ঢাকা: গুলশান ও শোলাকিয়া জঙ্গি হামলায় দেশের নামিদামি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী জড়িত থাকার পর নতুন চ্যালেঞ্জে পড়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। দক্ষ শিক্ষকের অভাব, শিক্ষার মান ও পরিবেশের অনুপস্থিতি, সরকারি পর্যবেক্ষক নিয়োগ, আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেয়া, শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের আস্থার অভাব, ইউজিসির কড়া মনিটরিং, স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা। এসব কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ভর্তি কমে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। জঙ্গি হামলার পর সবচেয়ে বেশি সংকট দেখা দিয়েছে চাকরি দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর কড়া শর্তারোপ। ইন্টার্নশিপ করা শিক্ষার্থীদের বিদায় দিচ্ছে দেশীয় ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে না পারলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে শিক্ষার্থীরা। এতে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা বাড়বে। দেশের টাকা চলে যাবে দেশের বাইরে। যা হতো ৯০ দশকের আগে।
এই চ্যালেঞ্জের কথা স্বীকার করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকদের সংগঠন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন। তিনি মানবজমিনকে বলেন, নানা চ্যালেঞ্জ নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় টিকে আছে। এখানে শিক্ষার্থীরা টাকা দিয়ে পড়াশুনা করে। তাদের সেবা ও শিক্ষার মান রক্ষা করতে না পারলে সবাই মুখ ফিরিয়ে নিবে এটাই স্বাভাবিক। তবে সেই মান অর্জন করেই আমরা প্রতিযোগিতায় টিকে আছি। তিনি বলেন, জঙ্গি হামলার পর উগ্রবাদ মোকাবিলার নতুন চ্যালেঞ্জ এসেছে আমাদের সামনে। সেই চ্যালেঞ্জ সংবলিতভাবে মোকাবিলা করার চেষ্টা চালাচ্ছি।
শিক্ষামন্ত্রণালয় ও ইউজিসির কর্মকর্তারা বলেন, শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতে হাতেগোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকিরা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার মান নিশ্চিত করেছিল তাদের ভিতরে নতুন করে জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতা দেখা দিয়েছে। এতে এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা মুখ ফিরেয়ে নিবে। এতে শিক্ষার মানের ধস নামবে। ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, নর্থ সাউথ, ব্র্যাক, আমেরিকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে ছিল। জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতার কারণে যদি এখানে মানের কোনো ধস বা ছাত্র ভর্তিতে কোনো প্রভাব পড়ে তাহলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক মানের ধস নামবে।
এ ব্যাপারে ইউজিসির চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেন, আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট। যারা এসব চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে না পারবে তারা মার্কেট থেকে বিদায় নিতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের পর্যবেক্ষণ বা পর্যবেক্ষক নিয়োগ কোনোটি কারও খবরদারি করার জন্য নয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করে সেটি মনে করিয়ে দেয়ার জন্য। এরপর যারা আইন অমান্য করবে তাদের অবস্থা দারুল ইহসানের মতো হবে।
ইউজিসির কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষার মান ও পরিবেশ অনুপস্থিতির সঙ্গে নতুন যোগ হয়েছে জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার বিষয়টি। এতে ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, যার প্রভাব পড়তে পারে শিক্ষার্থী ভর্তিতে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বছর শিক্ষার্থী ভর্তি কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। জঙ্গি হামলায় দেশের প্রথম সারির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথসহ আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়েল শিক্ষার্থীর নাম আসার পর বড় ধরনের ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। এর প্রভাব পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্বাভাবিক কার্যক্রমেও। বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন বিভাগে স্নাতক শ্রেণিতে গত ২৩শে জুলাই ফল সেমিস্টারে ভর্তি পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে ৬ই আগস্ট করা হয়েছে। আবেদনকারীর সংখ্যাও এবার আগের চেয়ে কম বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাধিক সূত্র।
নর্থ সাউথের একটি সূত্র জানিয়েছে, ১লা জুলাই গুলশান হামলার পর রাজধানীর বনানীতে একটি জাপানি প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ করছিল নর্থ সাউথের বিভিন্ন বিভাগের ১৩ জন শিক্ষার্থী। হামলার পর দিন বিনা নোটিশে তাদের পাওনা পরিশোধ করে বিদায় দেয়া হয়। এর আগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক, ভিসিদের নিয়ে এক বৈঠকে প্রকাশ্যে ইউজিসির চেয়ারম্যান বলেন, বিভিন্ন দেশের ভিসা পেতে নানা জটিলতার শিকার হচ্ছেন নর্থ সাউথ, ব্র্যাকসহ নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কোনো কোনো দেশ নর্থ সাউথের শিক্ষার্থীদের ভিসা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিষয়টি স্বীকার করে নর্থ সাউথের ভিসি ড. আতিকুল ইসলাম বলেন, গুলশান হামলার পর আমাদের শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের জটিলতার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়া, ভিসা নেয়া, ইন্টার্নশিপ, চাকরি ইত্যাদি ক্ষেত্রে। তবে এটি সাময়িক। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরের নর্থ সাউথের ইতিহাস দেখেন। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ, বুয়েটের মতো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পিছনে ফেলে চাকরি পেয়েছেন। দুটি জঙ্গি হামলায় কয়েকজন ছাত্রের সংশ্লিষ্টতা গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নষ্ট হয়ে যায়নি। নর্থ সাউথ এই সংকট কাটিয়ে উঠবে বলে মত তার।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালে ৭৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ১ লাখ ২১ হাজার ১৯৪ শিক্ষার্থী। যদিও ওই বছর মোট আসন ছিল ২ লাখ ৩৫ হাজার ২টি। এ হিসাবে ২০১৪ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন খালি ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৮০৮টি, যা মোট আসনের ৪৮ শতাংশ। ২০১৩ সালে মোট ২ লাখ ১৪ হাজার ৩৬৯টি আসনের বিপরীতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তি হন ১ লাখ ১৯ হাজার ৭৬৫ জন শিক্ষার্থী। অর্থাৎ ওই শিক্ষাবর্ষে আসন খালি ছিল ৪৪ শতাংশ। এ ছাড়া ২০১২ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তি হন ৮১ হাজার ৪৩০ জন, ২০১১ সালে ৬৯ হাজার ৫৩৫ জন ও ২০১০ সালে ৬২ হাজার ৮২৬ জন শিক্ষার্থী। তবে চলতি বছর শিক্ষার্থী ভর্তির ধারাবাহিক বৃদ্ধিতে ছেদ পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন শিক্ষাবিদরা। শিক্ষার গুণগত মানের অভাবের পাশাপাশি সাম্প্রতিক জঙ্গি ইস্যুকে এর বড় কারণ বলে মনে করছেন তারা।
২০১৪ সালে শতভাগ শিক্ষার্থী ভর্তি হন শুধু আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি হন আসন সংখ্যার কাছাকাছি। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ হাজার ৫৪৬ শিক্ষার্থী ভর্তি হন। তবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে ২ হাজার ৪০০ আসনের বিপরীতে ভর্তি হন ১ হাজার ৯২৯ জন। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজিতে ৫ হাজার ২৫০ আসনের বিপরীতে ভর্তি শিক্ষার্থী ছিলেন ২ হাজার ৯৫৪ জন। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ হাজার ১৬০ আসনের বিপরীতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ১৯৫। এ ছাড়া জেলা শহরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী পাওয়ার দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান বলেন, সাময়িকভাবে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির সাময়িক সমস্যা হতে পারে। সেই সমস্যার মোকাবিলা তাদের করতে হবে। ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক ড. এম রিজওয়ান খান বলেন, জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এটা শুধু বেসরকারি নয়, সবাইকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার নানা উদ্যোগ নিয়েছি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিতে এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন বুয়েটের সাবেক এই শিক্ষক।
এই চ্যালেঞ্জের কথা স্বীকার করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকদের সংগঠন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন। তিনি মানবজমিনকে বলেন, নানা চ্যালেঞ্জ নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় টিকে আছে। এখানে শিক্ষার্থীরা টাকা দিয়ে পড়াশুনা করে। তাদের সেবা ও শিক্ষার মান রক্ষা করতে না পারলে সবাই মুখ ফিরিয়ে নিবে এটাই স্বাভাবিক। তবে সেই মান অর্জন করেই আমরা প্রতিযোগিতায় টিকে আছি। তিনি বলেন, জঙ্গি হামলার পর উগ্রবাদ মোকাবিলার নতুন চ্যালেঞ্জ এসেছে আমাদের সামনে। সেই চ্যালেঞ্জ সংবলিতভাবে মোকাবিলা করার চেষ্টা চালাচ্ছি।
শিক্ষামন্ত্রণালয় ও ইউজিসির কর্মকর্তারা বলেন, শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতে হাতেগোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকিরা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার মান নিশ্চিত করেছিল তাদের ভিতরে নতুন করে জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতা দেখা দিয়েছে। এতে এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা মুখ ফিরেয়ে নিবে। এতে শিক্ষার মানের ধস নামবে। ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, নর্থ সাউথ, ব্র্যাক, আমেরিকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে ছিল। জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতার কারণে যদি এখানে মানের কোনো ধস বা ছাত্র ভর্তিতে কোনো প্রভাব পড়ে তাহলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক মানের ধস নামবে।
এ ব্যাপারে ইউজিসির চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেন, আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট। যারা এসব চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে না পারবে তারা মার্কেট থেকে বিদায় নিতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের পর্যবেক্ষণ বা পর্যবেক্ষক নিয়োগ কোনোটি কারও খবরদারি করার জন্য নয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করে সেটি মনে করিয়ে দেয়ার জন্য। এরপর যারা আইন অমান্য করবে তাদের অবস্থা দারুল ইহসানের মতো হবে।
ইউজিসির কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষার মান ও পরিবেশ অনুপস্থিতির সঙ্গে নতুন যোগ হয়েছে জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার বিষয়টি। এতে ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, যার প্রভাব পড়তে পারে শিক্ষার্থী ভর্তিতে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বছর শিক্ষার্থী ভর্তি কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। জঙ্গি হামলায় দেশের প্রথম সারির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথসহ আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়েল শিক্ষার্থীর নাম আসার পর বড় ধরনের ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। এর প্রভাব পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্বাভাবিক কার্যক্রমেও। বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন বিভাগে স্নাতক শ্রেণিতে গত ২৩শে জুলাই ফল সেমিস্টারে ভর্তি পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে ৬ই আগস্ট করা হয়েছে। আবেদনকারীর সংখ্যাও এবার আগের চেয়ে কম বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাধিক সূত্র।
নর্থ সাউথের একটি সূত্র জানিয়েছে, ১লা জুলাই গুলশান হামলার পর রাজধানীর বনানীতে একটি জাপানি প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ করছিল নর্থ সাউথের বিভিন্ন বিভাগের ১৩ জন শিক্ষার্থী। হামলার পর দিন বিনা নোটিশে তাদের পাওনা পরিশোধ করে বিদায় দেয়া হয়। এর আগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক, ভিসিদের নিয়ে এক বৈঠকে প্রকাশ্যে ইউজিসির চেয়ারম্যান বলেন, বিভিন্ন দেশের ভিসা পেতে নানা জটিলতার শিকার হচ্ছেন নর্থ সাউথ, ব্র্যাকসহ নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কোনো কোনো দেশ নর্থ সাউথের শিক্ষার্থীদের ভিসা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিষয়টি স্বীকার করে নর্থ সাউথের ভিসি ড. আতিকুল ইসলাম বলেন, গুলশান হামলার পর আমাদের শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের জটিলতার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়া, ভিসা নেয়া, ইন্টার্নশিপ, চাকরি ইত্যাদি ক্ষেত্রে। তবে এটি সাময়িক। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরের নর্থ সাউথের ইতিহাস দেখেন। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ, বুয়েটের মতো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পিছনে ফেলে চাকরি পেয়েছেন। দুটি জঙ্গি হামলায় কয়েকজন ছাত্রের সংশ্লিষ্টতা গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নষ্ট হয়ে যায়নি। নর্থ সাউথ এই সংকট কাটিয়ে উঠবে বলে মত তার।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালে ৭৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ১ লাখ ২১ হাজার ১৯৪ শিক্ষার্থী। যদিও ওই বছর মোট আসন ছিল ২ লাখ ৩৫ হাজার ২টি। এ হিসাবে ২০১৪ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন খালি ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৮০৮টি, যা মোট আসনের ৪৮ শতাংশ। ২০১৩ সালে মোট ২ লাখ ১৪ হাজার ৩৬৯টি আসনের বিপরীতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তি হন ১ লাখ ১৯ হাজার ৭৬৫ জন শিক্ষার্থী। অর্থাৎ ওই শিক্ষাবর্ষে আসন খালি ছিল ৪৪ শতাংশ। এ ছাড়া ২০১২ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তি হন ৮১ হাজার ৪৩০ জন, ২০১১ সালে ৬৯ হাজার ৫৩৫ জন ও ২০১০ সালে ৬২ হাজার ৮২৬ জন শিক্ষার্থী। তবে চলতি বছর শিক্ষার্থী ভর্তির ধারাবাহিক বৃদ্ধিতে ছেদ পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন শিক্ষাবিদরা। শিক্ষার গুণগত মানের অভাবের পাশাপাশি সাম্প্রতিক জঙ্গি ইস্যুকে এর বড় কারণ বলে মনে করছেন তারা।
২০১৪ সালে শতভাগ শিক্ষার্থী ভর্তি হন শুধু আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি হন আসন সংখ্যার কাছাকাছি। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ হাজার ৫৪৬ শিক্ষার্থী ভর্তি হন। তবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে ২ হাজার ৪০০ আসনের বিপরীতে ভর্তি হন ১ হাজার ৯২৯ জন। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজিতে ৫ হাজার ২৫০ আসনের বিপরীতে ভর্তি শিক্ষার্থী ছিলেন ২ হাজার ৯৫৪ জন। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ হাজার ১৬০ আসনের বিপরীতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ১৯৫। এ ছাড়া জেলা শহরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী পাওয়ার দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান বলেন, সাময়িকভাবে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির সাময়িক সমস্যা হতে পারে। সেই সমস্যার মোকাবিলা তাদের করতে হবে। ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক ড. এম রিজওয়ান খান বলেন, জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এটা শুধু বেসরকারি নয়, সবাইকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার নানা উদ্যোগ নিয়েছি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিতে এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন বুয়েটের সাবেক এই শিক্ষক।