ঢাকা; নীল জার্সিতে বাংলাদেশ দলকে প্রথমে একটু অচেনা মনে হলেও মাঠে তাদের খেলাটা হলো আগের মতোই দুর্দান্ত। ইরান ও সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে যেভাবে কৃষ্ণা, মার্জিয়া, সানজিদারা প্রতিপক্ষের ওপর আক্রমণের ঢেউ তুলেছিল, আজ কিরগিজস্তানের বিপক্ষে সেই ঢেউ ছিল আরও বেশি। ইরান, সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে অনেক সুযোগ নষ্ট হলেও আজ তুলনামূলকভাবে সুযোগ কাজে লাগানো গেছে বেশি। আর তাতেই ১০-০ গোলের বিশাল এক জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ।
অনূর্ধ্ব-১৬ এএফসি টুর্নামেন্টের বাছাইপর্বের প্রথম দুটি ম্যাচে মাঠের পারফরম্যান্সটা স্কোর লাইনে ঠিকমতো প্রতিফলিত হয়নি মেয়েদের। তারপরও জয়টা এসেছিল ৩-০ ও ৫-০ গোলে। সিঙ্গাপুর ম্যাচটির পর অনেকেই আক্ষেপ করেছিলেন স্কোরলাইন আরও বড় হয়নি দেখে। এক দিন পরেই মেয়েরা সেই আক্ষেপটা ঘুচিয়ে দিল দারুণভাবে। ঢাকার মাঠে এই প্রথম দেশের কোনো ফুটবল দল এত বড় ব্যবধানে জয় তুলে নিল কোনো বিদেশি দলের বিপক্ষে।
এই মেয়েরাই অনূর্ধ্ব-১৪ দলে খেলার সময় ভুটানকে ১৬-০ গোলে হারিয়েছিল। কিন্তু কিরগিজস্তানের বিপক্ষে আজকের ১০-০ গোলের জয়টি একটু অন্যমাত্রাই দিচ্ছে। সুযোগ-সুবিধায় ও ফুটবল অবকাঠামোয় অনেক এগিয়ে থাকা একটি দলকে ১০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা প্রমাণ করল যে বড় স্বপ্নের দিকে দুর্দান্তভাবেই এগিয়ে চলেছে তারা।
আজকের ম্যাচটিও নিজেদের সীমানায় অলস দাঁড়িয়ে কাটিয়েছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ দলের গোলকিপার মাহমুদা। প্রায় পুরোটা সময়ই যে খেলা হয়েছে কিরগিজস্তানের সীমানায়। বাংলাদেশের মেয়েরা একের পর এক আক্রমণে উঠেছে, কিরগিজ রক্ষণভাগের কাজ ছিল সেই আক্রমণের তোড় সামলানো। যদি বলা হয়, খেলাটা আজ বাংলাদেশের সঙ্গে কিরগিজস্তান গোলকিপার আদেলিনা কিসকাকোভার মধ্যে হয়েছে, তাহলে খুব বাড়িয়ে বলা হবে না। কিসকাকোভা পুরো খেলাতেই ঠেকিয়ে গেছেন বাংলাদেশের একের পর এক আক্রমণ।
শুরু থেকে কিরগিজস্তানকে চেপে ধরলেও প্রথম গোলের দেখা পেতে ২১ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। ২১ মিনিটে আনুচিংয়ের গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ (১-০)। ৩০ মিনিটে দ্বিতীয় গোলটি করে মার্জিয়া। ৪৩ মিনিটে তৃতীয় গোল করে কৃষ্ণা। আনুচিংয়ের দ্বিতীয় গোলের সুবাদে ৪-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
দ্বিতীয়ার্ধে গোলের নেশায় পেয়ে বসে বাংলাদেশের মেয়েদের। ৪৯ মিনিটেই কৃষ্ণা নিজের দ্বিতীয় গোলে বাংলাদেশকে এগিয়ে দেন ৫-০ গোলে। ৬৭ মিনিটে শামসুন্নাহারের পা থেকে আসে ছয় নম্বর গোল। ৭৫ মিনিটে দারুণ এক ফ্রিকিকে স্কোর লাইন ৭-০ করে নার্গিস। ৭৯ মিনিটে নিজের হ্যাটট্রিকে দলকে ৮-০ গোলে এগিয়ে দেন কৃষ্ণা।
স্কোর লাইনটা ৮-০ হয়ে যাওয়ার পরপরই গ্যালারিতে চাপা উত্তেজনা। উত্তেজনার কারণ, ঢাকার মাঠে যেকোনো পর্যায়েই বাংলাদেশের কোনো দলের সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয় ৮-০ গোলে। ১৯৮৫ সালে সাফ গেমসে মালদ্বীপের বিপক্ষে ৮-০ গোলে জয়ে পেয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। এরপর ১৯৯৩ সালে এই মালদ্বীপেরই একটি ক্লাবের বিপক্ষে ৮-০ গোলে জিতেছিল ঢাকা মোহামেডান। উত্তেজনার কারণ ছিল এটিই, বাংলাদেশের এই মেয়েরা কি পারবে সেই রেকর্ড ছাপিয়ে যেতে?
৮৩ মিনিটে মারিয়ার গোলে নতুন রেকর্ড হলো ঢাকার মাঠে। ৯-০ গোলে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। ঠিক দুই মিনিট পরেই শামসুন্নাহার ঢাকার দর্শকদের প্রথমবারের মতো উপহার দেয় ১০-০ গোলে এগিয়ে থাকার তৃপ্তি ও আনন্দ। যোগ হওয়া সময়ে একটি গোল অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে গেলে ১০-০ গোলের আনন্দ নিয়েই মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৬ বছর বয়সী মেয়েরা।
এই প্রতিযোগিতায় আরও দুটি ম্যাচ বাকি বাংলাদেশের। ৩ সেপ্টেম্বর চীনা তাইপের বিপক্ষে ম্যাচটিকে ধরা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ৫ সেপ্টেম্বর শেষ ম্যাচের প্রতিপক্ষ সংযুক্ত আরব আমিরাত।