‘আমারে মাইরো না গো আব্বা’

Slider নারী ও শিশু

28766_Z2

 

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রিপা। সমস্থ শরীরে নিষ্ঠুরতার চিহ্ন। ডান হাতে কব্জিসহ সমস্ত হাতই ক্ষতিগ্রস্থ। বাম হাতের কব্জিও কাটা। পেটের অনেকখানি জায়গা কেটে গেছে। এতটুকুন শরীরে যে আঘাত তা সইবার ক্ষমতা তার নেই। চিকিৎসকরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন রিপাকে সুস্থ করে তুলতে। রিপার শরীর থেকে অনেক রক্ত গেছে। পুলিশ সদস্যসহ অনেকেই রক্ত দান করেছেন হতভাগা মেয়েটির জন্য। পিতা-মাতার নির্মম পাশবিকতার শিকার রিপা (৩)। সে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধিন। গত ২৮ আগষ্ট চুনারুঘাটের জারুলিয়া (মাইজগাও) পল্লীতে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ৭ মাসের শিশু রিপার বোন নিপা কে কুপিয়ে হত্যা করে তার বাবা লিটন মিয়া। রিপাকে কুপিয়ে জখম করে পাষণ্ড ওই পিতা। ঘটনাস্থলেই মারা যায় নিপা। নাড়ী-ভুড়ি বের হয়ে যাওয়া মারাত্মক আহত রিপাকে স্থানীয়রা হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠান। খবর পেয়ে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র হাসপাতালে গিয়ে আহত শিশুর জবানবন্দি নেন এবং তাকে পুলিশী পাহারায় সিলেট এমএজি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠান। এখানে রিপার চিকিৎসা চলছে। ডাক্তাররা বলছেন, রিপার শরীরে ৪টি গুরুতর আঘাত রয়েছে। এতটুকু শিশুর শরীরে ওই আঘাত খুবই বিপজ্জনক। আহত রিপা মাঝে মধ্যে ‘আব্বা আমারে মাইরোনা’ বলে প্রলাপ বকছে। ভয়ে সে আঁৎকে উঠে বার বার। টিকিৎসকরা তার ভয় ও ক্ষত সারাতে প্রাণপন চেষ্টা করছেন। পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র বলেন, মানুষ এতো নিষ্টুর হয় কিভাবে। তিনি বলেন, রিপার শরীরে যে আঘাতগুলো করা হয়েছে তা খুবই ভয়াবহ। এরপরও রিপা বর্ণনা করেছে সেদিনের রাতের ঘটনা। পুলিশ ও এলকাবাসি  জানায়, ২০ আগষ্ট সীমান্তের জারুলিয়া গ্রামের রফিক মিয়াদের সাথে কুখ্যাত লিটন মিয়ার ঝগড়া হয় মাছ ধরা নিয়ে। ওই ঘটনায় রফিক মিয়া পক্ষের ৪ ব্যক্তি আহত হন। এরপর থেকে রফিক মিয়াদের ফাঁসাতে নানা ধরনের পরিকল্পনা করে লিটন। ঘটনার রাতে লিটনের স্ত্রী মিলন বেগম শিশু কন্যা রিপা ও নিপাকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত প্রায় ২ টার সময় লিটন ঘরে প্রবেশ করে স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হয়। এরপরই অতর্কীত আক্রমণ চালায় শিশুর উপর। প্রথমেই সে ছোট শিশু নিপাকে কুপিয়ে হত্যা করে। পরে দা চালায় রিপার উপর। উভয় শিশু মারা গেছে মনে করে সে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় এবং স্ত্রী মিলনকে পরিকল্পনার কথা জানিয়ে দেয়। সে মোতাবেক স্ত্রী মিলন বেগম ওই হত্যাকা-টি প্রতিপক্ষ রফিক মিয়ারা করেছে বলে প্রচার শুরু করে। লোমহর্ষক এ ঘটনার খবর পেয়ে পরদিন সোমবার সকালে চুনারুঘাট থানার ওসি ও ডিবি পুলিশকে সাথে নিয়ে পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি জানান, আহত রিপা এ হত্যাকান্ডের বিষয়ে সুস্পষ্ট জবান বন্দি দিয়েছে। তার বোনকে মা-বাবা খুন করেছে বলে জানিয়েছে রিপা। এ ঘটনায় পুলিশ, মা মিলন বেগম, শাশুড়ী খুদেজা খাতুন ও প্রতিবেশী মীর মর্তুজাকে আটক করেছে। এ হত্যাকা-ে বিষয়ে পুলিশ বাদি হয়ে মামলাও করেছে। চুনারুঘাট থানার ওসি নির্মলেন্দু চক্রবর্তী বলেন, সর্ব্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে এ মামলাটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *