মান্নান মুন্সিকে গ্রেপ্তার করে থানা পুলিশ। আগের দিন গত ১লা সেপ্টেম্বর পল্টন ও কোতোয়ালি থানা এলাকা থেকে ৫২ লাখ বাংলাদেশি টাকা ও ৮ হাজার ভারতীয় রুপি এবং জালনোট তৈরির সরঞ্জামসহ অপর এক চক্রের ৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই চক্রের মূল হোতা রেজাউল ইসলাম মুন্না। গ্রেপ্তার হওয়া অপর ৭ সদস্য হলো আব্দুল কাদের অপু, লতিফ, ফজর আলী, মহরম মিয়া, সুমি বেগম, আব্দুল বারেক ও সাদ্দাম। তাদের কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ, জালনোট ছাপানোর প্রিন্টার, জালনোট তৈরির ১৫টি কার্টিজ, ৪টি করে প্লাস্টিকের জার ও কাঠের ফ্রেম, জালনোট তৈরির ৪৫০ তা বিশেষ কাগজ জব্দ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা ৭-৮ বছর ধরে জালনোট তৈরির সঙ্গে জড়ি থাকার ও বিভিন্ন কৌশলে এই ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে। ঈদ ও পূজাকে কেন্দ্র করেই তাদের মূল বাণিজ্য বলেও স্বীকার করেছে চক্রটি।
ঈদ ও পূজাকে সামনে রেখে রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লায়ও সক্রিয় হয়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীচক্র। এছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে পাড়া-মহল্লার মাদকাসক্তদের অনেকে মাদকের টাকা জোগানোর জন্য ছিনতাইয়ে নেমে পড়েছে। এদের সংখ্যা যেমন বেশি, তেমনি এরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এখন প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীর কোথাও না কোথাও ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন নগরবাসী। গত ২৯শে আগস্ট রাত সাড়ে আটটায় মিরপুরের সনি সিনেমা হলের সামনে পথচারী নাজমুল হোসেনকে ঘিরে ফেলে ৬ ছিনতাইকারী। তার সর্বস্ব কেড়ে নেয়ার সময় ‘বাঁচাও বাচাও’ চিৎকার করেন তিনি। ছুটে যায় পাশে থাকা মিরপুর থানা পুলিশের টহল টিম। তাৎক্ষণাৎ ছিনতাইকারীচক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, বাশার, পারভেজ, রুবেল, দ্বীন ইসলাম ও জাফর। এ সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি ধারালো ছুরি, ছিনতাইকৃত মোবাইল ও টাকা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের জেল হাজতে পাঠানো হয়। একইভাবে এর দু’দিন আগে ২৭শে আগস্ট সন্ধ্যায় চকবাজার থানার বেড়িবাঁধ সংলগ্ন পাকা রাস্তায় ২ ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন মো. আনিসুজ্জামান। এ সময় ছুরি দিয়ে আঘাত করতে চাইলে চিৎকার জুড়ে দেন তিনি। কিছু দূরে থাকা টহল পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে এসে তাকে রক্ষা করে। ছুরি ও টাকাসহ গ্রেপ্তার করে সোহেল ও জুয়েলকে। এর ১০ দিন আগে গত ১৭ই আগস্ট মধ্যরাতে কাওরানবাজারে তিতাস বিল্ডিংয়ের সামনে ছিনতাই ও ডাকাতির প্রস্তুতিকালে শরিফুল ইসলাম, বাবু (২০), রিপন মিয়া ও রাশেদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় দুটি চাপাতি। তার আগে গত ১৪ই আগস্ট মিরপুর-১-এ ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়ানো বাসের এক নারী যাত্রীর গলা থেকে স্বর্ণের চেইন নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় ধাওয়া দিয়ে ছিনতাইকারীকে আটক করেন ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের এএসআই তাজুল ইসলাম।
ডিএমপির সহকারী কমিশনার (মিডিয়া) ফজলে এলাহী বলেন, জালনোটচক্র ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট নকল করছে। প্রস্তুতকারীচক্র রাজধানীর বিভিন্ন বাসায় বসে গোপনে তা ছাপছে। এরপর ডিলারদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। ডিলার বা পাইকাররা প্রতিলাখ টাকা ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় পাইকারিতে বেচাকেনা করছে। খুচরায় প্রতি লাখ টাকা বেচাকেনা হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায়। তারা কোরবানির পশু বিক্রির বড় টাকার বান্ডিলের ভেতরে এই জালনোটগুলো কৌশলে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। অনেকে ১ হাজার টাকার বান্ডিলে কর্নার মিলিয়ে ঢুকিয়ে দিচ্ছে ৫০০ টাকার নোটও। এরই মধ্যে একাধিক চক্র পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে বলেও জানান তিনি।
গত ৩১শে আগস্ট রাত সাড়ে সাতটায় রাজধানীর লালবাগ থানার শহীদনগর এলাকা থেকে জালটাকাসহ এক চক্রের ২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত আলম মিয়া ওরফে আলম ও আলমগীরের কাছ থেকে ৬৩ লাখ ৭৭ হাজার টাকা মূল্যমানের জালনোট জব্দ করা হয়। একই দিন শ্যামপুর থানার জুরাইন রেলগেট এলাকা থেকে জালনোটসহ অপর চক্রের সদস্য মান্নান মুন্সিকে গ্রেপ্তার করে থানা পুলিশ। আগের দিন গত ১লা সেপ্টেম্বর পল্টন ও কোতোয়ালি থানা এলাকা থেকে ৫২ লাখ বাংলাদেশি টাকা ও ৮ হাজার ভারতীয় রুপি এবং জালনোট তৈরির সরঞ্জামসহ অপর এক চক্রের ৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই চক্রের মূল হোতা রেজাউল ইসলাম মুন্না। গ্রেপ্তার হওয়া অপর ৭ সদস্য হলো আব্দুল কাদের অপু, লতিফ, ফজর আলী, মহরম মিয়া, সুমি বেগম, আব্দুল বারেক ও সাদ্দাম। তাদের কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ, জালনোট ছাপানোর প্রিন্টার, জালনোট তৈরির ১৫টি কার্টিজ, ৪টি করে প্লাস্টিকের জার ও কাঠের ফ্রেম, জালনোট তৈরির ৪৫০ তা বিশেষ কাগজ জব্দ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা ৭-৮ বছর ধরে জালনোট তৈরির সঙ্গে জড়ি থাকার ও বিভিন্ন কৌশলে এই ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে। ঈদ ও পূজাকে কেন্দ্র করেই তাদের মূল বাণিজ্য বলেও স্বীকার করেছে চক্রটি।
ঈদ ও পূজাকে সামনে রেখে রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লায়ও সক্রিয় হয়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীচক্র। এছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে পাড়া-মহল্লার মাদকাসক্তদের অনেকে মাদকের টাকা জোগানোর জন্য ছিনতাইয়ে নেমে পড়েছে। এদের সংখ্যা যেমন বেশি, তেমনি এরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এখন প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীর কোথাও না কোথাও ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন নগরবাসী। গত ২৯শে আগস্ট রাত সাড়ে আটটায় মিরপুরের সনি সিনেমা হলের সামনে পথচারী নাজমুল হোসেনকে ঘিরে ফেলে ৬ ছিনতাইকারী। তার সর্বস্ব কেড়ে নেয়ার সময় ‘বাঁচাও বাচাও’ চিৎকার করেন তিনি। ছুটে যায় পাশে থাকা মিরপুর থানা পুলিশের টহল টিম। তাৎক্ষণাৎ ছিনতাইকারীচক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, বাশার, পারভেজ, রুবেল, দ্বীন ইসলাম ও জাফর। এ সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি ধারালো ছুরি, ছিনতাইকৃত মোবাইল ও টাকা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের জেল হাজতে পাঠানো হয়। একইভাবে এর দু’দিন আগে ২৭শে আগস্ট সন্ধ্যায় চকবাজার থানার বেড়িবাঁধ সংলগ্ন পাকা রাস্তায় ২ ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন মো. আনিসুজ্জামান। এ সময় ছুরি দিয়ে আঘাত করতে চাইলে চিৎকার জুড়ে দেন তিনি। কিছু দূরে থাকা টহল পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে এসে তাকে রক্ষা করে। ছুরি ও টাকাসহ গ্রেপ্তার করে সোহেল ও জুয়েলকে। এর ১০ দিন আগে গত ১৭ই আগস্ট মধ্যরাতে কাওরানবাজারে তিতাস বিল্ডিংয়ের সামনে ছিনতাই ও ডাকাতির প্রস্তুতিকালে শরিফুল ইসলাম, বাবু (২০), রিপন মিয়া ও রাশেদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় দুটি চাপাতি। তার আগে গত ১৪ই আগস্ট মিরপুর-১-এ ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়ানো বাসের এক নারী যাত্রীর গলা থেকে স্বর্ণের চেইন নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় ধাওয়া দিয়ে ছিনতাইকারীকে আটক করেন ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের এএসআই তাজুল ইসলাম।