বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে সমন্বয় বৃদ্ধির সুপারিশ

Slider জাতীয় সারাদেশ

227e961cc307f70c3d032a344e8fed1f-bangladesh-goverment

২০২১ সালে মধ্য আয়ের দেশ (এমআইসি) হিসেবে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য সামনে নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের জোরালো ভূমিকা রাখতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। এ জন্য বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে কর্মরত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে শ্রম ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয় জোরদার করতে হবে।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়েছে।

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, মিশনে কর্মরত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয় বাড়াতে ওই মন্ত্রণালয়গুলোর মাধ্যমে নির্দেশ দেওয়া হবে।
গুলশানের রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে বৈঠকে সন্ত্রাসবাদ দমন ও নিরাপত্তার প্রসঙ্গটি নিয়ে কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। সন্ত্রাসবাদ দমনের বৈশ্বিক উদ্যোগে বাংলাদেশের জোরালো ভূমিকা রাখার ব্যাপারে কমিটিতে আলোচনা হয়েছে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সাংসদ মুহাম্মদ ফারুক খান বৈঠকের পর প্রথম আলোকে বলেন, ‘হলি আর্টিজান বেকারির হামলার পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কীভাবে কাজ করেছে, তা নিয়ে কমিটির কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে বিদেশিরা যে সহযোগিতার ‍আশ্বাস দিয়েছে, সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়াতে বিভিন্ন বন্ধুরাষ্ট্রের কাছ থেকে গোয়েন্দা তথ্য দেওয়া-নেওয়া এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা নেওয়া যায় কি না, সেটা বিবেচনার পরামর্শ দিয়েছি।’
ফারুক খান জানান, ইতিপূর্বে বিভিন্ন দেশে মিশনগুলোতে সাংস্কৃতিক শাখার পরিবর্তে বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মতো সাংস্কৃতিক কেন্দ্র চালুর সুপারিশ করা হয়েছে। এ জন্য দ্রুত কলকাতা, লন্ডন ও নিউইয়র্কে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র চালু করতে বলা হয়েছে।
মুহাম্মদ ফারুক খান জানান, গণভোটের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হওয়ার পর বাংলাদেশের ওপর এর প্রভাব নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২১ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে বাংলাদেশ। আর্থসামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বে অনেকে উল্লেখ করছেন। এ পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জোরালো ভূমিকা নিতে হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনবল বাড়ানো, প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক সুবিধা বাড়ানো প্রয়োজন। কয়েক বছর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনবল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তা পুরোপুরি কার্যকর হচ্ছে না। অথচ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে মিশনের শাখাগুলোতে অন্য মন্ত্রণালয়ের জনবল বাড়ানো হচ্ছে। এর পাশাপাশি বিদেশের মিশনগুলোতে কাজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শাখার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। এ বিষয়গুলো আলোচনার পর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় জোরদারের সংশ্লিষ্ট অন্য মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এ নিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।

এদিকে মন্ত্রণালয় উপস্থাপিত বৈঠকের কার্যপত্রে বলা হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশ মিশনগুলো পরিচালনায় পাঁচটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলো হলো সমন্বয়হীনতা, জনবল–সংকট, মিশনে কর্মরত ব্যক্তিদের সন্তানদের জন্য শিক্ষা ভাতা কম, বৈদেশিক ভাতা ও আপ্যায়ন ভাতা সময়োপযোগী নয় এবং মিশনগুলোতে প্রয়োজনীয় রসদের অপ্রতুলতা।
বৈঠকের পর সংসদ সচিবালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সংসদীয় কমিটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা–কর্মচারীদের শিক্ষা ভাতা এবং বৈদেশিক ভাতা ও আপ্যায়ন ভাতা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোর কাজে গতি আনতে মিশনগুলোর সব শাখা প্রধানদের মিশন প্রধানের নিদের্শনা অনুযায়ী কাজ করার সুপারিশ করে। এ ছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনবল–সংকট দূর করতে শূন্য পদে শিগগিরই নিয়োগ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করে।
সংসদীয় কমিটির বৈঠকে কমিটির সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, সাংসদ কাজী নাবিল আহমেদ, পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক এবং মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *