খুলনা মেডিকেল কলেজে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ

Slider রাজনীতি

29338_kmc

 

খুলনা মেডিকেল কলেজে (খুমেক) ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি
সাইফুল্লাহ মুনসুরসহ চার ছাত্রকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রোববার কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এদিকে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সংঘর্ষের ঘটনায় সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় কলেজ ছাত্রলীগের ছয় নেতা বাদী হয়ে ২২৯ জনকে আসামি করে পৃথক ৬টি মামলা দায়ের করা করেছে। পুলিশ ছাত্রলীগ নেতা আবদুল জালাল, আজাহার, গোপাল কুমার সাহা ও রিপন সাহা নামের চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। অপরদিকে সংঘর্ষের ঘটনার পর গতকাল রোববার কলেজে কোনো ক্লাস হয়নি। হলগুলো খোলা থাকলেও অনেকে বাইরে চলে গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
গত শনিবার খুমেক ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি সাইফুল্লাহ মুনসুর গ্রুপের কর্মীদের সঙ্গে প্রতিপক্ষ সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান টিটু গ্রুপের কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে চাপাতি, রামদাসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র ও লাঠি-সোটার আঘাতে সাধারণ শিক্ষার্থীসহ অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়। এর মধ্যে গুরুতর আহত তিন জনকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তাদের অবস্থা সংকটাপন্ন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় ছয় ছাত্রলীগ নেতা বাদী হয়ে পৃথক ৬টি মামলা করেছে। শনিবার রাতে প্রথম মামলাটি করেন কলেজের প্রফুল্ল চন্দ্র রায় হোস্টেলের ছাত্র বিভাস চন্দ্র দাস। ওই মামলায় ২৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১৫০ জনকে আসামি করা হয়। একই হোস্টেলের সাদমান রহমান সিদ্দিকী বাদী হয়ে ২৬ জনসহ আরও অজ্ঞাত ২০ জনের নামে, এসএম ওবায়েদুর রহমান বাদী হয়ে ৫ জনের নামে, একেএম মঞ্জুরুল আহসান ৬ জনের নামে, সালাউদ্দিন ইউসুফ ৫ জনের নামসহ অজ্ঞাত আরও ৬ জনের নামে এবং সাইদুর রহমান অজ্ঞাত ৫ জনসহ আরও ৬ জনের নামে মামলা করেছেন। বিভাস চন্দ্র দাসের করা মামলার আসামি ছাত্রলীগ নেতা আবদুল জালাল, আজাহার, গোপাল কুমার সাহা ও রিপন সাহাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল রোববার দুপুরে কলেজের অধ্যক্ষের কার্যালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজান, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার সোনালী সেন, সোনাডাঙ্গা থানার ওসি সুকুমার বিশ্বাস এবং কলেজের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ আল মাহবুব জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্যাম্পাসে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সংঘর্ষের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কলেজের ছাত্র সাইফুল্লাহ মানসুর, অনিন্দ্য সুন্দর, সাকিউল ইসলাম ও রাসেলকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশও দেয়া হবে। তিনি জানান, ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যদের নাম পরবর্তীতে জানানো হবে। কমিটিকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হবে।
খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক শাহীন আলম জানিয়েছেন, সংঘর্ষের ঘটনার পর খুলনা মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সকল রাজনৈতিক কার্যক্রম (মিছিল-মিটিং-সমাবেশ) সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী বিবৃতি না দেয়া পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। খুলনা মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সব নেতাকর্মীকে খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের নির্দেশ মানতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
পুলিশের সহকারী কমিশনার সোনালী সেন জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এছাড়া রাতে কলেজের নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মীদের সতর্কভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য মুহাম্মদ মিজানুর রহমান মিজান জানান, অতীতে কখনো খুমেকে এতো সহিংসতা হয়নি। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকুমার বিশ্বাস বলেন, ছাত্রলীগ দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় শনিবার রাতে পৃথক ৬টি মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় এজহারভুক্ত চার আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
ছাত্রলীগের সংবাদ সম্মেলন:  সংঘর্ষের ঘটনায় রোববার দুপুর ২টায় খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে মহানগর ছাত্রলীগ। সেখানে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ শাহজালাল হোসেন সুজন ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রাসেল দাবি করেন, মেডিকেল কলেজে সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বহিরাগতরা এই সংঘর্ষের জন্য দায়ী। তবুও ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মী এর সঙ্গে জড়িত কিনা তা খুঁজে বের করতে মহানগর কমিটির সহসভাপতি রেজাউল করিম সবুজকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তারা বলেন, বিভিন্ন পত্রিকায় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের বিরোধের কথা বলা হয়েছে, তাও সত্য নয়। কারণ, সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। সংঘর্ষের ঘটনায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *