জঙ্গিদের বিচারে দুই বিশেষ ট্রাইব্যুনাল হচ্ছে

Slider বাংলার আদালত

28597_f1

 

জঙ্গিদের বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত করতে সন্ত্রাসবিরোধী দুটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগের সম্মতিসহ এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। শিগগিরই ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল চালু হবে। গত ৯ই আগস্ট মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠকে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের ১২টি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে । আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত সরকারি আদেশ জারি করবে আইন ও বিচার বিভাগ। এরপরই কার্যক্রম শুরু হবে বিশেষ ট্রাইব্যুনালের। কার্যক্রম শুরুর আগে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ হবে।
এ বিষয়ে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক মানবজমিনকে বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় করা মামলা দ্রুত বিচারকার্য শেষ করতে দুটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হচ্ছে। যাতে অনুমোদন দিয়েছে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটি। কিছু প্রক্রিয়া শেষে ট্রাইব্যুনাল গঠনে সরকারি আদেশ জারি হবে। আইন ও বিচার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর সারা দেশের জেলখানাগুলোতে আটক জঙ্গিদের বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে দ্রুত দুটি ট্রাইব্যুনাল চালু করা হচ্ছে। যদিও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রক্রিয়াটি ২০১৩ সাল থেকে শুরু হয়। ওই সময় সাত বিভাগে সাতটি ট্রাইব্যুনাল গঠনের চিন্তা করা হয়। কিন্তু অর্থ বিভাগ থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের অনুমোদন দেয়ায় আপাতত দুটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল হবে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ দুই ট্রাইব্যুনালের জন্য ১২টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলা ও দায়রা জজ পদ মর্যাদার দুই জন বিচারক থাকবেন। এছাড়া সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর দুইটি, বেঞ্চ সহকারী দুইটি, আউটসোর্সিং গাড়ি চালক দুইটি, আউটসোর্সিং জারিকারক দুইটি ও এমএলএসএসের দুইটি আউটসোর্সিং পদ রয়েছে। এ ছাড়া দুইটি কার, দুইটি কম্পিউটার, দুইটি ফটোকপিয়ার ও দুইটি ফ্যাক্স মেশিন থাকবে। আইন ও বিচার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের মার্চে সাতটি সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও রংপুর বিভাগে ‘সন্ত্রাসবরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল’ গঠনের প্রস্তাব করা হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯’ এর ২৮(১) এবং ২৮(২) উপ- ধারা (১) বিধান অনুযায়ী এক বা একাধিক ‘সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্রুনাল’ গঠনের কার্যক্রম গ্রহণের জন্য অনুরোধ পায়। এর ভিত্তিতে একজন জেলা জজের সমন্বয়ে সাত বিভাগে সাতটি সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাবে জেলা ও দায়রা জজের সাতটি, সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটরের সাতটি, বেঞ্চ সহকারী সাতটি, গাড়িচালক সাতটি, জারিকারক ১৪টি ও এমএলএসএসের ১৪টি পদ রয়েছে। এ ছাড়া সাতটি সিডান কার, সাতটি কম্পিউটার, সাতটি ফটোকপিয়ার মেশিন ও সাতটি ফ্যাক্স মেশিন কেনার কথা বলা হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, সাতটি সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সৃষ্টি করা হলে আর্থিক খাতে বিভিন্ন ভাতা ছাড়া আবর্তক খাতে এক মাসে আনুমানিক সাত লাখ নয় হাজার ৭২ টাকা এবং এক বছরে ৮৫ লাখ আট হাজার ৮৬৪ টাকা ব্যয় হবে। এ ছাড়া যানবাহন ও অফিস সরঞ্জামাদি টিওএন্ডইতে অন্তর্ভুক্তি বাবদ অনাবর্তক খাতে দুই কোটি নব্বই হাজার টাকা ব্যয় হবে। তাই আবর্তক ও অনাবর্তক মিলিয়ে দুই কোটি ৮৫ লাখ ৯৮ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা ব্যয় হবে। আইন ও বিচার বিভাগের চিঠি পাওয়ার পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা সাত বিভাগে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৪২টি পদ অস্থায়ীভাবে রাজস্ব খাতে সৃষ্টি এবং যানবাহন ও অফিস সরঞ্জামাদি টি.ও. এন্ড. ই- তে অন্তর্ভুক্ত করতে সম্মতি দেয়া হয়। তবে ২০১৫ সালের ২৪শে নভেম্বর অর্থ বিভাগ এক চিঠিতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুইটি সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের সম্মতি দেয়। পাশাপাশি এ দুই ট্রাইবব্যুনাল পরিচালনার জন্য ১২টি পদ সৃষ্টির প্রস্তাবে সম্মতি দেয়। তবে অন্য পাঁচ বিভাগে ট্রাইব্যুনাল গঠনের সম্মতি দেয়নি। এরপর গত ৫ই জুন অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে ট্রাইব্যুনালে নিয়োগ করা পদগুলোর বেতন স্কেল যাচাই করা হয়। এরপর গত ১৬ই জুলাই ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রস্তাব পাঠায় আইন ও বিচার বিভাগ। এ সংক্রান্ত সার সংক্ষেপে বলা হয়, ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুইটি সন্ত্রাসরিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের জন্য ১২টি পদ সৃষ্টির জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং অর্থ বিভাগের সম্মতি পত্রের শর্ত অনুযায়ী এসব পদ সৃষ্টির প্রস্তাব সদয় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হল। এ প্রস্তাবে মন্ত্রীর সদয় অনুমোদন রয়েছে। এর ভিভিত্তে দুই ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *