রক্তের ঋণ শোধ করতে হবে

Slider টপ নিউজ

26647_f3

 

সরকারি কর্মচারীদের সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার মাধ্যমেই তার এবং ৩০ লাখ শহীদের রক্তের ঋণ শোধ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশে বলেন, আমরা জনগণের সেবক, জনগণের সেবা করবো। জনগণের রক্ত ঘামঝরা অর্থ দিয়েই তো আমাদের বেতন-ভাতা, আমাদের সবকিছু। এই কথাটা এক মুহূর্তের জন্যও যেন আমরা ভুলে না যাই। জনগণের সেবা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মানুষের সেবার মতো শান্তি দুনিয়ায় আর কিছুতে নেই। কোনো দিন গরিব-দুঃখীর ওপর অত্যাচার করবেন না। প্রধানমন্ত্রী স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি সম্পর্কে বলেন, ‘এ উদ্যোগের মতো মহৎ আর কিছু হতে পারে না। জাতির পিতা আমাদের রক্তঋণে আবদ্ধ করে গেছেন, লাখো শহীদ আমাদের রক্তঋণে আবদ্ধ করেছেন। তাদের রক্তের ঋণ আমাদের শোধ করতে হবে। আপনারাও রক্ত দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচান, মানুষের পাশে দাঁড়ান। অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী বক্তৃতা করেন। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে গিয়েই জাতির পিতা জীবন দিয়ে গেছেন। এই ওয়াদা তিনি ৭ই মার্চের ভাষণসহ বহু জায়গায় করেছেন এবং জীবন দিয়ে, রক্ত দিয়ে সেই ওয়াদাই তিনি পালন করে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ের কর্মচারীদের উদ্দেশে বলেন, আজ আপনারা একটি মহৎ কাজ করতে যাচ্ছেন- রক্তদান। একজন রক্ত দেবেন আর একটি মানুষের জীবন বাঁচাবেন। রক্ত দিলে কোনো ক্ষতি না হয়ে শরীরের জন্য উপকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিয়মিত রক্ত দিলে শরীরে নতুন রক্তকণিকা জন্মে এবং শরীর ভালো থাকে। নিজেও ৫৬-৫৭ বছর বয়স পর্যন্ত নিয়মিত রক্ত দিতেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি দেশে ফেরার পর থেকে ১৫ই আগস্ট উপলক্ষে প্রতিবছর আয়েজিত রক্তদান কর্মসূচিতে নিজেও রক্ত দিয়েছেন। এখন বয়স হয়ে যাওয়ায় ইচ্ছে থাকলেও আর দিতে পারেন না। রক্ত দেয়ার যদি সুযোগ থাকতো তাহলে আমি এখনও রক্ত দিতে প্রস্তুত।
প্রধানমন্ত্রী সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশে বলেন, যেকোনো কাজ আমরা হাতে নেই না কেন তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব আপনাদের ওপর অনেকাংশে বর্তায়। কাজেই আপনারা আন্তরিকতার সঙ্গে সেই কাজ সম্পাদন করবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার গঠনের সময় বলেছি, আমরা জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করবো। আমাদের চেষ্টা মানুষের কল্যাণে কাজ করা, দেশের উন্নয়নে কাজ করা। আমরা জনগণের সেবক, জনগণের সেবা করবো। জনগণের রক্ত ঘাম ঝরা অর্থ দিয়েই তো আমাদের বেতন-ভাতা, আমাদের সবকিছু। এই কথাটা এক মুহূর্তের জন্যও যেন আমরা ভুলে না যাই। তিনি বলেন, একাত্তরের আগে তৎকালীন পূর্ববঙ্গে বাঙালির কোনো অধিকার ছিল না। বঙ্গবন্ধু সব সময় বাঙালির অধিকার আদায়ের কথা বলেছেন। সে কারণে তাকে নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়েছে, তাকে ফাঁসি পর্যন্ত দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল। রাষ্ট্রের দায়িত্ব নেয়ার পরও তিনি সব সময় ন্যায্য অধিকারের কথা বলেছেন। শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন। যুদ্ধজয়ের পর মাত্র তিন মাসের মধ্যে ভারতের সৈন্য ফেরত পাঠানো হয়েছে। এ সময় তিনি বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে সম্মিলিত যুদ্ধজয়ের পর মিত্রবাহিনী দেশে থেকে যাওয়ার নজির উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শুধু স্বাধীনতা এনেই দেননি। মানুষের মুক্তির জন্য ব্যাপক কর্মসূচিও হাতে নিয়েছেন। যুদ্ধের পর এ দেশে রাস্তাঘাট, পুল, কালভার্ট ছিল না। ছিল না অবকাঠামোগত কিছুই। জাতির পিতা সেই বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলেছেন। আমাদের একটি সংবিধান দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায় এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য করে গেছেন বাংলাদেশকে। প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেন, যেসব আন্তর্জাতিক শক্তি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, পরে তাদের ষড়যন্ত্রেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। আমার মা ফজিলাতুন নেছা, আমার ভাই শেখ কামাল, জামাল, ছোট্ট রাসেলকেও তারা হত্যা করেছিল। এ সময় প্রধানমন্ত্রী জিয়াউর রহমানের ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের পথ রুদ্ধ করে তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা এবং দেশের কারাগারে আটক বিচারাধীন যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে তাদের রাজনীতিতে পুনর্বাসনের তীব্র সমালোচনা করেন। পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্টের বিয়োগান্তক অধ্যায়ের স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের এই কষ্ট, দুঃখ, ব্যথা-বেদনা ভুলেও দেশের জন্য, মানুষের জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করার যে চেষ্টা করে যাচ্ছি- এখানে আপনাদের সহযোগিতা সব সময় কামনা করি। দেশের সেবা করা যেকোনো সরকারি কর্মচারীদের একান্তভাবে দায়িত্ব। উদ্বোধনী পর্ব শেষে প্রধানমন্ত্রী রক্তদান কর্মসূচি ঘুরে দেখেন এবং স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *