ঢাকা: ঢাকায় ৮ ঘণ্টার এক ঝটিকা সফর করে গেলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। হাই প্রোফাইল ওই সফরটি ছিল নানা কারণে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এখানে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, সংসদের বিরোধী নেতা রওশন এরশাদ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে তার।
বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাস ও সহিংস চরমপন্থার হুমকি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় অঙ্গীকারের বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করে গেছেন জন কেরি। দ্বিপক্ষীয়ভাবে এ ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কাজের পরিধি আরো বাড়ানোর কথাও জানিয়েছেন তিনি। দুই পররাষ্ট্র মন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন দু’দেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মার বৈঠকে জঙ্গীবাদ দমনে যুক্তরাষ্ট্রে সহায়তার প্রস্তাবের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে বৈঠক শেষে জন কেরি রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ ইএমকে সেন্টারে দেয়া বক্তৃতা এবং তার নিজের করা টুইট বার্তায় এর আভাস দেন। প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে পৃথক টুইট বার্তায় তিনি লিখেন- বাংলাদেশের অসাধারণ অগ্রগতির গল্প রয়েছে। আজ প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমি আনন্দিত।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাহমুদ আলীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের বিষয়ে তিনি লিখেন- নিরাপত্তা ইস্যু ও সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের দৃঢ় সহযোগিতা নিয়ে আজ গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। ইএমকে সেন্টারে দেয়া বক্তৃতায় জন কেরি বাংলাদেশের সমপ্রতিক বিভিন্ন সহিংস আক্রমণের ঘটনার উল্লেখ করেন। বলেন এই ঘটনাগুলো স্থানীয় জঙ্গীরা ঘটনালেও তাদের বিদেশী জঙ্গীগোষ্ঠিগুলোর সঙ্গে যোগসুত্র রয়েছে। গত ১লা জুলাই গুলশান অ্যাটাকের ঘটনাকে বাংলাদেশের ‘বিভক্তি’র জন্য ঘটনানো হয়েছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এমন হামলা মোকাবিলায় বাংলাদেশের পাশে থাকার স্পষ্ট বার্তা দিয়ে সন্ধ্যায় দিল্লি উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে যান জন কেরি।
প্রধানমন্ত্রীকে কেরি
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমরা একসঙ্গে লড়বো
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দুই দেশের একসঙ্গে লড়াইয়ের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে বিশেষজ্ঞ সহযোগিতা প্রদানের প্রস্তাবটিও পুনরুল্লেখ করেন তিনি। দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কার্যালয়ে গিয়ে সাক্ষাৎ ও বৈঠক করেন মার্কিন মন্ত্রী। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। জানান, বৈঠকে কেরি বলেছেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে চায়। এ বিষয়ে আমাদের অনেক বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। এই বিশেষজ্ঞদের প্রদানের মাধ্যমে আমরা প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে পারি। প্রেস সচিব জানান, প্রায় এক ঘণ্টাকাল দুই নেতার মধ্যে আন্তরিক পরিবেশে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সময় জন কেরি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ প্রকাশ করে বলেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের তথ্য বিনিময়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে আইএস সন্ত্রাসীদের অর্থের উৎস সম্পর্কে জন কেরির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এদের অর্থের একটি বড় অংশ আসে তেলক্ষেত্রগুলোর তেল বিক্রির টাকা থেকে এবং আইএস অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোর সাধারণ শ্রমিকদের আয়ের ‘লেভি’ থেকে। প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাসীদের ধরার (গ্রেপ্তার) বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তথ্য সাহায্য প্রত্যাশা করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু প্রযুক্তিগত উন্নত একটি দেশ তাই সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে তারা আমাদের তথ্যগত সহায়তা প্রদান করতে পারে। এটা সম্ভব হলে সন্ত্রাসী গ্রেপ্তারের বিষয়ে আমাদের সহজ হয় এবং এটা দ্বিপক্ষীয়ভাবেই হতে হবে। সন্ত্রাস একটি বৈশ্বিক সমস্যা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার এই সন্ত্রাস দমনে জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিয়ে সার্বিক ঐকমত্য সৃষ্টির মাধ্যমে এই সামাজিক ব্যাধি উপশমের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী দেশের ৬৪ জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন। বর্তমান সন্ত্রাসের ধরন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, এটা অনেকটা আশ্চর্য্যের ব্যাপার আজকাল উচ্চবিত্ত ভালো ঘরের ছেলেরা এই সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, যাদের কোনো কিছুরই অভাব নেই এমন সন্তানরা সন্ত্রাসের পথে পা বাড়াচ্ছে। যার একটিই কারণ তাদের প্রতি তাদের অভিভাবকরা যথাযথভাবে মনোযোগ দিচ্ছেন না। এ সময় কেরি বলেন, উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা আজকাল তাদের অভিভাবকরা ঘর থেকে বের হলেই ভিডিও গেমস খেলতে ব্যস্ত হয়ে যায়, যার অধিকাংশই সন্ত্রাসে পরিপূর্ণ থাকে। মধ্যপ্রাচ্যে চলমান আইএসবিরোধী অভিযান প্রসঙ্গে কেরি বলেন, আইএসকে এই অঞ্চলে কোণঠাসা করে ফেলা হয়েছে এবং আক্রমণের মুখে বহু আইএস যোদ্ধাই এখন নিজ দেশে ফিরতে বাধ্য হচ্ছে। বৈঠকে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে কেরি বলেন, বাংলাদেশ এক্ষেত্রে চমকপ্রদ অগ্রগতি সাধন করেছে। বাংলাদেশের এই উন্নয়ন এবং অন্যান্য বিষয়ে আমাদেরও অংশীদারিত্ব রয়েছে। এছাড়া, বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জলবায়ু, স্বাস্থ্য এবং জ্বালানি খাতসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ১৯৭৫-এর ১৫ই আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার বিষয়টি স্মরণ করে যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফেরত পাঠাতে অনুরোধ জানান। এ বিষয়ে জন কেরি বলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্বেগটা বুঝতে পারছেন। অপরাধী বিনিময়ের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের বিবেচনায় রয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে জন কেরি বলেন, ওই বাড়িটিতে সংরক্ষিত বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন দেখে তিনি অভিভূত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সকল গণআন্দোলন-সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু ভবনের ঐতিহাসিক ভূমিকা স্মরণ করে বলেন, এক সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতাসহ সকল গণআন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল ভবনটি। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের (অস্ত্র ব্যতীত) কোটা এবং শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার প্রত্যাশার পুনরুল্লেখ করেন। বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এখানে যুক্তরাষ্ট্রের আরো বিনিয়োগের আহ্বান জানান। ‘সকলের সঙ্গেই বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’- বাংলাদেশের এই পররাষ্ট্রনীতির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় সকল দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টার কথাও জানান। দেশের উন্নয়নকে লক্ষ্য করে তার সরকার গৃহীত খাদ্য নিরাপত্তা, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা এবং দারিদ্র্র্যবিমোচনের বিভিন্ন কর্মসূচির কথাও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। সরকারের বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপের ফলেই দেশে দারিদ্র্যের হার ৫৭ শতাংশ থেকে নেমে বর্তমানে ২২ শতাংশে এসেছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দেয়াতেই দেশে ব্যাপকসংখ্যক তরুণ-যুবাদের কর্মসংস্থান হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি আমেরিকান কোম্পানিই সর্বপ্রথম এদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে নিজস্ব উদ্যোগে বিনিয়োগে এগিয়ে আসে।’ বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিদ্যমান থাকার কথা উল্লেখ করে বৈঠকে শেখ হাসিনা এ সম্পর্ক দিনে দিনে আরো সুদৃঢ় হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিসা দেশাই বিসওয়াল, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম এবং বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট উপস্থিত ছিলেন।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে কেরি-মাহমুদ আলী: এদিকে দুপুরে আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠকে নিরাপত্তা ও জঙ্গিবাদ দমন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে বলে টুইট বার্তায় জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। মন্ত্রী মাহমুদ আলীও একই কথা বলেন। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় কেরি-মাহমুদ আলী বৈঠকটি হয়। সেখানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি, পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকসহ দুই দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সেখানে সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস-চরমপন্থা দমনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সন্ত্রাস মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার যে জিরো টলারেন্স দেখাচ্ছে সেটি আমরা বলেছি। তিনি এর প্রশংসা করেছেন। সন্ত্রাসবাদ দমনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রস্তাব নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কী আলোচনা হয়েছে তা জানার চেষ্টা করেন সাংবাদিকরা। এ নিয়ে একাধিক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আলোচনা চলমান রয়েছে। এখনই কিছু বলা যাবে না। সেখানে বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, মার্কিন মন্ত্রীর সঙ্গে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের অগ্রাধিকার কী? তিনি জানতে চেয়েছেন। জবাবে বাংলাদেশের তরফে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাণিজ্য সুবিধা চাওয়া হয়েছে। সেখানে জিএসপি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি-না জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী না সূচক জবাব দেন। এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী জানান, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার। সেখানে বাজার সুবিধা সমপ্রসারণ নিয়ে তারা কথা বলেছেন। বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিকে ফিরিয়ে আনার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মাহমুদ আলী বলেন, বঙ্গবন্ধুর একজন খুনি যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। আমরা তাকে প্রত্যর্পণের বিষয়ে কথা বলেছি। যুক্তরাষ্ট্র ফিরে তিনি (জন কেরি) বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনের বিষয়ে মাহমুদ আলী বলেন, কেরিই প্রথম মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী যিনি বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শন করেন। বঙ্গবন্ধু যে ভিশনারী লিডার ছিলেন সেটি তিনি মন্তব্য খাতায় লিখেছেন। বঙ্গবন্ধুর ভিশন বাস্তবায়নে তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বেরও প্রশংসা করেছেন মার্কিন মন্ত্রী। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে আনুষ্ঠানিক আলোচনার আগে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফটো সেশনে অংশ নেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী মাহমুদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, তৎকালীন ডেমোক্রেট দলীয় মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডির অনুসারী হওয়ায় জন কেরিও অন্য অনেক আমেরিকানের মতো ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সমর্থক ছিলেন। যদিও তৎকালীন মার্কিন প্রশাসন ‘আমাদের স্বাধীনতা’র বিরোধী ছিল। আলী বলেন, ‘১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতার প্রতি সমর্থন দেয়ায় আমরা ২৯ জন মার্কিন নাগরিককে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দিয়েছি। বৈঠকের পর তার সম্মানে মাহমুদ আলী আয়োজিত ভোজে যোগ দেন। এর আগে সকাল সোয়া ১০টার দিকে জন কেরিকে বহনকারী যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর বিশেষ ফ্লাইটটি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখানে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীসহ মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সুইজারল্যান্ডের জেনেভা থেকে জন কেরি ঢাকায় আসেন। সন্ধ্যায় তিনি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি যান। ৯ ঘণ্টার ঝটিকা সফরে সকালে ঢাকা পৌঁছানোর পর বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে ব্যস্ত কর্মসূচির সূচনা করেন মার্কিন মন্ত্রী। এরপর প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শেষে ধানমন্ডির এডওয়ার্ড এম কেনেডি সেন্টারে (ইএমকে সেন্টার) তরুণ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সেখান থেকে বেরিয়ে মিরপুরে একটি পোশাক তৈরির কারখানা পরিদর্শনে যান। পরে দূতাবাসে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সেখানেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে জন কেরির একান্ত এবং আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়। গত পাঁচ বছরে এটি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বিতীয় সফর। ২০১২ সালের ৫ই মে যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসেছিলেন। হিলারির ঢাকা সফরের সময় বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারিত্ব সংলাপ শুরুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
রওশনের সঙ্গে কেরির সাক্ষাৎ: এদিকে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে উন্নয়নে অন্যতম অংশীদার হতে পারে। গতকাল বিকালে রাজধানীর এডওয়ার্ড এম কেনেডি সেন্টার ফর পাবলিক সার্ভিস অ্যান্ড আর্টস (ইএমকে সেন্টার) মিলনায়তনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সঙ্গে সাক্ষাতে রওশন এরশাদ এ কথা বলেন। বিরোধীদলীয় নেতার তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মামুন হাসানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিরোধীদলীয় নেতা বলেছেন যে, বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করে যাচ্ছে। আর নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের অধিকাংশ শ্রমিক নারী। এ শিল্পে যুক্তরাষ্ট্র সব ধরনের সুবিধা বৃদ্ধি করে নারীকে আরো স্বাবলম্বী করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।