তিন দিনের ব্যবধানে পৃথক ৩ খুনের ঘটনায় আতঙ্ক সিলেটে। তুচ্ছ কারণেই ঘটেছে সিলেটের এলিগ্যান্ট মার্কেটের ব্যবসায়ী করিম বক্স মামুন ও লালাবাজারের ব্যবসায়ী আজির উদ্দিন খুনের ঘটনা। আর ভিআইপি রোডে লোমহর্ষকভাবে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে সাবেক সিটি কাউন্সিলর শানুর স্বামী তাজুল ইসলামকে। আর এই তিনটি ঘটনায় এখন ক্ষোভের অন্ত নেই। খুনিদের গ্রেপ্তার দাবিতে এখন উত্তাল সিলেট। তিন খুনের ঘটনায় প্রতিদিন সিলেটে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এই কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তিন হত্যাকাণ্ডের মূল হোতারা ধরা পড়েনি এক সপ্তাহেও। গতকাল সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের এলিগ্যান্ট মার্কেটের ব্যবসায়ী মামুন খুনের মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশে ও ভিআইপি রোডে তাজুল খুনের ঘটনাটি পিবিআইতে স্থানান্তর করা হয়েছে। সিলেটের ব্যবসায়ী করিম বক্স মামুন, আজির উদ্দিন ও তাজুল ইসলাম খুনের ঘটনা ঘটে ১৬ থেকে ২০শে আগস্টের মধ্যে। পরপর তিনটি ঘটনায় হতবাক সিলেটবাসী। জিন্দাবাজারের এলিগ্যান্ট মার্কেটের ব্যবসায়ী করিম বখত মামুন খুনের ঘটনা ঘটে ১৬ই আগস্ট বিকালে। এদিন সিলেট জেলা ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সহ-সভাপতি সোলেমান হোসেন মোটরসাইকেল পার্কিং করতে আসেন এলিগ্যান্ট মার্কেটের সামনে। মোটরসাইকেল পার্কিংকে কেন্দ্র করে মার্কেটের গার্ডদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন সোলেমান। আর দৃশ্য দেখে এগিয়ে আসেন ব্যবসায়ী মামুন। তর্কাতর্কির একপর্যায়ে সোলেমান ও তার সহযোগীরা মামুনকে ছুরিকাঘাত করে। এতে গুরুতর আহত মামুনকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাতে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন ব্যবসায়ী ও পার্শ্ববর্তী জল্লাপাড় এলাকার বাসিন্দারা। এ ঘটনার প্রতিবাদে ইতিমধ্যে সিলেটের ব্যবসায়ীরা ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন। এর আগে তারা দোকানপাট বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানান। ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সিলেট মহানগর সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, সিলেটের ব্যবসায়ীদের আলটিমেটাম শেষ হয়েছে। আজ-কালের মধ্যে তারা বৈঠকে বসবেন। পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবেন। তিনি বলেন, সিলেটের ব্যবসায়ীরা নিরাপদ নয়। তবে, পুলিশ এখন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। নিহত ব্যবসায়ী মামুনের বাড়ি জল্লারপাড়ে। এ ঘটনার প্রতিবাদে জল্লারপাড়ের লোকজনও আন্দোলনে রয়েছেন। জল্লারপাড়ের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের নেতা এহসানুল হক তাহের জানিয়েছেন, মামুন খুনের ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয়রা প্রায় প্রতিদিনই এলাকায় কর্মসূচি পালন করছেন। তিনি বলেন, খুনিদের গ্রেপ্তার না করলে আন্দোলন চলতেই থাকবে। এলিগ্যান্ট মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির আহ্বায়ক ফয়জুল হাসান জানিয়েছেন, পুলিশ এ ঘটনায় মূল ঘাতকদের এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এ ঘটনার পরপরই ১৯শে আগস্ট সিলেট শহরতলির লালাবাজারে ১৯শে আগস্ট ঘটে আরেক খুনের ঘটনা। ওই দিন রাতে লালাবাজারের ফার্মেসি ব্যবসায়ী আজিরউদ্দিনকে নির্মমভাবে কুপিয়ে খুন করে ঘাতকরা। এক ডাক্তারের প্রাইভেট কার পার্কিংকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ভরাউট গ্রামের যুবলীগ নেতা রিয়াজ ও তার সহযোগী আজাদ, নানু ও শাহাবউদ্দিন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের লালাবাজারে লোহার রড দিয়ে পিঠিয়ে খুন করে ব্যবসায়ী রিয়াজকে। এ ঘটনায় ঘটনায় ক্ষুব্ধ লালাবাজার ও টেংরা এলাকাবাসী আন্দোলনে রয়েছেন। ইতিমধ্যে অলংকারী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান লিলু মিয়ার নেতৃত্বে প্রায় দুই ঘটনা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করা হয়েছে। এ ঘটনায় প্রতিদিনই এলাকায় নানা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় স্থানীয় এলাকাবাসীর উদ্যোগে বটেরতল এলাকায় প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। আজ শনিবার এলাকাবাসীর উদ্যোগে লালাবাজারে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। নিহতের স্বজন ও যুবদল নেতা রানা মিয়া জানিয়েছেন, তুচ্ছ ঘটনায় ব্যবসায়ী আজির উদ্দিনকে যেভাবে খুন করা হয়েছে সেটি গ্রহণযোগ্য নয়। এ কারণে এলাকার মানুষ ক্ষোভ থেকে আন্দোলনে রয়েছেন। টেংরা এলাকার বাসিন্দা ও সিলেট জেলা যুবলীগ নেতা সিতার মিয়া জানিয়েছেন, ঘটনার পর ৯ জনকে আসামি করা হয়েছে কিন্তু পুলিশ এখন মূল ঘাতকদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এ কারণে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে বলে জানান তিনি। ২০শে আগস্ট সিলেট নগরীর খুলিয়াপাড়ার সাবেক সিটি কাউন্সিলর শানুর স্বামী তাজুল ইসলাম খুনের ঘটনাটি লোকহর্ষক। ঘাতকরা নতুন স্টাইলে চোখে চুন ও মরিচ মেশানো পানি ছিটিয়ে তাজুলকে কুপিয়ে নির্মমভাবে খুন করে। তাজুলের দুটি পা-ই শরীর থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় অংশ নিয়েছিল পেশাদার কিলাররা। কিন্তু পুলিশ ঘটনার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখন গ্রেপ্তার করতে পারেনি কাউকে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী গতকাল ভিআইপি রোডের গরম দেওয়ান মাজারের সামনে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। এ সময় খুলিয়াপাড়া, শেখঘাট, কুয়ারপাড়, শেখপাড়াসহ কয়েকটি এলাকার সাধারণ মানুষ অংশ নেন। সমাবেশ শেষে নিহত তাজুলের বড় ভাই নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রকাশ্য এ লোমহর্ষক খুনের ঘটনা ঘটলেও পুলিশ এখনও খুনের মিশনে অংশ নেয়া কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। খুনি কাউকে এখনও গ্রেপ্তার না করা দুঃখজনক ঘটনা। এ কারণে ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষ আন্দোলনে নেমেছেন বলে দাবি করেন তিনি। পুলিশ এ ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে, পেশাদার কিলারদের কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। এ খুনের ঘটনার প্রায় দুই বছর আগে নিহত তাজুলের ছোট ছেলে সোহান ইসলামকে কুপিয়ে খুন করা হয়। সিলেট মহানগর পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) মো. রহমতুল্লাহ গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, তাজুল খুনের ঘটনার তদন্তে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইর কাছে তদন্ত দেয়া হয়েছে। পুলিশ ইতিমধ্যে তদন্তভার পিবিআইকে সমঝে দেয়া হয়েছে। আর ব্যবসায়ী মামুন খুনের ঘটনাটি তদন্ত করছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তিনি বলেন, পুলিশ ঘাতকদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে। সিলেটের দক্ষিণ সুরমার ওসি আতাউর রহমান জানিয়েছেন, পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারে সচেষ্ট রয়েছে। মামলা দায়েরের পর থেকে সব আসামি গা ঢাকা দিয়েছে বলে জানান তিনি।