বদলে গেছে কূটনৈতিক জোন বলে পরিচিত গুলশান এলাকার চিত্র। রাস্তায় ‘ঢাকা চাকা’ নামের বিশেষ বাস নামানোর পর পুরো চিত্র বদলে যায়। তবে যাত্রীর তুলনায় বাসের সংখ্যা কম হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়ার কথা জানিয়েছেন অনেকে। বাসের সংখ্যা কম ও কর্মীদের অভিজ্ঞতা না থাকায় বাসযাত্রীরা নানা অভিযোগও দিচ্ছেন। উদ্বোধনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন গত বৃহস্পতি এবং শুক্রবারও এই বিশেষ বাস সার্ভিসের নানা অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলায় বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা গেছে যাত্রীদের। টিকিট কেটে দীর্ঘ লাইন। ১০ মিনিটের পরিবর্তে কাউন্টারে বাস আসছে ৩০ থেকে ৫০ মিনিট পর। অবশ্য ১০ মিনিটে এসে পড়ছে একাধিক বাসও। প্রায় বাসেই দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা হয়। বিভিন্ন স্টপেজে টিকিট কাটা যাত্রীদের না তোলায় দুর্ভোগে পড়েন তারা। একাধিক বাসে এসি না থাকায় ও নষ্ট থাকায় গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন অনেকে। ভাড়া নিয়েও অনেকের আপত্তি। শুধু বাসে নয়।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নাদিম ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার দুপুরে এক বাসে চড়ে গুলশান-২ মোড় থেকে ককলী মোড়ে যান। বাসটির অব্যবস্থাপনায় বিরক্ত হয়ে কর্মচারীদের কাছে প্রতিবাদ জানাতে দেখা গেছে তাকে। কারণ জানতে চাইলে তিনি মানবজমিনকে বলেন, গুলশান-২ মোড় থেকে কাকলী আসতে এই নতুন বাসে চড়ি। সিটিং ও এসি বাস হিসেবে ১৫ টাকা ভাড়া নেয়া হলেও এর কোনো সুবিধাই নেই বাসে। বাসটিতে এসি লাগানো না হওয়াতে বন্ধ জানালার কারণে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন যাত্রীরা। অন্তত ১২ জন যাত্রী দাঁড়িয়ে পরিবহন করা হয়েছে। নিরাপদ সার্ভিস হিসেবে চালু করা হলেও লোকাল বাসের মতো বিভিন্ন পয়েন্টে ইচ্ছেমতো যাত্রী উঠা-নামানোয় কী নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলো বুঝতে পারছি না।
সরজমিনে দেখা যায়, কামাল আতার্তুক এভিনিউতে কিছুটা ঢুকতেই চোখে পড়ে ‘ঢাকা-চাকা’র একটি কাউন্টার ও স্টপেজ। ওই স্টপেজ থেকে গুলশান-২ ও নতুন বাজারের উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত বেশ কয়েকজন যাত্রী নিয়ে গত বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা ৩৩ মিনিটে একটি বাস ছেড়ে যায়। প্রায় আধঘণ্টা পর ১১টা ৫৭ মিনিটে আসে পরবর্তী বাস (ঢাকা মেট্রো-ব-১২-০১১০)। দাঁড় করিয়ে অতিরিক্ত ৬ যাত্রী নিয়ে ওই বাসটি ছেড়ে যায় ১২ টায়। বাসগুলোতে চালকের চেম্বারে যাত্রী বসার কথা না থাকলেও সেখানে বসানো হয় আরো ৫ মহিলা ও শিশু। পরের বাসটি ২ মহিলাসহ অতিরিক্ত ১১ যাত্রী নিয়ে ১২টা ৬ মিনিটে ওই স্টপেজ ত্যাগ করে। একইভাবে পরের বাসটি ছাড়ে ১২টা ২১ মিনিটে। সেখানে ব্যবস্থাপনার বিষয়টি তদারকি করছিলেন বাস নামানো নিটল-নিলয়ের কর্মকর্তা কুতুব উদ্দিন স্বপন। এসব অব্যবস্থাপনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথম দিকে আমরা ১০টি বাসা নামাতে পেরেছি। কিছু দিনের মধ্যে আরো ১০টা নামানো যাবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৪০টি বাস নামানোর পর আর এ সমস্যা থাকবে না। একটি বাসে এখনও এসি লাগানো হয়নি এবং দু’একটিতে নষ্ট হওয়া এসি ঠিক করা হবে। তবে বাসে এসি থাকায় দাঁড়িয়ে যেতে অতিরিক্ত যাত্রীদের খুব অসুবিধা হচ্ছে না। কাকলী মোড় ও নতুন বাজার মোড়ে গাড়ি ঘুরতে সিগনাল ও যানজটে পড়তে হচ্ছে। এজন্য স্টপেজে পৌঁছাতে ও ছাড়তে দেরি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
নিটল নিলয় গ্রুপের অপর কর্মকর্তা শাহিদ হোসেন রুবেল বলেন, সিগন্যাল ও যানজটে পড়ে মাঝেমধ্যে ১ ঘণ্টা পর্যন্ত দেরি হচ্ছে। প্রতিটি রুটে রাস্তার উভয় পাশে ৪টি করে স্টপেজ রয়েছে। তবে যে স্টপেজ থেকে উঠানামা হোক না কেন ভাড়া ১৫ টাকাই। এসি ও সিটিং বাসের জন্য এই ভাড়া বেশি নয় বলে দাবি করেন তিনি।
কাকলী মোড় থেকে কিছুটা এগুলেই গুলশানে ঢোকার পথে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ভবনের সামনে চোখে পড়ে আরো একটি স্টপেজ। বেলা সাড়ে ১২টায় দেখা যায়, সেখানেও বিক্রি হচ্ছে টিকিট। লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন ১৩ যাত্রী। পরবর্তী আধ ঘণ্টায় তাদের ইশারায় ককলী থেকে ছেড়ে আসা ৩টি বাসের একটিও থামতে দেখা যায়নি।
টিকিট কেটে অপেক্ষারত যাত্রী নুরুল হক বলেন, আমি আধ ঘণ্টা হাঁটলে নতুন বাজার পৌঁছে যেতে পারতাম। কিন্তু টিকিট কেটে অসুবিধায় পড়েছি। আধঘণ্টায় আসা ৩টা বাস আমাদের না নিয়েই চলে গেল। অবশ্য অতিরিক্ত যাত্রীতে ঠাসা গাড়িগুলোতে দাঁড়ানোর উপায়ও ছিল না।
এদিকে গত বুধবার উদ্বোধনের পর গুলশান, বনানী, বারিধারা, নিকেতন সোসাইটিতে নামানো হলুদ রংয়ের বিশেষ রিকশা চলাচলেও রয়েছে নানা অব্যস্থাপনা। ঘোষণা দেয়া হলেও গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত নামেনি ৫০০ রিকশার সবগুলো। কয়েকগুণ পুরোনো রিকশার ভিড়ে বনানীর ৪, ১৪, ২১ ও ২৩ নম্বর রোডে হাতেগোনা কয়েকটি নতুন হলুদ রংয়ের রিকশা দেখা গেছে। তবে ওই রিকশাগুলোতে কথা অনুযায়ী ভাড়ার চার্ট, নম্বর প্লেট ও মোবাইল নম্বর লাগানো হয়নি। চালকের নেই নির্ধারিত পোশাকও। তবে গুলশানে নির্ধারিত ২০০ রিকশার মধ্যে নামানো হয়েছে ১০০টি। বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশান-২ এর ৪টি সড়ক ঘুরে ৩টিতে বিশেষ রিকশা দেখা যায়নি। বীর উত্তম ক্যাপ্টেন সাহাব উদ্দিন আহমেদ সড়কে ৪২টি পুরোনো রিকশার ভিড়ে ২টি বিশেষ রিকশা চোখে পড়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় হলুদ রংয়ের রিকশার পরিমাণ অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বনানী সোসাইটির রিকশাচালক (বিশেষ রিকশা নং-৩২৬) আশরাফুল ইসলাম বলেন, এখনও ভাড়ার চার্ট, মোবাইল নম্বর লাগানো হয়নি। ট্রেনিংও পরে দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
গুলশানের রিকশাচালক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, হলুদ রংয়ের রিকশা দেখলে যাত্রীরা নিজ থেকে আগে আমাদের রিকশায় উঠছে। অন্য রিকশায় ভাড়া আমাদের চেয়ে বেশি হওয়ায় বলে কয়ে আমরাও ৫ টাকা বেশি নিচ্ছি।
গুলশান সোসাইটির মহাসচিব ব্যারিস্টার ওমর সাদাত মানবজমিনকে বলেন, নতুন চালু করা এই বাস ও রিকশা সার্ভিসে নানা অব্যবস্থাপনা রয়ে গেছে। আশা করি সপ্তাহ-দশ দিনের মধ্যে তা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে।