সমরাস্ত্রে নয় শিক্ষার ব্যয় বাড়ান: প্রধানমন্ত্রী

Slider গ্রাম বাংলা জাতীয় টপ নিউজ সারাদেশ

72162_PM-HASINA
গ্রাম বাংলা ডেস্ক: কন্যাশিশু ও নারী শিক্ষার উন্নয়নে নতুন উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে কমনওয়েলথ। নিউ ইয়র্ক সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে নতুন এই উদ্যোগের বিষয়টি জানিয়েছেন সংস্থার মহাসচিব কমলেশ শর্মা। গত বুধবার বিকালে নিউ ইয়র্কের হোটেল গ্রান্ড হায়াতে ওই সাক্ষাৎ হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব একেএম শামীম চৌধুরী এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি জানান, কমনওয়েলথের নীতি ও কর্মসূচির
বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছেন কমলেশ শর্মা। এ সময় বঙ্গবন্ধুর প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণের বিষয়টি শর্মা উল্লেখ করেন বলে জানান শামীম চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশে কন্যাশিশু ও নারী শিক্ষার উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসাও করেছেন। কমনওয়েলথ মহাসচিব আগামী ডিসেম্বরের শুরুতে বাংলাদেশ সফর করতে পারেন বলে জানিয়েছেন। সাক্ষাৎকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হোসেন মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপু মনি, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবদুস সোবহান শিকদার, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব আবুল কালাম আজাদ এবং প্রেস সচিব একেএম শামীম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
সমরাস্ত্রে নয়, শিক্ষায় ব্যয় বাড়ানোর আহ্বান: সমরাস্ত্রের জন্য কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ ব্যয় না করে শিক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে জাতিসংঘ মহাসচিবের শিক্ষাক্ষেত্রে বৈশ্বিক উদ্যোগের উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি ওই আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা যে পৃথিবী চাই তা গড়তে হলে, সমরাস্ত্র তৈরিতে যে শত কোটি টাকা আমরা ব্যয় করছি, তা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের শিক্ষার জন্য ব্যয় করতে হবে।” প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনেতাদের প্রতি ‘শান্তি ও অহিংসার সংস্কৃতি’ গড়ে তুলতেও শিক্ষায় বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান। এ সময় বাংলাদেশে শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের নেয়া নানা উদ্যোগ ও পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সবার জন্য শিক্ষা ও লিঙ্গ সমতা আনার ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য আমাদের সহায়তা করেছে। ২০১৫ সালের পর আমাদের কাছে অগ্রাধিকার পাবে ‘মানসম্মত শিক্ষা’। “২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ১২ কোটি তরুণ ও কর্মঠ জনশক্তি তৈরি হবে। তাদের মেধার বিকাশ ঘটিয়ে তাদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে আমার সরকার বদ্ধপরিকর। সেই লক্ষ্য নিয়েই ২০১০ সালে বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।” তিনি বলেন, মানসম্মত শিক্ষার জন্য মানসম্মত শিক্ষক প্রয়োজন। সে লক্ষ্যে সরকার প্রায় ১০ লাখ শিক্ষককে মানসম্মত শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। এসব শিক্ষককে মূল্যায়ন করা হয়েছে তাদের কাজের মানের ভিত্তিতে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের মধ্যে ৬০ শতাংশ প্রশিক্ষিত নারী শিক্ষকদের জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। স্বল্প আয়ের দেশে মানসম্মত শিক্ষার জন্য বিনামূল্যে পাঠ্যবই ও আধুনিক শিক্ষাক্রম নিশ্চিত করার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে শুধু ২০১৪ সালেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ৩১ কোটি ৮০ লাখ পুস্তক বিতরণ করা হয়েছে। একটি নতুন শিক্ষা পাঠ্যক্রম এবং সৃজনশীল মূল্যায়ন পদ্ধতি প্রণয়ন করা হয়েছে। মাদরাসা শিক্ষাতে মূলধারার বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তি শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। তিনি  বলেন, গুণগত শিক্ষার জন্য তথ্য-প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞানের অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। সে কারণে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে তথ্য-প্রযুক্তি শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে একটি প্রযুক্তি নির্ভর সমাজ গঠনে শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য-প্রযুক্তিগত মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মানসম্মত প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার বিষয়ে বর্তমান সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে তিনি বলেন, “সেজন্য সরকার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেছে। তাছাড়াও নবীন শিক্ষার্থীদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। “গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সে কারণেই ২০১৩ সালে মাধ্যমিক থেকে স্নাতক পর্যন্ত এক কোটি ২০ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেয়া হয়েছে, যার ৭৫ শতাংশই নারী।” নানা উদ্যোগের ফলে গত পাঁচ বছরে দক্ষতা ভিত্তিক ও কারিগরি প্রশিক্ষণে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭ গুণ বেড়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা। বক্তৃতায় নারী শিক্ষার বিষয়েও জোর দেন বাংলাদেশের সরকার প্রধান। তিনি বলেন, “নারী শিক্ষা গুণগত শিক্ষার অন্যতম একটি স্তম্ভ। গুণগত শিক্ষার জন্য যথাযথ উপকরণ প্রয়োজন। চলতি বছরের বাজেটে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভো ইউসিপোইচ, তিউনিশিয়ার প্রেসিডেন্ট মনসেফ মারজুকি, গায়ানার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড র‌্যামোটা, অ্যান্ডোরার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টোনি মার্তি পেতি, ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী হেলি থর্নি স্মিট প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। গাজা পরিস্থিতি নিয়ে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গাজা পরিস্থিতি গ্রহণযোগ্য নয়। এর বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে।” জাতিসংঘ সফরের তৃতীয় দিন বুধবার এই আলোচনার আগে বেলারুশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। তার আগে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অন্য সব সরকার প্রধানদের সঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিবের দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। এরপর তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৯তম অধিবেশনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নেন, যোগ দেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-?মুনের দেয়া মধ্যাহ্ন ভোজেও। শনিবার সাধারণ পরিষদে বক্তব্য দেবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এর ফাঁকে তিনি আরও  কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার পাশাপাশি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও বৈঠক করবেন। আগামী ২৯শে সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক ছেড়ে লন্ডনে যাত্রাবিরতি করে ২রা অক্টোবর ঢাকায় ফিরবেন শেখ হাসিনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *