বাংলাদেশের সঙ্গে গ্যাস পাইপ লাইন স্থাপনে ভারতের প্রস্তাব

Slider অর্থ ও বাণিজ্য ফুলজান বিবির বাংলা রাজনীতি সারাদেশ

27351_b2

 

জ্বালানি খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তেল ও গ্যাসের পাইপলাইন স্থাপনের পরিকল্পনা করছে ভারত। দেশটির পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসবিষয়ক মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান এ কথা বলেছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। বার্তা সংস্থা আইএএনএসের খবরে বলা হয়, রোববার পশ্চিমবঙ্গে ‘প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বালা ইয়োজানা’ (পিএমইউওয়াই) প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেছেন ধর্মেন্দ্র প্রধান। এ সময় তিনি বলেন, সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জ্বালানি খাতের সহায়তা বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস রেগুলেটরি বোর্ড (পিএনজিআরবি) পশ্চিমবঙ্গের কোনতাই থেকে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করার জন্য পাইপলাইন বসানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই পাইপলাইন হলদিয়া হয়ে দত্তপুলিয়া যাবে। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছি এবং তারা এই পাইপলাইন বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। এই পাইপলাইনকে শিলিগুড়ি দিয়ে আবার ভারতে ফিরিয়ে আনার বিষয়েও কথা হয়েছে।’ ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে জ্বালানি খাতে অনেক সহায়তামূলক কার্যক্রম গড়ে উঠছে। আমার সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জ্বালানি মন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আমরা এখন ডিজেল সরবরাহ শুরু করেছি। প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহেরও পরিকল্পনা রয়েছে।’ ধর্মেন্দ্র প্রধান জানান, আসামের নুমালিগড় শোধনাগার থেকে বাংলাদেশে ডিজেল সরবরাহ করা হচ্ছে। সেখান থেকেও একটি পাইপলাইন বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পরিকল্পনা রয়েছে। তার আগে বাংলাদেশের জ্বালানি মন্ত্রী নসরুল হামিদ ভারত সফরে আসছেন। আমরা একত্রে দুই দেশের জ্বালানি খাতে আরো সহায়তামূলক কাজ এগিয়ে নেব, যাতে করে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী আরো চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারেন।’ ভারতের প্রাকৃতিক গ্যাসের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যও কাজ চলছে বলে জানান ধর্মেন্দ্র প্রধান।
এদিকে ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হয়, বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারকে সংযুক্ত করে ৬,৯০০ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানোর উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা নিয়ে ভারত সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন দেশটির তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস করপোরেশনের নির্বাহী পরিচালক এসসি সোনি। তিনি শনিবার সংবাদিকদের বলেন, ‘হাইড্রোকার্বন ভিশন ২০৩০-এর অংশ হিসেবে ৬,৯০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন বসানো হবে। এই পাইপলাইন মিয়ানমারের সিটওয়ে, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও ভারতের বেশিরভাগ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসহ শিলিগুড়ি ও দুর্গাপুরকে সংযুক্ত করবে।’ তিনি জানান, বর্তমানে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে প্রচুর পরিমাণে গ্যাস পুড়ছে। কারণ এগুলোকে ভোক্তাদের কাছে সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এই গ্যাসকেই উৎপাদনশীল কাজে সরবরাহ করার পরিকল্পনা রয়েছে। সোনি জানান, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো থেকে গ্যাস সরবরাহে সহায়তার জন্য বন্দরনগরী চট্টগ্রামে তরলিকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) একটি টার্মিনাল প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য এ বছরের এপ্রিলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ও ইন্ডিয়ান ওয়েল করপোরেশনের (আইওসি) মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর পর্যন্ত একটি পাইপলাইন স্থাপনের নির্মাণ কাজের জন্য আসামের নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরএল) ও বিপিসির মধ্যে একটি ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে। ভারত থেকে বাংলাদেশে হাই স্পিড ডিজেল (এইচএসডি) সরবরাহের জন্য এই পাইপলাইন বসানো হবে। তিনি জানান, এলপিজি ও এইচএসডি সরবরাহের জন্য বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও ভারতের মধ্যে পাইপলাইন স্থাপনের বিষয় চূড়ান্ত করতে গত সপ্তাহে গোয়াহাটিতে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। দ্বিতীয় আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে এ বছরের শেষের দিকে আগরতলায়। এই পাইপলাইনের জন্য প্রস্তাবিত ১৩টি রুটের মোট দৈর্ঘ্য ৬,৯০০ কিলোমিটার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *