বিয়ের পর ঘর সামলাবেন মহিলারা। আর সংসারের আর্থিক দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেবেন পুরুষরা। একবিংশ শতকেও ভারতের অধিকাংশ রাজ্যে এখনও এই প্রত্যাশা নিয়ে চলছে সমাজ। আমাদের রাজ্যে এই বিভেদ অনেক কম হলেও এখনও বাঙালিদের বিয়েতে পালন করা হয় ভাত-কাপড়ের ভার গ্রহণ করার রীতি। আর এই একা সংসার চালানোর দায়বদ্ধতায় ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন পুরুষরা। জানাচ্ছে নতুন এক সমীক্ষা।
অন্য দিকে, দেখা গিয়েছে পরিবারের আর্থিক দায়িত্ব মহিলাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে। মধ্যবিত্ত পরিবারে রোজগার করেও অনেক ক্ষেত্রে মহিলাদের সংসারের দায়িত্ব নিতে দেওয়া হয় না। সংসারে আর্থিক অবদান থাকলেও স্বামীর রোজগারই যে মূল, যার কাছে তাদের রোজগার অনেকটাই কম গুরুত্বপূর্ণ, এমনটা মেনে নিয়েই সংসার করেন অধিকাংশ মহিলা।
আর্থিক দায়বদ্ধতার সঙ্গে স্বাস্থ্য ও দাম্পত্য সম্পর্ক নিয়ে ১৫ বছর ধরে সমীক্ষা চালান কানেকটিকাট ইউনিভার্সিটি-র অ্যাসিট্যান্ট প্রফেসর ক্রিস্টিন মান্স। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে একা পরিবারের আর্থিক দায়িত্ব মাথায় নিতে নিতে পুরুষদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ক্রমশ ভেঙে প়়ড়তে থাকে। অন্য দিকে, দেখা গিয়েছে মহিলারা যত বেশি পরিবারের আর্থিক দায় নেন, তত তাঁরা মানসিক ও শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকেন। আর্থিক দায়িত্ব নেওয়া মহিলাদের শারীরিক স্বাস্থ্য আর্থিক ভার নেওয়া পরুষদের তুলনায় সাড়ে তিন শতাংশ বেশি ভাল, মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে এই হিসেবে প্রায় ৫ শতাংশের হেরফের।
এই বিষয় মান্স বলেন, ‘‘আমরা সকলেই জানি বিয়ের ক্ষেত্রে লিঙ্গ একটা বড় বিষয়। এ ক্ষেত্রে মেয়েদের সব সময়ই কম গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু, তার ফলে যে ভাবে ছেলেদের উপর পরিবারের আর্থিক দায়ভার নেওয়ার সম্পূর্ণ প্রত্যাশা চাপিয়ে দেওয়া হয়, তা তাদের জন্যও ক্ষতিকারক। আশা করা হয়, স্ত্রী রোজগার করলেও স্বামীর রোজগার তার থেকে বেশি হতেই হবে। এবং তাঁকেই পরিবারের আর্থিক দায়িত্ব নিতে হবে। অন্য দিকে, মহিলাদের ক্ষেত্রে তাঁরা রোজগার করলেও প্রত্যাশা রাখা হয় না শুধুমাত্র তাঁদের রোজগারেই চলবে সংসার। তাই মহিলারা এই দায়িত্ব পেলে চাপে নয়, আনন্দের সঙ্গেই তা গ্রহণ করেন। পুরুষদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা বাধ্যতামূলক হওয়ায় অনেক সময়ই তা মানসিক চাপ তৈরি করে তাদের উপর।