‘দোয়া করিস। হাশরের ময়দানে দেখা হবে।’ বোন কাজী তাসনিমকে এই বলে গত এপ্রিলে ঘর ছাড়ে যশোরের মাইকেল মধুসূদন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র কাজী ফজলে রাব্বী। গতকাল রোববার তাসনিম যশোর শহরের কিসমত নওয়াপাড়ায় ‘মদিনা মঞ্জিলে’ সাংবাদিকদের তা জানান। এ সময় তিনি বলেন, ভাই আরো বলেছিল, ‘মা-বাবাকে তোরা (দু’বোন) দেখে রাখিস।’ রাব্বী গত শনিবার নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় অপারেশন হিট স্ট্রং-২৭ এর গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে নিহত হয়। সে যশোর উপশহর ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ কাজী হাবিবুল্লাহর ছেলে। অভিযানে নিহত অপর জঙ্গিরও পরিচয়ও পাওয়া গেছে। তার নাম তাওসিফ হাসান। মালয়েশিয়ার মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তাওসিফ গুলশানে হলি আর্টিজানে অভিযানে নিহত হওয়া নিবরাস ইসলামের সঙ্গে দেশে এসে গত ৩রা ফেব্রুয়ারি থেকে নিখোঁজ হয়। রেস্টুরেন্টে যাওয়ার নাম করে ধানমন্ডির ২৪ নম্বর রোডের ১৯/২ নম্বর বাড়ির এ-৪ ফ্ল্যাট থেকে বের হয় সে। রাজধানীর ওই বাসায় বাবা ডা. আজমল হোসেন ও মায়ের সঙ্গে থাকতো তাওসিফ।
নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার জঙ্গি আস্তানায় মাস্টারমাইন্ড তামিম আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে নিহত এ দু’জনই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া। র্যাব-পুলিশের তালিকায়ও তারা ছিল নিখোঁজ। সন্ধান চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) এবং বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও পরিবারে জীবিত ফিরেনি দু’বিপথগামী। নারায়ণগঞ্জে তাদের মৃত্যুর খবর শুনে গতকাল শনিবার বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন স্বজনরা। দুপুরে ময়নাতদন্তের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে রাখা লাশ দেখতে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ যাননি।
গতকাল সকালে যশোর উপশহর বিরামপুরে নিহত রাব্বীর বাড়ি ‘মদিনা মঞ্জিলে’ গিয়ে দেখা গেছে থমথমে পরিবেশ। তার বাবা, মা ও বোনের চোখে-মুখে শোকের ছায়া। স্থানীয়রা রাব্বীর বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছে। সবার মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। সবার মধ্যে অজানা ভয়। সহজে কেউ কথা বলছে না। শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে রাব্বী নিহত হয়েছে এমন তথ্য পরিবারে আসছিল বিভিন্ন সূত্র থেকে। কিন্তু নিশ্চিত হতে পারছিলেন না। রাতে কিছুটা নিশ্চিত হয় পরিবার। সকালে সংবাদ মাধ্যমে রাব্বীর ছবি দেখে ছেলের মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত হন মা রওশনারা আফরোজ। নিহত রাব্বীর দুই বোন কাজী ফেরদৌসি ও কাজী তাসনিম বিবাহিত। গত মাসে যশোর পুলিশ যে পাঁচজনকে জঙ্গি হিসেবে সাব্যস্ত করে পোস্টার ছেপেছিল, ফজলে রাব্বির নাম ও ছবি সেই তালিকায় দ্বিতীয় নাম্বারে ছিল। গত ৫ই এপ্রিল রাব্বী বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে। এরপর তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।
গত শনিবার সন্ধ্যায় রাব্বীর পিতা কাজী হাবিবুল্লাহ জানান, গত ৫ই এপ্রিল সকালে তার ছেলে জামা-কাপড় নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। বাড়ি ছাড়ার আগে রাব্বী কলেজ থেকে সমস্ত কাগজপত্র তুলে নেয় বলে তিনি পরে জানতে পেরেছেন। কাজী হাবিবুল্লাহ ছেলে নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে গত ৭ই এপ্রিল যশোর কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। জিডি নম্বর ৩৬০/২০১৬। ছেলেকে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছিলেন। ফজলে রাব্বীর ব্যাপারে খোঁজ নেয়া হয় তার বাড়ির এলাকায়। প্রতিবেশীরা জানান, রাব্বী এলাকার ছেলেদের সঙ্গে খুব একটা মিশতো না। গত ঈদের দিন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ফজলে রাব্বীর বাড়িতে গিয়ে তার সম্বন্ধে তথ্য জানার চেষ্টা করেন।
গতকাল বিকালে যশোর শহরের কিসমত নওয়াপাড়ায় ‘মদিনা মঞ্জিলে’ গিয়ে নিহত রাব্বীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে পরিবারের সঙ্গে রাব্বীর শেষ কথা। তার বোন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার ভাই জঙ্গি ছিল তার বিচার রাষ্ট্র করেছে তাতে আমাদের দুঃখ নেই। কিন্তু নিষ্পাপ এসব ছাত্রদের যারা ভুল বুঝিয়ে ইসলামের নাম ব্যবহার করে বিপথগামী করছে আমরা তাদের শাস্তি চাই’। যে ইমাম রাব্বীকে এই জঙ্গি পথে ধাবিত করেছে তাকে আটক করে বিচার করতে হবে। তাহলে আমাদের আত্মা শান্তি পাবে। নিহত রাব্বীর পিতা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কাজী হাবিবুল্লাহ নির্বাক। তার মুখে কোনো কথা নেই। আর রাব্বীর মা বার বার মূর্চ্ছা যাচ্ছিলেন। সকাল থেকে বিভিন্নভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় রাব্বীর বাবা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কাজী হাবিবুল্লাহর সঙ্গে। ‘মদিনা মঞ্জিল’ নামে যশোর শহরতলীর কিসমত নওয়াপাড়া এলাকার দোতলা এই বাসভবনের উপর তলায় তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। নিচতলা ভাড়া দেয়া। অনেক অনুরোধ করার পর তিনি নিচতলায় নামেন। কিন্তু ক্যামেরার সামনাসামনি হননি। বাকরুদ্ধ কণ্ঠে তিনি দুই চারটি কথা বলেন। এসময় তিনি বার বার মূর্চ্ছা যাচ্ছিলেন। কাঁন্নায় ভেঙে পড়ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমার একমাত্র ছেলে বিভ্রান্তিতে পড়ে মারা গেছে। শনিবার বিকালে আমি খবরটি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আফজাল ভাইয়ের মাধ্যমে জানতে পারি। তার বিষয়ে রিপোর্ট করেন, আমার কোনো সমস্যা নেই। তবে, আমার ছেলেকে যারা জঙ্গি বানিয়েছে, সরকার তাদের কেন ধরছে না?’
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ যশোর সদর উপজেলা কমিটির ডেপুটি কমান্ডার আফজাল হোসেন দোদুল বলেন, ‘রাব্বী এপ্রিলের প্রথমদিকে বাড়ি থেকে চলে যায়। তার চলে যাওয়ার পর কাজী হাবিবুল্লাহকে থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে আমি সহায়তা করেছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘গত রাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জে নিহত একজনের ছবি দেয়া হয় আমার কাছে। আমি ছবিটি তার বাবাকে দেখাই। উনি ছবিটি তার ছেলে রাব্বীর বলে শনাক্ত করেন। তিনি ছবিটি দেখে মর্মাহত হয়েছেন এবং ভেঙে পড়েছেন। তিনি আমাকে জানিয়েছেন, যারা তার ছেলেকে জঙ্গি বানিয়েছে, সরকার যেন তাদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়।’
এসব বিষয়ে যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বলেন, ‘এই ছেলেটা যাওয়ার পরে তার বাবা জিডি করেন। প্রথমদিকে তিনি বলেছিলেন, বাড়ি থেকে না বলে চলে যায়। কিন্তু ডিএসবি থেকে আমরা রিপোর্ট পেয়েছি, সে জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে চলে যাওয়ার বিষয়ে বাড়িতে বলে যায়। তার বাবা-মা পরে তাকে ফিরিয়ে আনার বহু চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।’
এদিকে গুলশানে নিহত নিবরাস ইসলামের সঙ্গে গত নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মালয়েশিয়া থেকে একই বিমানে দেশে ফিরেন শনিবার নারায়ণগঞ্জে নিহত তাওসিফ হোসেন। গত ৩রা ফেব্রুয়ারি নিখোঁজ হন নিবরাস ইসলাম। একই দিন ধানমন্ডির ২৪ নম্বর সড়কের ১৯/২ নম্বর বাসার এ-৪ ফ্ল্যাট থেকে রেস্টুরেন্টে যাওয়ার নামে বের হয়ে নিখোঁজ হন তাওসীফ। এ ঘটনায় তাওসিফ হোসেনের পিতা ডা. আজমল হোসেন ধানমন্ডি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নম্বর-১৩৪) করেন। ওই জিডি তদন্তের দায়িত্ব পড়ে একই থানার পরিদর্শক তদন্ত মো. হেলাল উদ্দিনের উপর। তিনি মানবজমিনকে বলেন, জিডির পর একাধিকবার তাদের বাসায় যাওয়া হয়েছে। মা-বাবার সঙ্গে কথা হয়েছে। নিবরাস ও তাওসিফ মালয়েশিয়ার মোনাস ইউনির্ভাসিটিতে পড়তো। একই ফ্লাইটে তারা দেশে এসে একই সঙ্গে বাসা থেকে নিখোঁজ হয়। জিডির সূত্র ধরে আমি তাদের অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। গুলশানে নিবরাস নিহত হওয়ার পর আমার ধারণা জন্মেছিল তাওসিফও একইভাবে বিপথে গেছে। শেষে তাই প্রমাণ হলো।
এদিকে র্যাবের প্রকাশ করা সর্বশেষ নিখোঁজ তালিকায় তাওসিফের নাম ৭ নম্বরে ছিল। ম্যাপেললিফ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে ও লেভেল এবং এ লেভেল সম্পন্ন করা তাওসিফ উচ্চ শিক্ষার জন্য মালয়েশিয়ার মোনাস ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিল। গুলশানে নিহত নিবরাস ইসলাম, শোলাকিয়ায় হামলার পর পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত আবীর রহমান এবং কল্যাণপুরে পুলিশি অভিযানে নিহত শেহজাদ রউফ অর্কও প্রায় একই সময়ে বাড়ি ছেড়েছিলেন বলে তাদের পরিবারের ভাষ্য। গত ১লা জুলাই গুলশানে হামলার আগে ঢাকার এই চার তরুণই ঝিনাইদহের একটি মেসে ছিল বলে গত জুলাইয়ের শেষ দিকে জানতে পেরেছিলেন জঙ্গি-তদন্তে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার জঙ্গি আস্তানায় মাস্টারমাইন্ড তামিম আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে নিহত এ দু’জনই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া। র্যাব-পুলিশের তালিকায়ও তারা ছিল নিখোঁজ। সন্ধান চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) এবং বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও পরিবারে জীবিত ফিরেনি দু’বিপথগামী। নারায়ণগঞ্জে তাদের মৃত্যুর খবর শুনে গতকাল শনিবার বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন স্বজনরা। দুপুরে ময়নাতদন্তের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে রাখা লাশ দেখতে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ যাননি।
গতকাল সকালে যশোর উপশহর বিরামপুরে নিহত রাব্বীর বাড়ি ‘মদিনা মঞ্জিলে’ গিয়ে দেখা গেছে থমথমে পরিবেশ। তার বাবা, মা ও বোনের চোখে-মুখে শোকের ছায়া। স্থানীয়রা রাব্বীর বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছে। সবার মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। সবার মধ্যে অজানা ভয়। সহজে কেউ কথা বলছে না। শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে রাব্বী নিহত হয়েছে এমন তথ্য পরিবারে আসছিল বিভিন্ন সূত্র থেকে। কিন্তু নিশ্চিত হতে পারছিলেন না। রাতে কিছুটা নিশ্চিত হয় পরিবার। সকালে সংবাদ মাধ্যমে রাব্বীর ছবি দেখে ছেলের মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত হন মা রওশনারা আফরোজ। নিহত রাব্বীর দুই বোন কাজী ফেরদৌসি ও কাজী তাসনিম বিবাহিত। গত মাসে যশোর পুলিশ যে পাঁচজনকে জঙ্গি হিসেবে সাব্যস্ত করে পোস্টার ছেপেছিল, ফজলে রাব্বির নাম ও ছবি সেই তালিকায় দ্বিতীয় নাম্বারে ছিল। গত ৫ই এপ্রিল রাব্বী বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে। এরপর তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।
গত শনিবার সন্ধ্যায় রাব্বীর পিতা কাজী হাবিবুল্লাহ জানান, গত ৫ই এপ্রিল সকালে তার ছেলে জামা-কাপড় নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। বাড়ি ছাড়ার আগে রাব্বী কলেজ থেকে সমস্ত কাগজপত্র তুলে নেয় বলে তিনি পরে জানতে পেরেছেন। কাজী হাবিবুল্লাহ ছেলে নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে গত ৭ই এপ্রিল যশোর কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। জিডি নম্বর ৩৬০/২০১৬। ছেলেকে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছিলেন। ফজলে রাব্বীর ব্যাপারে খোঁজ নেয়া হয় তার বাড়ির এলাকায়। প্রতিবেশীরা জানান, রাব্বী এলাকার ছেলেদের সঙ্গে খুব একটা মিশতো না। গত ঈদের দিন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ফজলে রাব্বীর বাড়িতে গিয়ে তার সম্বন্ধে তথ্য জানার চেষ্টা করেন।
গতকাল বিকালে যশোর শহরের কিসমত নওয়াপাড়ায় ‘মদিনা মঞ্জিলে’ গিয়ে নিহত রাব্বীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে পরিবারের সঙ্গে রাব্বীর শেষ কথা। তার বোন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার ভাই জঙ্গি ছিল তার বিচার রাষ্ট্র করেছে তাতে আমাদের দুঃখ নেই। কিন্তু নিষ্পাপ এসব ছাত্রদের যারা ভুল বুঝিয়ে ইসলামের নাম ব্যবহার করে বিপথগামী করছে আমরা তাদের শাস্তি চাই’। যে ইমাম রাব্বীকে এই জঙ্গি পথে ধাবিত করেছে তাকে আটক করে বিচার করতে হবে। তাহলে আমাদের আত্মা শান্তি পাবে। নিহত রাব্বীর পিতা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কাজী হাবিবুল্লাহ নির্বাক। তার মুখে কোনো কথা নেই। আর রাব্বীর মা বার বার মূর্চ্ছা যাচ্ছিলেন। সকাল থেকে বিভিন্নভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় রাব্বীর বাবা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কাজী হাবিবুল্লাহর সঙ্গে। ‘মদিনা মঞ্জিল’ নামে যশোর শহরতলীর কিসমত নওয়াপাড়া এলাকার দোতলা এই বাসভবনের উপর তলায় তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। নিচতলা ভাড়া দেয়া। অনেক অনুরোধ করার পর তিনি নিচতলায় নামেন। কিন্তু ক্যামেরার সামনাসামনি হননি। বাকরুদ্ধ কণ্ঠে তিনি দুই চারটি কথা বলেন। এসময় তিনি বার বার মূর্চ্ছা যাচ্ছিলেন। কাঁন্নায় ভেঙে পড়ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমার একমাত্র ছেলে বিভ্রান্তিতে পড়ে মারা গেছে। শনিবার বিকালে আমি খবরটি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আফজাল ভাইয়ের মাধ্যমে জানতে পারি। তার বিষয়ে রিপোর্ট করেন, আমার কোনো সমস্যা নেই। তবে, আমার ছেলেকে যারা জঙ্গি বানিয়েছে, সরকার তাদের কেন ধরছে না?’
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ যশোর সদর উপজেলা কমিটির ডেপুটি কমান্ডার আফজাল হোসেন দোদুল বলেন, ‘রাব্বী এপ্রিলের প্রথমদিকে বাড়ি থেকে চলে যায়। তার চলে যাওয়ার পর কাজী হাবিবুল্লাহকে থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে আমি সহায়তা করেছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘গত রাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জে নিহত একজনের ছবি দেয়া হয় আমার কাছে। আমি ছবিটি তার বাবাকে দেখাই। উনি ছবিটি তার ছেলে রাব্বীর বলে শনাক্ত করেন। তিনি ছবিটি দেখে মর্মাহত হয়েছেন এবং ভেঙে পড়েছেন। তিনি আমাকে জানিয়েছেন, যারা তার ছেলেকে জঙ্গি বানিয়েছে, সরকার যেন তাদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়।’
এসব বিষয়ে যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বলেন, ‘এই ছেলেটা যাওয়ার পরে তার বাবা জিডি করেন। প্রথমদিকে তিনি বলেছিলেন, বাড়ি থেকে না বলে চলে যায়। কিন্তু ডিএসবি থেকে আমরা রিপোর্ট পেয়েছি, সে জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে চলে যাওয়ার বিষয়ে বাড়িতে বলে যায়। তার বাবা-মা পরে তাকে ফিরিয়ে আনার বহু চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।’
এদিকে গুলশানে নিহত নিবরাস ইসলামের সঙ্গে গত নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মালয়েশিয়া থেকে একই বিমানে দেশে ফিরেন শনিবার নারায়ণগঞ্জে নিহত তাওসিফ হোসেন। গত ৩রা ফেব্রুয়ারি নিখোঁজ হন নিবরাস ইসলাম। একই দিন ধানমন্ডির ২৪ নম্বর সড়কের ১৯/২ নম্বর বাসার এ-৪ ফ্ল্যাট থেকে রেস্টুরেন্টে যাওয়ার নামে বের হয়ে নিখোঁজ হন তাওসীফ। এ ঘটনায় তাওসিফ হোসেনের পিতা ডা. আজমল হোসেন ধানমন্ডি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নম্বর-১৩৪) করেন। ওই জিডি তদন্তের দায়িত্ব পড়ে একই থানার পরিদর্শক তদন্ত মো. হেলাল উদ্দিনের উপর। তিনি মানবজমিনকে বলেন, জিডির পর একাধিকবার তাদের বাসায় যাওয়া হয়েছে। মা-বাবার সঙ্গে কথা হয়েছে। নিবরাস ও তাওসিফ মালয়েশিয়ার মোনাস ইউনির্ভাসিটিতে পড়তো। একই ফ্লাইটে তারা দেশে এসে একই সঙ্গে বাসা থেকে নিখোঁজ হয়। জিডির সূত্র ধরে আমি তাদের অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। গুলশানে নিবরাস নিহত হওয়ার পর আমার ধারণা জন্মেছিল তাওসিফও একইভাবে বিপথে গেছে। শেষে তাই প্রমাণ হলো।
এদিকে র্যাবের প্রকাশ করা সর্বশেষ নিখোঁজ তালিকায় তাওসিফের নাম ৭ নম্বরে ছিল। ম্যাপেললিফ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে ও লেভেল এবং এ লেভেল সম্পন্ন করা তাওসিফ উচ্চ শিক্ষার জন্য মালয়েশিয়ার মোনাস ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিল। গুলশানে নিহত নিবরাস ইসলাম, শোলাকিয়ায় হামলার পর পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত আবীর রহমান এবং কল্যাণপুরে পুলিশি অভিযানে নিহত শেহজাদ রউফ অর্কও প্রায় একই সময়ে বাড়ি ছেড়েছিলেন বলে তাদের পরিবারের ভাষ্য। গত ১লা জুলাই গুলশানে হামলার আগে ঢাকার এই চার তরুণই ঝিনাইদহের একটি মেসে ছিল বলে গত জুলাইয়ের শেষ দিকে জানতে পেরেছিলেন জঙ্গি-তদন্তে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।