মুছার অপক্ষোয় তদন্ত দাঁড়িয়ে!

জাতীয়

53f24ef987041e005fa54fa4ec6cf2f8-Untitled-3

চট্রগ্রাম: পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম হত্যার রহস্য এখনো অজানা। পুলিশ বলছে, কামরুল সিকদার ওরফে মুছাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলে মামলার জট খুলবে। অন্যদিকে মুছার স্ত্রীর দাবি, পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে মুছাকে। অবশ্য পুলিশ তা অস্বীকার করছে। দুই মাস ধরে মুছাতেই ‘আটকে’ আছে এ মামলার তদন্ত।
আজ সোমবার মাহমুদা হত্যার তিন মাস হতে চলেছে। গত ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড় এলাকায় মাহমুদা খানমকে ছুরিকাঘাত ও গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় বাবুল আক্তার অজ্ঞাতপরিচয় তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেন। তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, এই সময়ের মধ্যে এ মামলার বিষয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে কোনো তথ্য দেননি বাবুল আক্তার।
২৪ জুন মধ্যরাতে ঢাকার বনশ্রী এলাকার শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবুল আক্তারকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। প্রায় ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে আবার বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ জানায়, বাহিনী থেকে পদত্যাগ করেছেন তিনি। অবশ্য পরে বাবুল আক্তার বলেন, তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেননি। পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের জন্য গত ৯ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের কাছে আবেদন করেছেন তিনি।
মাহমুদা হত্যায় জড়িত সন্দেহে প্রথমে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর একটি মাজারের খাদেম আবু নছর ওরফে গুন্নুকে গত ৮ জুন গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তাঁর কাছে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে একপর্যায়ে স্বীকার করে পুলিশ। আবু নছরের স্ত্রী পারভীন আক্তার সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন, ৩০ লাখ টাকা নিয়ে পুলিশ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাঁর স্বামীকে এই মামলায় জড়িয়েছে। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে বায়েজিদ বোস্তামী এলাকা থেকে ১১ জুন শাহজামান ওরফে রবিন নামের আরও এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মাহমুদা হত্যার ২১ দিন পর ২৬ জুন গ্রেপ্তার করা হয় ওয়াসিম ও আনোয়ারকে। ওই দিন সকালে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. ইকবাল বাহার সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, মুছার নেতৃত্বে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। এতে ওয়াসিম, আনোয়ারসহ সাত-আটজন অংশ নেন। এর আগে গ্রেপ্তার হওয়া আবু নছর ও রবিন এই হত্যকাণ্ডে জড়িত এমন তথ্য পাওয়া যায়নি।
গ্রেপ্তারের কয়েক ঘণ্টা পর ওয়াসিম ও আনোয়ার আদালতে জবানবন্দি দেন। তাঁরা বলেন, মুছার নেতৃত্বে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। কিন্তু মুছা কার নির্দেশে এবং কেন এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন, সে ব্যাপারে তাঁরা কিছু বলেননি। জবানবন্দিতে উল্লেখ করা হয়েছে, হত্যাকাণ্ডে ওয়াসিম, আনোয়ার, মো. রাশেদ, নবী, মো. শাহজাহান, মুছা ও মো. কালু অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে নবী ও রাশেদ গত ৪ জুলাই রাঙ্গুনিয়ায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলে ছিলেন ওয়াসিম, মুছা ও নবী। মাহমুদাকে ছুরিকাঘাত করেন নবী। অস্ত্র সরবরাহ করেন ভোলা। এঁদের মধ্যে মুছা ও কালুকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি বলে জানায় পুলিশ।
মাহমুদা হত্যায় অস্ত্র সরবরাহ করা ভোলা ও তাঁর সহযোগী মনিরকে গত ২৭ জুন গ্রেপ্তার করা হয়। অস্ত্র উদ্ধারের মামলায় পুলিশ গত ২৮ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। কিন্তু ভোলা অস্ত্র কোথা থেকে সংগ্রহ করেছেন এবং কার নির্দেশে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহারের জন্য দিয়েছেন, তা তদন্তে বের করা যায়নি।
তিন মাসে মামলার অগ্রগতি কী, জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. কামরুজ্জামান গতকাল দুপুরে বলেন, কার নির্দেশে, কী কারণে ভাড়াটে খুনিরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তা জানার চেষ্টা চলছে। মুছা ও কালুকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। মুছা ধরা পড়লে হত্যাকাণ্ডের রহস্য বের করা যাবে।
গুরুত্ব দিয়ে এই মামলার তদন্ত করা হচ্ছে জানিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. ইকবাল বাহার  বলেন, ‘বাদী বাবুল আক্তার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি, কোনো তথ্যও দেননি তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে। বরং আমরাই তাঁর সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেছি অপরাধীদের শনাক্ত করতে।’ ঘটনায় বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে কি না—এই প্রশ্নে পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘এখনো আমরা নিশ্চিত নই। সময় হলেই জানা যাবে।’
তিন মাসে একবারও স্ত্রী হত্যা মামলার খোঁজ না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাবুল আক্তার এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
গত ২২ জুন চট্টগ্রাম নগরের বন্দর এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে পুলিশ মুছাকে ধরে নিয়ে গেছে বলে দাবি করে আসছেন তাঁর স্ত্রী পান্না আক্তার। এ অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছে পুলিশ।
এদিকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া খাদেম আবু নছরের স্ত্রী পারভীন আক্তার বলেন, বিনা দোষে তাঁর স্বামীকে কারাভোগ করতে হচ্ছে। জামিনের আবেদন করা হলেও মঞ্জুর হচ্ছে না।
জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, মাহমুদা হত্যার তদন্তে শেষ পর্যন্ত আবু নছর ও রবিনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া না গেলে মামলা থেকে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হবে। এর আগে তাঁরা জামিন পাবেন কি পাবেন না, সেই এখতিয়ার আদালতের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *