দক্ষিণাঞ্চলের শ’ শ’ গ্রাম ভাসছে বানের পানিতে

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি জাতীয়

25945_b1

 

উত্তরাঞ্চলের বন্যার পানি, জোয়ারের পানি বৃদ্ধির ফলে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কয়েকশ গ্রাম তলিয়ে গেছে পানিতে। শুধু নিম্নাঞ্চল নয় মহানগরীর অনেক এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। স্রোতের কারণে নদী ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে গেছে। অনেক এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে দুর্যোগ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন তারা। বরিশালের জেলা প্রশাসক ড. গাজী সাইফুজ্জামান গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বন্যা ও ভাঙনকবলিত অনেক এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেছেন, এখানে বন্যা হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়েছে। তবে  স্রোতের তীব্রতা নদীর পাড় ভাঙছে। ভাঙনের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি সদর উপজেলার চরবাড়ীয়া ও চরকাউয়া এলাকায়। চরকাউয়া ইউনিয়নের ৮টি পরিবার নদী ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়েছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই সব ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে। ১৫ বুধবার পানি বিপদসীমার ৪ থেকে ৬ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও গতকাল ৬ দশমিক ৩ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রমজান আলী। শুধু বরিশাল নয় বিভাগের অধিকাংশ গ্রামই পানিতে তলিয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে ফসল। ক্ষতি হয়েছে মৎস্য খামারের। হিজলা উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। একের পর একর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেকের মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৬ থেকে ৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে শহরের প্রধান প্রধান সড়কে পানি উঠেছে। কলাবাগান ও পূর্ব চাঁদকাঠি জেলে পাড়া এলাকাসহ জেলার ৪ উপজেলার নদী তীরবর্তি বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নদী তীরবর্তি চরাঞ্চলের বাসিন্দারা। আমন ধানের বীজতলাসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানের মাছের ঘের তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিষখালী নদী তীরবর্তী রাজাপুরের বড়ইয়া, শৌলজালিয়া, কাঠালিয়ার আমুয়া, পাটিখালঘাটা, সুগন্ধা নদী তীরবর্তী নলছিটির মোল্লারহাট ও দপদপিয়া ইউনিয়নসহ এসব উপজেলার শতাধিক গ্রামের কমপক্ষে চার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীর পানি বৃদ্ধিতে আবাসিক এলাকায় হাঁটু সমান পানি হয়েছে। তলিয়ে গেছে বাসার ফ্লোর, রান্না ঘর, পায়খানা। স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা। সাপ আতঙ্কে রাত যাপন করতে হচ্ছে খাটের উপরে বসে। কিফাইনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতিয় শ্রেণির ছাত্র ইমন হোসেন জানায়, হাঁটু সমান পানি পার হয়ে স্কুলে যেতে হচ্ছে। অনেক সময় বই-খাতা ও স্কুল ড্রেস ভিজে যায়। ঠিকমতো ক্লাস করতে পারি না। কলাপাড়ায় জোয়ারের পানিতে ভাসছে গ্রামের পর গ্রাম। উপজেলার লালুয়া, মহীপুর, ধানখালী ও চাম্পাপুর ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন দু’দফা জোয়ারের পনিতে তলিয়ে যাচ্ছে ওইসব গ্রামের মানুষের বেঁচে থাকার শেষ আশ্রয়টুকু। গত কয়েক দিন ধরে বন্যানিয়ন্ত্রন বাঁধের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি প্রবেশ করে ফের বাড়ি-ঘর, ফসলি জমিসহ মাছের ঘের ৩/৪ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে কৃষকদের চাষাবাদ বন্ধ হয়ে আছে। অধিকাংশ মানুষ এখন অনেকটাই জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর গ্রামসহ তিন গ্রামের স্কুল-কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া আসা। এর পরও ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
এদিকে পানি বৃদ্ধিতে বড়ইয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ বড়ইয়া, বড়ইয়া, পালট, নিজামিয়া ও চল্লিশ কাহনিয়া এবং মঠবাড়ি ইউনিয়নের নাপিতেরহাট, মানকি, ডহরশঙ্কর ও বাদুরতলা বাজার, পুখরিজানাসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানসহ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েন। নদী তীরবর্তী দক্ষিণ বড়ইয়া নাসিমা খাতুন নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ অনেকগুলো বিদ্যালয় পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে পানির মধ্যে চলে পাঠদান, দেয়া হয় ছুটি। উপজেলার দক্ষিণ বড়ইয়া ও দক্ষিণ পালট গ্রামের বাঁধ ভেঙে রোপা আমন ও আমনের বাজীতলাসহ নিমজ্জিত রয়েছে। কৃষকরা আমন বীজতলা রক্ষার জন্য নিজ উদ্যোগে ফসলি জমির মাটি কেটেই বাঁধ রক্ষার জন্য সংস্কারের চেষ্টা করলেও পানির স্রোতে তা রক্ষা করা যাচ্ছে না। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উল্লাহ বাহাদুর জানান, বিভিন্ন ফসল ও ধান চাষে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। বড়ইয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের (পালট) ইউপি সদস্য শাহাদাৎ হোসেন কাজল জানান, জোয়ারের সময় পানি বৃদ্ধিতে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এ ছাড়া নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাবে। এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মনিরউজ্জামান জানান, জরুরি ভিত্তিতে বিষখালি নদীতে বেড়িবাঁধ ও ভাঙনরোধ প্রয়োজন। এ জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে আবেদন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে জোয়ারের প্রভাবে কচা ও সন্ধ্যা নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় চার থেকে পাঁচ ফুট ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পিরোজপুুরের কাউখালী উপজেলার নদী তীরবর্তী ৫টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের অন্তত ২২ গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। জোয়ারের স্রোতের আঘাতে অনেকের ভিটেমাটি সরে যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *