গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম হত্যার মূল হোতা হলো পলাতক জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) নেতা মোহাম্মদ সুলাইমান। এ তথ্য জানিয়েছে ভারতে আটক আইএস সদস্য মোহাম্মদ মসিউদ্দিন ওরফে আবু মুসা। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ভারতীয় নাগরিক আবু মুসাকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে এই তথ্য জানিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদকারীদের মুসা জানায়, ২৩শে এপ্রিলের অধ্যাপক হত্যা ও গুলশান হামলার সঙ্গে সুলাইমানের যোগসূত্র ছিল। এ ধরনের তথ্য এই প্রথম উঠে এসেছে। মুসা আরো জানিয়েছে, সুলাইমান তাকে ভারতে বিদেশি নাগরিকদের ওপর ‘লোন উল্ফ’ বা এককভাবে হামলা চালানোর জন্য বলেছিল। আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজাউল করিমের হত্যাকাণ্ডের দুইদিন পর কলকাতা চলে যায় সুলাইমান। আইএস ও জিহাদি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরো এক সঙ্গী ওইসময় ছিল সুলাইমানের সঙ্গে। তারা কলকাতার একটি হোটেলে অবস্থান করছিল। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এখন জানার চেষ্টা করছে, ওই সময় সুলাইমানের সঙ্গী আইএস বাংলাদেশের আমির আবু ইব্রাহিম আল-হানিফি ওরফে তামিম চৌধুরীই ছিল কি-না। সুলাইমান ও কানাডিয়ান-বাংলাদেশি তামিম চৌধুরী ভারতে পলাতক থাকতে পারে- এমন আশঙ্কার কথা বাংলাদেশ এর মধ্যেই জানিয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে খবরে। মুসার দেয়া নতুন এসব তথ্য বাংলাদেশের সন্দেহকেই আরো জোরালো করেছে যে, জেএমবি’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইএস সদস্যরা ভারতকে নিজেদের ‘গুপ্ত আশ্রয়’ হিসেবে ব্যবহার করছে- এমনটাই বলছে বিভিন্ন সূত্র। বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছবি ও অন্যান্য তথ্য শেয়ার করেছে। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা আইবি’র (ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো) শীর্ষক সূত্রগুলো জানিয়েছে, মুসার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় জেএমবি’র ওই নেতা অন্য একটি নামে কাজ করতো এবং সে ব্যক্তিগতভাবেই অধ্যাপক হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল। নিজস্ব সংবাদ মাধ্যম আমাকের মাধ্যমে ওই ঘটনার দায় স্বীকার করেছিল আইএস। ‘নাস্তিকতার আহ্বান জানানোর জন্য’ ওই অধ্যাপককে হত্যা করা হয়েছিল বলে দাবি ছিল আইএসের। মুসা জানিয়েছে, সুলাইমান ও আইএসের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য জেএমবি সদস্যরা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পশ্চিমবঙ্গে। সে বলেছে, ‘তারা আমার সঙ্গে মালদা স্টেশনে দেখা করেছিল। এরপর তারা কলকাতা চলে যায় এবং একটি হোটেলে অবস্থান নেয়।’ মুসার দেয়া এসব তথ্য ভারতের তদন্তকারীদের কিছু চিন্তার খোরাক জোগাবে। কেননা, এসব তথ্য থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, গুলশান হামলা ও রাজশাহীর অধ্যাপক হামলার মূল হোতারা ভারতে ছিল, সম্ভবত তারা ভারতে বেশ কয়েকদিনই ছিল এবং এই সময়ে তারা বাংলাদেশে হামলার সিদ্ধান্ত নেয়া ছাড়াও হয়তো ভারতেও হামলার পরিকল্পনা করেছিল।