মুসলিম নারীদের বিশেষ ধরনের পোশাক ‘বুরকিনি’ নিষিদ্ধ করায় ফ্রান্সের রাজনীতিতে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। চলচ্চিত্র উৎসবের জন্য প্রসিদ্ধ কান শহরে বুরকিনি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে মারসেইলিতে। এর তীব্র বিরোধিতা করেছেন লেস পেনেস-মিরাবুর মেয়র সামিয়া ঘালি। তিনি নিজেও একজন মুসলিম। কর্তৃপক্ষের এমন উদ্যোগের নিন্দা জানিয়েছেন তিনিও। অনলাইন ফ্রান্স ২৪ এ খবর দিয়েছে। আজ রোববার এ নিয়ে তাদের খবরের শিরোনাম ‘ফ্রেঞ্চ বুরকিনি পার্টি ব্যান স্পার্কস পলিটিক্যাল স্টর্ম’। এতেই রাজনৈতিক পর্যায়ে ওই বিরোধিতার কথা তুলে ধরা হয়েছে। ফ্রান্স ২৪ লিখেছে, এ পদক্ষেপের ফলে ফ্রান্সে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। স্মাইল ১৩ নামে মুসলিমদের একটি গ্রুপ মারসেইলিতে একটি ওয়াটার পার্কে নারীদের জন্য একটি পার্টির পরিকল্পনা করেছিল। বলা হয়েছিল, ওই পার্টিতে যারা যাবেন তাদের পুরো শরীর কাপড়ে ঢাকা থাকতে হবে। এ ধরনের পোশাককে বলা হয় বুরকিনি। এ পোশাক পরলে শুধু হাত বাইরে থাকে। মাথা সহ পুরো শরীর ঢাকা থাকে। ওই অনুষ্ঠানটি হওয়ার কথা ছিল ১০ই সেপ্টেম্বর। কিন্তু স্থানীয় সরকার তা নিষিদ্ধ করেছে। স্থানীয় বামপন্থি মেয়র মাইকেল আমিয়েল বলেছেন, এ ধরনের পার্টি জন-শৃংখলার জন্য হুমকি। আমি মনে করি এ পার্টি এক ধরনের প্ররোচণা। এর কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। এ ধরণের অনুষ্ঠান বিভক্তি সৃষ্টি করে। ডেপুটি মেয়র ডোমিনিক বুসি বলেছেন, ফ্রান্সের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের জন্য একটি হুমকি হলো বুরকিনি। নারী ও পুরুষের মধ্যে যে সমতা আছে, তা লঙ্ঘন করে এই পোশাক। তবে স্থানীয় সব রাজনৈতিক নেতারা এ যুক্তির সঙ্গে একমত নন। কর্তৃপক্ষের এমন উদ্যোগের নিন্দা জানিয়েছেন সামিয়া ঘালির মতো বেশ কিছু রাজনীতিক। উল্লেখ্য, সামিয়া ঘালি নিজে একজন মুসলিম ও মেয়র। তিনি বলেছেন, যেখানে ওই পার্টি আয়োজনের কথা ছিল সেটা একটি প্রাইভেট জায়গা। পার্টির আয়োজন ছিল সেখানকার মালিক ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যকার প্রাইভেট বিষয়। একটি প্রাইভেট জায়গা ভাড়া নেয়া কোন আইন বিরুদ্ধ নয়। শরীর ঢেকে সাঁতার কাটা কোন আইন বিরুদ্ধ নয়। জনশৃংখলার জন্য হুমকি নয়, এমন একটি ইভেন্ট কি করে নিষিদ্ধ করা হয় তা আমি বুঝতে পারি না। উল্লেখ্য, মারসেইলি শহরে প্রায় দুই লাখ মুসলিম আছেন। সেখানে নারীরা বুরকিনি পরে হাঁটছেন এমন দৃশ্য খুবই চোখে পড়ে। এমনই একজন নারী নিসরিন সামালি। তিনি পেশাগত জীবনে একজন শিক্ষিকা। তিনিও বুরকিনি নিষিদ্ধ করার জন্য ক্ষোভ ঝেড়েছেন। বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেছেন, ওয়াটার স্পোর্টসে কেন ইসলামিক পোশাক পরতে গিয়ে কে কি ভাবলো সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে, এটা আমি বুঝতে পারি না। এর চেয়ে মানুষগুলো যদি আরও মুক্তমনা হয় সেটাইতো বেশি ভাল। ইউনিভার্সিটি অব অসলোতে জেন্ডার স্টাডিজের প্রফেসর বেট্রিস হালসা। তিনিও মেয়র আমিয়েলের সঙ্গে একমত নন। আমিয়েলে বলেছেন, বুরকিনি নিষিদ্ধ করা হলে তাতে নারীদের মর্যাদার লঙ্ঘন হবে না। এ কথাটি মানতে পারছেন না বেট্রিস হালসা। তিনি বলেছেন, একটি প্রাইভেট অনুষ্ঠান বাতিল করা হবে এটা ধারণাতীত। যদি আরও বেশি নারী বুরকিনি পরে সাঁতরাতে যান তাহলে আমি বলবো এটা একটা ভাল বিষয়। তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজির ডানপন্থি দল লেস রিপাবলিকানস-এর সদস্য ভ্যালেরি বোয়ার সুর মিলিয়েছেন মেয়র আমিয়েলেসের সঙ্গে। তিনিও বলেছেন, একজন নারীর মর্যাদার সঙ্গে সংঘাতময় পোশাক হলো বুরকিনি। কিন্তু আলোচনা বা সমালোচনা যা-ই হোক, এরই মধ্যে কিন্তু ফ্রান্সের ক্রমবর্ধমান ডিজাইন হাউজ ও খুচরা ক্রেতারা বুরকিনির পিছনে মোটা অংকের অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। এক্ষেত্রে ডিকেএনওয়াই, টমি হিলফিজার, ডোলসে অ্যান্ড গাব্বানা উল্লেখযোগ্য। তারা ইসলামিক পোশাক সংগ্রেহের দিকে নজর দিয়েছে। বিশেষ করে বুরকিনির দিকে। যুক্তরাজ্যে মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার নামের কোম্পানি ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবার বুরকিনি বাজারজাত করতে শুরু করেছে। এ উদ্যোগের সমালোচনা করেছিলেন ফ্রান্সের নারী অধিকার বিষয়ক মন্ত্রী লরেন্স রোসিগনল। তিনি ফ্যান্সের আরএমসি রেডিওকে বলেছিলেন, যখন বিভিন্ন ব্রান্ড ইসলামিক তৈরী পোশাকে বিনিয়োগ করে এর মধ্য দিয়ে তারা তাদের দায়িত্বকে সঙ্কুচিত করে। তারা নারীদের দেহকে ‘তালাবদ্ধ’ করে রাখাকে উৎসাহী করে।