পাকিস্তানের ফের ধৃষ্টতা

Slider সারাবিশ্ব

ae2f07935e24ff6724e8a91324242880-kasem

ঢাকা: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মীর কাসেম আলীর ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করায় ‘গভীরভাবে মর্মাহত’ হয়েছে পাকিস্তান। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারপ্রক্রিয়াকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যার পক্ষে আবারও তারা নিজেদের অবস্থান অটল রাখল।
গতকাল শনিবার রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এই জামায়াত নেতার ফাঁসি কার্যকরের পরই প্রতিক্রিয়া জানায় পাকিস্তান।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকর করায় ইসলামাবাদ ‘গভীরভাবে মর্মাহত’।
মীর কাসেমের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়, ১৯৭১-এর ডিসেম্বরের আগে সংঘটিত ‘কথিত’ অপরাধের অভিযোগে ‘ত্রুটিপূর্ণ বিচার’ প্রক্রিয়ায় মীর কাসেমের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করায় পাকিস্তান গভীরভাবে মর্মাহত।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রচারিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বিচারের মাধ্যমে বিরোধীদের দমন গণতান্ত্রিক চেতনার পুরোপুরি পরিপন্থী। বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর পর থেকেই কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংগঠন, মানবাধিকার গোষ্ঠী, আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ বিচারের কার্যক্রম, বিশেষ করে এর নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। পাশাপাশি অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আইনজীবী ও সাক্ষীদের নানাভাবে হয়রানির খবরের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তির অংশ হিসেবে ক্ষমাশীলতার পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশ বিচারপ্রক্রিয়া এগিয়ে না নিতে রাজি হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে সেই অঙ্গীকার সমুন্নত রাখা উচিত।

মানবতাবিরোধী অপরাধে মীর কাসেমসহ এ পর্যন্ত ছয়জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা­র ফাঁসি কার্যকর করা হয়। দলটির আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর হয় ২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয় ২০১৫ সালের ২১ নভেম্বর। ২০১৬ সালের ১০ মে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর হয়।

২০০৯-এ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সঙ্গে টানাপোড়েন শুরু হয়। এই বিচারের রায় কার্যকরকে ঘিরে দুই দেশের সম্পর্ক আরও খারাপের দিকে যায়।

কাদের মোল্লা থেকে শুরু করে প্রত্যেক মানবতাবিরোধী অপরাধীর ফাঁসি কার্যকরের পর পাকিস্তানের কাছ থেকে অযাচিত বিরূপ প্রতিক্রিয়া এসেছে। এ নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের তিক্ততা বাড়ে। দুই দেশের কূটনীতিকদের পাল্টাপাল্টি তলব ও প্রত্যাহারের ঘটনাও ঘটে।

বাংলাদেশ সরকার প্রতিবারই পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়ার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে ইসলামাবাদের আচরণকে অযাচিতভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করে আসছে ঢাকা।

পাকিস্তানের আচরণকে ধৃষ্টতামূলক হিসেবে আখ্যায়িত করে তা থেকে তাদের বিরত থাকতে বারবার আহ্বান জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ। তারপরও পাকিস্তান অযাচিতভাবে নাক গলিয়ে যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *