খালেদাকে জাফরুল্লাহ’র খোলা চিঠি ‘আপনার হাতে সময় বড় জোর ৯ মাস’

Slider জাতীয় ফুলজান বিবির বাংলা রাজনীতি

file (1)

 

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বিএনপির শুভাকাক্সক্ষী হিসেবে পরিচিত এ মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসক দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন হাজার শব্দের খোলা চিঠিতে ভুল সিদ্ধান্তের সমালোচনা, দলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাতা, কর্মীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়ানো, উপদেষ্টা পরিষদে বিশিষ্ট জনদের কোঅপ্ট করা, পরিবারতন্ত্র, জামায়াতের ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিয়ে করণীয়সহ তার পরামর্শ তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে ১৫ই আগস্ট শোক দিবসে কেক কেটে জন্মদিন পালন না করায় তার প্রশংসাও করেন। তিনি খালেদা জিয়াকে ৯ মাস সময় সীমা বেধে দিয়ে বলেন, তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং পরিশ্রম করলে রায় তাঁর পক্ষে যেতে পারে। ড. কামাল হোসেনের দলসহ কয়েকটি দলকে নিয়ে একসঙ্গে জনসভার ঘোষণা দেওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে চিঠিতে জাফরুল্লাহ চৌধুরী লিখেছেন, ‘২০ দলের বাইরের বিরোধী দলসমূহকে একত্র করে বাংলাদেশে জবাবদিহিমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে সুসংহত করার জন্য আপনার হাতে সময় আছে বড় জোর নয় মাস। সম্ভবত এই সময়ের মধ্যে আপনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় রাজনীতির আলোকে বিচারের রায় বেরোবে। এই কয়েক মাস পরিশ্রম করলে জনগণের রায় আপনার পক্ষে আসার সম্ভাবনা সমধিক।’ তারেক রহমানের সাজার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘এটা কি সুষ্ঠু বিচারের রায় না রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত? এর ফয়সালা ছাত্রদলের ২০-৩০ জনের মিছিলে হবে না, এতে কেবল আপনাদের শক্তির অপচয় এবং ভুল কাজ। ফয়সালা হবে মূলত সুষ্ঠু গণতন্ত্রের আন্দোলনে এবং উচ্চ আদালতে।’
খালেদা জিয়াকে আরও সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘ভবিষ্যৎ আন্দোলনের স্বার্থে নিয়মিত ভাবে সকাল ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত আপনার বাড়িতে তৃণমূল কর্মীদের সাক্ষাৎ দিন। কর্মীদের দেখভাল করার জন্য একজন ৫০ অনূর্ধ্ব উচ্চশিক্ষিত, রাজনীতির ভাষা ও শিষ্টাচারের সঙ্গে পরিচিত কিন্তু খয়ের খা নয়, এরূপ একজন মহিলা বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। তার বিশেষ দায়িত্ব হবে বিভিন্ন কমিটির কার্যকলাপের সার সংক্ষেপ এবং অন্তত পক্ষে ১০টি দৈনিক পত্রিকার মুখ্য সংবাদগুলো নিয়ে আপনার সঙ্গে প্রতিদিন আলোচনা করা। আপনার রাতের গুলশান অফিসের সময় সন্ধ্যায় করলে ভালো হবে।’ খালেদা জিয়াকে প্রতি মাসে অন্তত দুটি জেলায় জনসভা করার পরামর্শ দিয়েছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এসব জনসভায় সরকারের দুর্নীতি ও আর্থিক খাতে লুটপাট, সীমান্ত হত্যা, ট্রানজিট ফি, ভারতের সঙ্গে পানির হিস্যা ইত্যাদিকে মূল প্রতিপাদ্য করার পরামর্শ দেন। তিনি লিখেছেন, ‘একই তথ্য বিশেষত ভারতের অনৈতিক কার্যকলাপের কথা বারে বারে বলতে হবে। মাত্র দুবার সম্পর্কে মৃদুভাবে উল্লেখ করায় ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন আপনার কাছে উপস্থিত হয়েছেন। জনসভায় শক্ত ভাবে এই সব তথ্য উপস্থাপন করুন, ভারত সরকারের চিন্তায় পরিবর্তন আসতে বাধ্য।’
এবার জন্মদিন পালন না করায় খালেদা জিয়াকে সাধুবাদ জানিয়ে চিঠিতে মুক্তিযোদ্ধা এ চিকিৎসক লিখেছেন, ‘দেশের সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে ১৫ আগস্ট আপনার জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠান বাতিল করে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দেখিয়েছেন। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কি মন্তব্য করেছেন তাতে কিছু যায় আসে না। আপনি জিতেছেন।’
ডা. জাফরুল্লাহ লিখেছেন, ‘৩৮ বছরের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের সাড়ে চার মাস পরে জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা, কমিটির বড় সাইজ বা ক্রমানুসারে বয়োজ্যেষ্ঠদের হিসাব না মানা কিংবা পর্যাপ্ত নারী নেত্রীর স্থান না হওয়া অথবা নবীন তরুণদের সংখ্যাধিক্য ভুল কাজ নয়। ভুলটা হয়েছে অন্য জায়গায়। আপনার দলের কিছু চাটুকার দায়িত্ব পালনে অনিচ্ছুক, সরকারের দমন নীতিতে ভীত সন্ত্রন্ত সিনিয়র নেতৃবৃন্দ যারা সম্ভবত হর প্রসাদ শাস্ত্রীর তৈল এর প্রাসঙ্গিকতা ভালো ভাবে হৃদয়ঙ্গম করে দলের মহাসচিব থেকে শুরু করে পুরো জাতীয় কমিটির মনোনয়নের দায়িত্ব আপনার ওপর চাপিয়ে দিয়ে আপনাকে আপাতদৃষ্টিতে বিশ্বাস ও সম্মান প্রদর্শন মনে হলেও প্রকৃত পক্ষে তা তাদের দলের প্রতি আনুগত্যের অভাব ও দায়িত্ব এড়ানোর প্রচেষ্টা মাত্র এবং আপনাকে সবার চোখে আপনার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার প্রমাণেরক্ষসুক্ষ প্রক্রিয়া।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমার মনে হয়, দীর্ঘদিন আপনি বিএনপির গঠনতন্ত্র পড়েননি এবং আপনার মনোনীত নির্বাহী কমিটির সদস্যদের অধিকাংশও পড়েননি। আপনার স্থায়ী কমিটির নেতাদের উচিত ছিল আপনাকে অযথা তেল না দিয়ে, গঠনতন্ত্রের নির্ধারিত বিষয়সমূহ আপনার সামনে তুলে ধরা এবং গঠনতন্ত্র মোতাবেক আপনার ক্ষমতা সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য দেওয়া।’ জাফরুল্লাহ চৌধুরী মনে করেন, অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদকে খালেদা জিয়ার প্রধান উপদেষ্টা করলে বিএনপি লাভবান হবে এবং দেশবাসীর প্রশংসা পাবেন।
বিএনপি জাতীয় কমিটিতে পরিবারতন্ত্র জিন্দাবাদ- ১০ নেতার স্ত্রী, ১১ নেতার ছেলে, ৬ ভাই বোন স্থান পেয়েছেন অথচ শিষ্টাচার বজায় রেখে যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও আপনি ছেলের বউকে জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে স্থান দেননি। স্থায়ী কমিটিতে কমপক্ষে চারজন মহিলা অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রয়োজন। ৪-৬ কোটি মানুষের প্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সংখ্যা গঠনতন্ত্র সংশোধন করে প্রয়োজনে ২৫জন করলে আপত্তি কোথায়? সদস্যরা পার্টির অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের ভিত্তিতে ২-৩ বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন, মনোনীত নন। চেয়ারম্যানের মনোনয়নে আসবেন ৩-৪জন মাত্র। জাতীয় কমিটিতে ‘৭১ যুদ্ধাপরাধী আবদুল আলীম ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্থান অযৌক্তিক ও ভুল সিদ্ধান্ত। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে তো কোনো দলীয় রাজনীতিতে নেই।
জাফরুল্লাহ লিখেছেন, ‘পার্টিতে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করুন। এতে পার্টির সর্বস্তরে নতুন জাগরণ সৃষ্টি হবে। তারা দেশের জন্য জীবন দিতে পিছপা হবে না। যদি পার্টি তাদের পরিবারের দায়িত্ব নেয়। জেলে থাকা কর্মীদের পরিবারের সঙ্গে অনুগ্রহ করে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন। জেল থেকে বেরোলে অবশ্য তাদের আপনার অফিসে ডেকে এনে আলাপ করবেন, সাহস দেবেন।’
জাফরুল্লাহ খালেদা জিয়ার উদ্দেশে লিখেছেন, ‘বুঝে সুজে সকলের সঙ্গে আলাপ করে জামাত সম্পর্কে দ্রুত একটা সিদ্ধান্ত নিন। দেশবাসীর কাছে তাদের পুনরায় ক্ষমা চাইতে হবে। অধ্যাপক গোলাম আজম প্রদর্শিত ১৯৯১ সনের একক তৃতীয় ধারার রাজনীতি হতে পারে জামাতের জন্য মঙ্গলকর কূটকৌশল।’ খালেদা জিয়ার প্রতি তাঁর পরামর্শ, ‘অচিরেই জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে সম্মিলিত বিরোধী দল হিসেবে অংশগ্রহণের আকাঙ্ক্ষায় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, ড. কামাল হোসেন, অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদর রহমান মান্না, বাসদের খালেকুজ্জামান, জাসদের আ স ম আবদুর রব প্রমুখদের সঙ্গে নিয়ে এক মাসের মধ্যে প্রথম জনসভায় অংশগ্রহণের ঘোষণা দিন। বিএনপির বর্তমান জোটের নেতারা তো থাকছেনই, আপনি জেলে থাকলেও সম্মিলিত বিরোধী দলের বিজয় সুনিশ্চিত। জয় হোক সুষ্ঠু জবাবদিহিমূলক গণতন্ত্রের। পতন হবে প্রতারণার উন্নয়ন ও সরকারের মেগা দুর্নীতির।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *