জনপ্রিয় অভিনেতা ওমর সানী দীর্ঘ অভিনয় জীবনে অসংখ্য সুপারহিট ছবি দর্শকদের উপহার দিয়েছেন। মাঝে চলচ্চিত্র থেকে একটু দূরে থাকলেও আবারও নিয়মিত হয়েছেন তিনি। চলচ্চিত্র জগতে তার প্রথম দেখা হয় পরিচালক দারাশিকোর সঙ্গে। তার পরিচালনায় একটি ছবিতে প্রথম কাজ করার কথা ছিল এই অভিনেতার। তবে ছবিটি শেষ পর্যন্ত হয় নি। এরপর পরিচালক শেখ নজরুল ইসলামের ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ পান এবং প্রথম ছবিতেই বাজিমাত করেন। এ প্রসঙ্গে ওমর সানী মানবজমিনকে বলেন, একদিন দুপুরে শেখ নজরুল ইসলাম দারাশিকো সাহেবের অফিসে আসলেন, তখন উনি একটা ছবি শুরু করবেন। ছবির নাম ‘চাঁদের আলো’। গুণী অভিনেতা রাজীব ভাই সেদিন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি শেখ নজরুল ইসলাম সাহেবকে বললেন, সানীকে এ ছবিতে নিয়ে নিন। এরপর নজরুল সাহেবের সঙ্গে পরিচয় হলো এবং ছবির কাজ শুরু করলাম। একসময় নির্মাণ শেষে ছবিটি মুক্তি পেলো এবং সুপারহিটও হলো। সেই থেকে শুরু ওমর সানীর রূপালী পর্দায় পথ চলা। প্রথম ছবি সুপারহিট ব্যবসা করার পর ‘এই নিয়ে সংসার’, ‘মহৎ’, ‘বাংলার বধু’, ‘প্রেমগীত’, ‘হারানো প্রেম’, ‘দোলা’, ‘চরম আঘাত’, ‘প্রথম প্রেম’, ‘মুক্তির সংগ্রাম’, ‘প্রিয় তুমি’, ‘আত্ম অহংকার’, ‘কাল পুরুষ’, ‘প্রেমের অহংকার’, ‘গরীবের রানী’, ‘সুখের স্বর্গ’, ‘গোলাগুলি’, ‘রঙ্গিন রংবাজ’, ‘কুলি’, ‘রঙ্গিন নয়নমনি’সহ ১০০’র বেশি সুপারহিট ছবিতে টানা নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন সানী। এরপর এক পর্যায়ে বেছে নিলেন এক চ্যালেঞ্জিং পথ। খলনায়ক হিসেবে নতুন লুকে বড়পর্দায় আসলেন তিনি। উত্তম আকাশের ‘ওরা দালাল’, এফ আই মানিকের ‘বিদ্রোহী সালাহউদ্দিন’, শাহীন সুমনের ‘নষ্ট’, মালেক আফসারীর ‘জেল থেকে বলছি’, ইলিয়াস কাঞ্চনের ‘বাবা আমার বাবা’ ছবিগুলোতে দর্শকরা নতুন এক সানীকে আবিস্কার করলেন। এরপর আবারও বিরতি। কারণ স্বাস্থ্য বেড়ে যাওয়া। ১২৭ কেজির শরীরটা দর্শককে দেখাতে চান নি সানী। ওজন কমিয়ে ৮৫ কেজিতে আনার পর দর্শকের সামনে নতুন ছবি নিয়ে হাজির হন আবার। সানী বলেন, নিয়মিত জিমে যাওয়া, ধূমপান ছেড়ে দেয়াসহ অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। সবই করেছি দর্শকের ভালোবাসা পাবার জন্য। সম্প্রতি সানী বন্ধন বিশ্বাসের ‘শূন্য’ ও সরকারি অনুদানের ছবি ‘লাল সবুজের সুর’ এর কাজ শেষ করেছেন। এ ছবি দুটি প্রসঙ্গে ওমর সানী বলেন, ‘শূন্য’ ছবির ডাবিং এখনও হয়নি। নবাগত একজন পরিচালকের সঙ্গে কাজ হয়েছে। আমি আমার চরিত্রটি নিয়ে খুশি। আশা করি, দর্শকরা পছন্দ করবেন। অন্যদিকে, মুশফিকুর রহমান গুলজারের ‘লাল সবুজের সুর’ ছবির ডাবিংসহ অন্য সব কাজই শেষ হয়েছে আমার। সামনের ১৬ই ডিসেম্বর ছবিটি মুক্তি দেবার কথা রয়েছে। এটি একটি শিশুতোষ চলচ্চিত্র, অনুদানের ছবি। সবচেয়ে ভালো লেগেছে যে, যুদ্ধের সময় আমি অনেক ছোট ছিলাম। দেশের জন্য কিছু করা সম্ভব ছিল না। বড় হয়ে ছবিটি করতে গিয়ে মনে হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের ছবিতে কাজ করে এর সাক্ষী হিসেবে হয়তো থাকতে পারলাম। আমি একজন কমান্ডারের চরিত্রে অভিনয় করেছি। এ ছবি দুটির বাইরে নতুন একটি ভিন্নধর্মী বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন সানী। সম্প্রতি শুটিং শেষ হওয়া আরএফএল রিগ্যাল ফার্নিচারের এই বিজ্ঞাপনে তাকে ছয়টি রূপে দর্শকরা দেখতে পাবেন। অভিনয়ের বাইরে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তবে আসছে নির্বাচনে সভাপতি পদে লড়বেন এই অভিনেতা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সানী বলেন, আমাকে শাকিব খান অর্থাৎ বর্তমান সভাপতি কথা দিয়েছেন তিনি এবার নির্বাচনে অংশ নিবেন না। আর আমাকে প্যানেলে সহযোগিতা করতে চেয়েছেন। অনেক শিল্পীর সামনেও শাকিব একথা বলেছেন। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রাখলে এবার সভাপতি পদে নির্বাচন করব আমি। আর শিল্পী সমিতির সভাপতি পদে নির্বাচন করার জন্য শাকিব আমাকে নিজেই বলেছেন। মৌসুমীর সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা হয়েছে। আমিন খানসহ অনেকে সভাপতি পদে আমাকে দেখতে চান এবার, আমার বন্ধু মিশা সওদাগরের সহযোগিতাও আমি কামনা করছি। আমি শিল্পীদের সেবা করতে চাই। সবশেষে নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে সানী বলেন, সুপারস্টার শব্দটা আমার কাছে এখন পুরনো। নয় বছর একটানা নাম্বার ওয়ান হিরো ছিলাম। নতুন করে পাওয়ার কিছু নেই। এখন শুধু অসাধারণ সব গল্পের ছবিতেই অভিনয় করে যেতে চাই। দর্শকদের হৃদয়ে সুঅভিনেতা হয়েই বেঁচে থাকতে চাই।