সম্পাদকীয়: পুলিশ হলে গ্রেফতার সচিব হলে মুক্তি!

Slider জাতীয় ফুলজান বিবির বাংলা সম্পাদকীয়

227e961cc307f70c3d032a344e8fed1f-bangladesh-goverment

 

 

বাংলাদেশে এই প্রথম একটি নতুন খবর হল এক সাথে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকুরী নেয়ার অভিযোগে ১৯ পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।  আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এটি একটি ইতিবাচক খবর। খবরে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধার প্রজন্ম হিসেবে তারা ভূয়া সনদ জমা দিয়েছেন।

খবরের ফলোআপ হয়েছে, ওই ভূয়া সনদ গুলো সরবরাহ করেছেন একজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার। আমরা আশা করি দুদক নিরপেক্ষভাবেই এই আলোচিত ব্যাতিক্রম ধর্মী অপরাধের সঠিক তদন্ত করবেন। আর আদালত ন্যায় বিচার করবে এটা নিশ্চিত আশার মধ্যে পড়ে।

এই  প্রসঙ্গে একটি   অভিযোগ জনমনে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে ভিন্ন ভাবে। তা হল, নিজেরা ভূয়া সনদ জমা দিয়ে চাকুরী ও পদোন্নতি নিয়েছিলেন ৪জন সচিব। একটি প্রজতন্ত্রের সর্বোচ্চ পদের ওই চার সচিবকে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয় জাল সনদে চাকুরীর অভিযোগ এনে তাদের সনদ বাতিল করেছেন। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় তাদেরকে সেচ্চায় চাকুরী থেকে অবাহতি দিয়েছেন। তারা বর্তমানে অবসরে রয়েছেন ও  যাবতীয় দেনা পাওনা মিটিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন।

দুদক চার সচিবের জাল সনদ ধরা পরার  সময় বলেছিল, তাদের কাছে লিখিতভাবে কোন অভিযোগ আসেনি। আসলে দেখবেন। এরপর ওই চার সচিব  চাকুরী ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হলেন। কিন্তু দুদক কোন ফৌজদারী আইনে ব্যবস্থা তো নেয়নি এমনকি এই বিষয়ে তারা কোন কাজই করেননি। অথচ দুদুক ব্যবস্থা নিবে বলে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী জনগনকে আশ্বস্থ করেছিলেন। কিন্তু এরপর আর কোন কথা কেউ বলেনি।

সম্প্রতি ভূয়া সনদে চাকুরী নেয়ার অভিযোগে সদ্য চাকুরী প্রাপ্ত ১৯ পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার করে মামলাও করেছে দুদক। প্রজন্ম হিসেবে অন্যের দেয়া ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকুরী নিয়ে চাকুরী হারানোর আগেই গ্রেফতার হলেন ১৯ পুলিশ সদস্য। আর নিজে মুক্তিযুদ্ধ না করে ভূয়া সনদ দিয়ে চাকুরী ও পদোন্নতি  নিয়ে বীরের বেশে অবসরে চলে গেলেন চার সচিব।  তাদের বিরুদ্ধে দুদক কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

বাংলাদেশের একটি সংবিধান আছে। এই সংবিধানমতেই দেশ এখনো চলছে। দুদকের অবকাঠামোটাও সংবিধান মতেই তৈরী। সংবিধান মতে একজন সচিব ও একজন পুলিশ সদস্য উভয়েই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। সরাসরি ভূয়া সনদে চাকুরী করে সুস্থ ও সম্মানজনক  ভাবে ঘরে   ফিরে গেলেন চার সচিব। আর অন্যের দ্বারা প্রতারিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধা প্রজন্মের ভূয়া সনদ দিয়ে চাকুরী নেয়ার পর গ্রেফতার হলেন ১৯ পুলিশ সদস্য। একটি দেশে একটি আইন দুই ভাবে প্রয়োগের একটি উদাহরণ সৃষ্টি করল দুদক। কেন দুদুক এই কাজটি করল তার ব্যাখা দুদকই জানে। তবে আপাতত মনে হচ্ছে, পুলিশ অপরাধ করলে গ্রেফাতার হবে আর সচিব করলে হবে না। এটা অসাংবিধানিক সিদ্ধান্ত। দুদকের উচিত ছিল একই ধরণের দুটি অপরাধের তদন্ত একই চোখে সম্পন্ন করা।

নিজের কাজের স্বীকৃতিতে শত প্রশ্নবিদ্ধ দুদুক জনগনের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করতে করতে এখন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের মধ্যে বিবেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছেন বলেই বলাবলি শুরু হয়েছে। এই কাজটি দেশের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশংকা রয়েছে।

জাতি আশা করে, দুর্নীতি দমন কমিশনের দুর্নীতি দূর করতে যাওয়ার আগে নিজেদের দুর্নীতি দূর করা প্রয়োজন। রাষ্ট্রের এক এক নাগরিকের জন্য আইনের এক এক রকম প্রয়োগ ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের মধ্যে দুচোখো আচরণ দেশের ন্যায় বিচারকে বাঁধাগ্রস্থ করতে পারে। একই সঙ্গে সরকারের সঙ্গে প্রজাতন্ত্রের দূরত্ব তৈরী হওয়ার আশংকা রয়েছে। প্রত্যাশা থাকবে,  অচিরেই এই বিষয়টির সু্ষ্ঠু সমাধান হওয়া উচিত।

ড. এ কে এম রিপন আনসারী

এডিটর ইনচীফ

গ্রামবাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *