গ্রাম বাংলা ডেস্ক: বর্তমান সরকার অবৈধ মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, আওয়ামী লীগ হলো মুনাফেক, বেইমান। নারায়নগঞ্জের সেভেন মার্ডার ঘটনায় আওয়ামীলীগ সভানেত্রী জড়িত। তিনি সব জানেন। র্যাবের কর্মকর্তা জিয়াকে আটকের দাবী জানিয়ে তিনি বলেন, এই কর্মকর্তা ও সবই জানে। তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব বের করা যাবে। কিন্তু আসল ঘটনা বের হয়ে যাবার ভয়ে সরকার তাকে আটক করছে না।
এদের কাছে দেশ ও দেশের মানুষের চেয়ে টাকা বড়। তাই দেশ রক্ষায় এদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহবান জানান তিনি।
আজ মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিয়াজ মুহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ২০ দলীয় জোট আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিকেল ৫ টা ১৬ মিনিটে তিনি বক্তব্য শুরু করে সন্ধ্যা প্রায় ৬ টার দিকে বক্তব্য শেষ করেন।
সভায় খালেদা বলেন, দেশে বর্তমানে যারা জোর করে ক্ষমতায় আছে তাদেরকে জনগন ভোট দেয়নি। তারপরও তারা সংসদে কথা বলছে। নিজেরা সংবিধান লংঘন করছে।
খালেদা বলেন, নারায়নগঞ্জের সেভেন মার্ডার ঘটনায় আওয়ামীলীগ সভানেত্রী জড়িত। তিনি সব জানেন। র্যাবের কর্মকর্তা জিয়াকে আটকের দাবী জানিয়ে তিনি বলেন, এই কর্মকর্তা ও সবই জানে। তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব বের করা যাবে। কিন্তু আসল ঘটনা বের হয়ে যাবার ভয়ে সরকার তাকে আটক করছে না।
বিএনপির সাথে থাকায় জামায়াতকে নানাভাবে অপবাদ দেয়া হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই আওয়ামীলীগ এক সময় জামায়াতের সাথে ছিল। তখন জামায়াত যুদ্ধাপরাধী ছিলনা। অথছ এখন বিএনপির সাথে থাকায় জামায়াতের ওপর নানা অপবাদ চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, হাসিনা নাকি বিক্রি হন না। অথচ ৮৬ সালে এরশাদের সাথে নির্বাচনে গিয়ে তিনি যে বিক্রি হন তা প্রমান করেছেন। তিনি বলেন বিএনপি জোট ঐক্যবদ্ধ আছে এবং থাকবে। এছাড়া দেশ রক্ষায় মানুষ আজ আরো বেশী ঐক্যবদ্ধ হবে।
তিনি বলেন, বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিয়ে দেশে একদলীয় শাসন কায়েম করার চেষ্টা চলছে। এ আইন বাতিলের দাবী জানিয়ে তিনি বলেন, এরজন্য প্রয়োজনে যে কোন কর্মসূচী দেয়া হবে।
খালেদার অভিযোগ, ১/১১ পর হাসিনার বিরুদ্ধে যতো মামলা হয়েছিলো সবই তুলে নেয়া হয়েছে। অথচ তারা বিএনপির সব মামলা ঝুলে রেখেছে। তিনি বলেন হাসিনার গ্রেফতারকে আমি ভয় পাইনা। মঈনের গ্রেফতারকে ও ভয় পাইনি বলে দেশ ছেড়ে যাইনি।
খালেদা বলেন, এই আওয়ামীলীগ কথায় কথায় দুর্নীতির কথা বলে। অথচ তারা শেয়ার বাজার, ডেশটিনি, হলমার্কসহ বিভিন্ন ব্যাক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পাঠিয়েছে। আর অর্থমন্ত্রী বলছেন এগুলো সামান্য টাকা। কিন্তু এখন তিনি আবার বলছেন ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে গেছে। এই সত্য কথার জন্য অর্থমন্ত্রীকে তিনি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এসবের জন্য আওয়ামীলীগকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
বিদ্যুৎ খাতে লুটপাট হয়েছে মন্তব্য করে খালেদা বলেন, এ সরকার বিদ্যুৎ নিয়েও মিথ্যাচার করছে। দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ালেও তার ঘাটতিন সমাধান করতে পারেনি। তিনি বলেন তারা কৃষকদের বিনামূল্যে সার দেবার কথা বললেও এখন তিনগুন দামে সার বিক্রি করছে।
তিনি বলেন, টেলিভিশনে প্রচার হয়েছে মসজিদ-মন্দিরের নামে বরাদ্ধ করা টাকা সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা অতœসাত করছে। এছাড়া রাস্তাঘাট ঠিক করার নামে কোটি কোটি টাকা তুলে নিলেও রাস্তাঘাটের কোন উন্নয়ন হয়নি। খালেদা আওয়ামীলীগকে হাটি হাটি খাই খাই মন্তব্য করে বলেন, তারা যা পায় তাই খায়।
দেশে যেভাবে গুম-খুন হচ্ছে তার বিহীত করতে হলে জনগণকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে খালেদা বলেন, এটা একা কোন দলের কাজ নয়। এটা সবার কাজ। পিলখানায় সেনা অফিসার হত্যা মামলার তদন্ত দাবী করে তিনি বলেন, এর সঠিক তদন্ত করলে সরকারের সম্পৃক্ততা বেরিয়ে যাবে বলে তারও তদন্ত হয়নি।
তিনি বলেন, আলেমরা তাদের বিভিন্ন দাবী দাওয়া নিয়ে শাপলা চত্বরে গিয়েছিলেন কিন্তু সেদিন শেষ রাত্রে এই আলেমদের উপর হামলা করে বহু আলেম ও এতিমকে তারা হত্যা করেছে। তারা কোরআন শরিফ পুড়িয়ে আলেমদের উপর দোষ চাপিয়েছে।
তিনি এ সরকারকে খুনি সরকার অখ্যায়িত করে বলেন, যার হাতে সেনা অফিসার, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও আলেম ওয়ামাদের রক্ত লেগে আছে তারা খুনি। তিনি বলেন আগামীতে এসব খুনিরা আপনাদের কাছে আসলে এদেরকে ক্ষমা করবেন না।
তিনি দিগন্ত, ইসলামী টিভি ও চ্যানেল ওয়ান বন্ধের সমালোচনা করে বলেন, তারা ভয় পায় বলেই আজ সম্প্রচারনীতি করেছে। তিনি বলেন আমি কোন জেল ভয় পাইনা। তবে যা করবেন চিন্তা করে করবেন। কারণ একদিন আপনাদেরও জেলখানায় জায়গা হবে।
তিনি পুলিশ প্রশাসনকে নিরপেক্ষ আচরনের আহবান জানিয়ে বলেন, আপনারা ছাত্রলীগের মতো আচরন করবেন না। আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা করবেন না। কারণ পুলিশের সাথে আমাদের কোন শক্রতা নয়। তিনি র্যাব বন্দের দাবী জানিয়ে বলেন, র্যাব এখন পচে গেছে। এজন্য এদের বিলুপ্ত করতে হবে।
দেশে বিনিয়োগের বিষয়ে খালেদা বলেন, এ সরকার দেশের মানুষকে নিরাপত্তা দিতে পারেনা। বিদ্যুৎ দিতে পারেনা। গ্যাস দিতে পারেনা। তাই বিদেশীরা আর এখানে বিনিয়োগ করতে আসেনা। এজন্য দেশকে মুক্ত করতে তিনি সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পাশের মন্তব্য করে খালেদা বলেন, এরা নিজেদের সফলতা দেখাতে প্রশ্ন পাত্র ফাঁস করে গণহারে পাশের হার বাড়িয়ে মেধাকে ধ্বংশ করে দিচ্ছে। ফলে মেধাশূন্য হয়ে পড়ছে দেশ।
এর আগে দুপুর ২টা থেকে জনসভা শুরু হলে খালেদা তাতে যোগ দিতে ঢাকা থেকে যাত্রা করেন। সেখানে পৌছে কিছুক্ষন স্থানীয় সার্কিট হাউসে বিশ্রাম নেন। পরে বিকেল পৌনে ৫ টায় খালেদা জিয়া সভাস্থলে উপস্থিত হন।
সভায় ২০ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।