রাকা থেকে পালিয়ে আসার পরিকল্পনা নিয়ে পরিবারের সঙ্গে তিনি যোগাযোগও করেছিলেন। খাদিজার পরিবারের এ দাবি যুক্তরাজ্য সরকার নিশ্চিত করতে পারেনি বলে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়। আইটিভির খবরে বলা হয়, রাকায় অবস্থানরত কিছু ব্যক্তি খাদিজার পরিবারকে তার মৃত্যুর সংবাদ দিয়েছে। আইটিভি নিউজকেও একটি বিবৃতিতে এই ঘটনা নিশ্চিত করেছে তারা। ধারণা করা হচ্ছে, খাদিজা একটি আবাসিক ভবনে ছিলেন। তাতে বিমান হামলা হলে মৃত্যু হয় তার।
খাদিজার পারিবারিক আইনজীবী তাসনীম আকুঞ্জি বিবিসি নিউজনাইটকে বলেন, কয়েক সপ্তাহ আগে তারা খাদিজার মৃত্যুর সংবাদ শুনেছেন। তবে সিরিয়ার বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে তারা নিরপেক্ষভাবে এই সংবাদ যাচাই করতে পারেননি। আকুঞ্জি জানান, খাদিজার আইএসে যোগ দেয়ার মোহভঙ্গ হয়েছিল এবং তিনি আইএস ছেড়ে যুক্তরাজ্যে ফিরে আসতে চাইছিলেন। তবে ফিরে আসার প্রক্রিয়ায় কোনো কারণে ধরা পড়ে গেলে তার জন্য ‘নৃশংস’ শাস্তি পেতে হবেÑ এই ঝুঁকি তিনি নিতে চাননি। আকুঞ্জি জানান, খাদিজার মৃত্যুর সংবাদে তার পরিবার ‘ভেঙে পড়েছে’ এবং এটা ‘সবার জন্যই অপূরণীয় একটি ক্ষতি’। খাদিজা ফিরে আসতে চেয়েছিলেন জানিয়ে তাসনীম আকুঞ্জি বলেন, ‘সমস্যা হলোÑ সেখান থেকে ফিরে আসার ঝুঁকি অনেক বেশি। কোনোভাবে ধরা পড়ে গেলে তার জন্য কঠিন শাস্তি পেতে হয়। যখন সে ফিরে আসার জন্য চেষ্টা করছিল ওই সময়েই অস্ট্রিয়ার একটি মেয়ে আইএসের অঞ্চল ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ধরা পড়ে। তাকে সবার সম্মুখে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। এই খবর সবাইকেই জানিয়ে দেয়া হয়। এটা জানার পরই সে ফিরে আসার ঝুঁকি নেয়ার সাহস করতে পারেনি। আমার মনে হয়, যে ধরনের প্রোপাগান্ডা শুনে সে সিরিয়া গিয়েছিল, খুব দ্রুতই সে বুঝতে পারে যে বাস্তবতা তার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।’ একই ধরনের কথা জানান খাদিজার বোন হালিমা সুলতানা। হালিমার সঙ্গে ফোনে কথা হয় খাদিজার। আইটিভির জন্য তাদের কথপোকথন ধারণ করে একজন ফ্রিল্যান্সার সাংবাদিক। ওই কথপোকথনে খাদিজা জানান, সে যে ব্যক্তিকে বিয়ে করেছিল সে নিহত হয়েছে। আর তিনি যুক্তরাজ্যে ফিরেও আসতে চান। তবে এটা নিয়ে খুব ‘ভীত’-ও ছিলেন খাদিজা। ফোনে তিনি বলেন, ‘কিছু একটা হয়ে গেলে আর আমি কখনই ফিরে আসতে পারব না।’ বোনের মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার পর হালিমা বলেন, ‘কোনো না কোনোভাবে এটা আমরা প্রত্যাশাই করছিলাম। আমরা চাই না, তার নাম আবার শিরোনামে আসুক। সে চলে গেছে এবং আমরা তার ইচ্ছাকে সম্মান জানাতে চাই।’ গত বছরের ১৭ই ফেব্রুয়ারি সহপাঠী শামিমা বেগম ও আমিরা আবাসিকে সঙ্গে নিয়ে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় খাদিজা সুলতানা। ওই সময়ে তার বয়স ছিল ১৬ বছর। তার দুই সহপাঠীর বয়স ছিল ১৫ বছর। দুই বান্ধবীর মধ্যে শামীমা বেগমও একজন বাংলাভাষী। তারা তিনজনই পূর্ব লন্ডনের বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় বেথনাল গ্রিন একাডেমি নামের একটি স্কুলের ‘এ’ লেভেলের ছাত্রী ছিলেন। গ্যাটউইক বিমানবন্দরের সিসিটিভি ক্যামেরায় তাদের একসঙ্গে দেশ ছাড়ার ছবি ধরা পড়ার পর আলোচনায় আসে এ তিন ছাত্রী। গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অনলাইনে জঙ্গি প্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে ওই তিন কিশোরী আইএস এর কথিত জিহাদীদের বিয়ে করতে পরিবার ও দেশ ছাড়ে।