প্রাণকৃষ্ণ বিশ্বাস প্রান্ত: বড়কর্তা বিপিনচাঁদ,বদনচাঁদ,পূর্ণচাঁদ সহ বেশ কয়েকজন ক্ষণজন্মা মহাপুরুষের পীঠস্থান আমাদের মালিখালী ইউনিয়ন। এ সকল মহাপুরুষদের পাশাপাশি যে সকল কীর্তিমান প্রতিভাবান ব্যক্তিত্বের নাম আমরা মালিখালীবাসী আমাদের মন ও মননে ধারনকরি তার মধ্যে নিরোদ বিহারী নাগ, গোপাল চন্দ্র বসু, মাধব চন্দ্র বাগচী, রমেশ চন্দ্র মন্ডল ও মোতাহার হোসেন হাওলাদারের নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। এঁদের মধ্যে যে মানুষটির বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব মালিখালীর ইতিহাসে গৌরবদীপ্ত মহিমায় চির ভাস্বর তিনি সর্বজন শ্রদ্ধেয় জননেতা রাজনৈতিক অংগনের চির ইমাকুলেট ফিগার প্রয়াত নিরোদ বিহারী নাগ। ‘আপোষহীন, দৃঢ় চেতনাদীপ্ত, নিরহংকারী, তুখোড় রাজনীতিজ্ঞ সর্বোপরি সমাজ সচেতন এক মহান ব্যক্তিত্বের নাম নিরোদ বিহারী নাগ।
পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলাধীন ২নং মালিখালী ইউনিয়নের সাচিয়া গ্রামে ১৯৩২ সালে জন্মগ্রহণ করেন।ছেলেবেলা থেকে মেধাবী ছাত্র হিসেবেই মালিখালীর মানুষের প্রিয়ভাজন ছিলেন তিনি। একজন প্রতিভাবান হিসেবে তিনিই মালিখালীর প্রথম ছাত্র যিনি ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল লাভে সমর্থ হন।মাত্র ২০ বছর বয়সে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রনেতা হিসেবে ১৯৫৩-১৯৫৪ ও ১৯৫৪-১৯৫৫ সালে পরপর দুই টার্ম ঢাকসু’র ভিপি নির্বাচিত হন। প্রসঙ্গত উল্লেখ করছিযে তিনি যখন ঢাকসু’র ভিপি ছিলেন তখন বর্তমান কৃষিমন্ত্রী অগ্নিকন্যা মতিয়া চৌধুরী ছিলেন জিএস। বরইবুনিয়ার মাটিতে স্মৃতিবিজড়িত মধুময় জীবন অতিবাহিত করেছেন আমাদের সকলের প্রিয় এই অগ্নিকন্যা। নিরোদ বিহারী নাগের সমসাময়িক এই মহীয়সী মানবীকে বরইবুনিয়ার মাত্র তিন কিলোমিটার দূরবর্তী নিরোদ নাগের পূন্যভূমি থেকে আমরা সকল নিরোদভক্ত জানাই শ্রদ্ধাভিনন্দন। নিরোদবিহারী নাগ যিনি ১৯৫৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ও ১৯৬৭ সালে এলএলবি পাস করেন। ১৯৬২ সালে ন্যাপ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নাজিরপুর-স্বরূপকাঠি নির্বাচনী এলাকা থেকে এমপি নির্বাচিত হন।
এ সময়ে তিনি স্বরূপকাঠি কলেজ প্রতিষ্ঠা সহ এ অঞ্চলের বেশ উন্নয়ন করেন।মাটিভাঙ্গা ডিগ্রী কলেজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও তাঁর যথেষ্ট অবদান।মাটিভাঙ্গা কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রথম মিটিং কাননচক গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়।সেখানে নিরোদ বিহারী নাগের সক্রিয় নেতৃত্বে বড়বড়িয়া ইউনিয়নের বড়বড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক শামসুদ্দিন আহম্মেদ (সচিব সাকুর আহমেদের পিতা),অটল বিহারী রায়, মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের পাঁচুমিয়া সহ মাটিভাঙ্গার স্থানীয় গন্যমান্য শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবৃন্দ এবং মালিখালীর তৎকালীন তরুন দীপ্যেন্দু রায় উপস্থিত ছিলেন।নিরোদ বিহারী নাগ ন্যাপের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন।১৯৬৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ও তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি একাধারে সুদর্শন ও সুবক্তা ছিলেন।দক্ষিন বাংলায় তিনি ছিলেন সর্বজন স্বীকৃত বাগ্মীপুরূষ। তাঁর মত সুবক্তা সমকালে পিরোজপুরের মাটিতে দ্বিতীয়টি দৃষ্টিগোচর হয়না।
মালিখালী ইউনিয়নের মানুষের শিক্ষার উন্নয়নে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। মালিখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ফলাফলের মানোন্নয়নে তাঁর অনবদ্য অবদান প্রশংসনীয়।বঙ্কিম মুখার্জী স্যারের স্নেহধন্য ছাত্র নিরোদ বিহারী নাগই ছিলেন মালিখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সফল প্রধান শিক্ষক।তাঁর প্রধান শিক্ষক থাকাকালীন সময়ে মালিখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বেশ কয়েকজন ছাত্র যশোর বোর্ডে স্টান্ড করেন তাদের মধ্যে ৮ম ও ১০ম প্লেস টি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।জগদীশ নামের এক ছাত্র পেয়েছিলেন ১০ম প্লেস।তাঁর সুদক্ষ পরিচালনায় মালিখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সুনাম সারা বাংলাদেশে আপন মহিমায় ছড়িয়ে পড়ে।তাঁর মত শিক্ষক এবং প্রশাসক বর্তমান সময়ে খুব কমই চোখে পড়ে।তাঁর আমলে ক্রীড়া নৈপুন্যে বিদ্যালয়টি বরাবরই ডিস্ট্রিক্ট চ্যাম্পিয়নের গৌরব ছিনিয়ে আনতে সমর্থ হয়েছে।নিরোদ বিহারী নাগ ব্যক্তি জীবনে ছিলেন সফল ক্রীড়াবিদ।বিশেষকরে ব্যাডমিন্টন খেলায় ছিল তাঁর নন্দিত নৈপুণ্য। ব্যাডমিন্টন খেলায় তাকে হারিয়েছে এমন কোন নজির পাওয়া যায়না। মালিখালী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় সৃষ্টির পেছনে ও রয়েছে তাঁর দূরদর্শীতাময় সুনিপুণ নির্দেশনা। বঙ্কিম মুখার্জী স্যার ও নিরোদ বিহারী নাগের উদ্যোগ বালিকা বিদ্যালয় সৃষ্টির মূল প্রেরণা। গোপাল চন্দ্র বসুকে এমএনএ করার ক্ষেত্রেও নিরোদ বিহারী নাগের জোরাল ভূমিকাছিল।মালিখালী ইউনিয়নের সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা দীপেন্দু রায় বলেন,”গোপাল চন্দ্র বসু এমপি হন মূলত ন্যাপ/কমিউনিস্টদের বিশাল সমর্থনে।নিরোদ বিহারী নাগের সক্রিয় ভূমিকায় খ্যাতিমান নেতৃবৃন্দের বিশেষ করে মুকুল সেন, হীরালাল, জগদীশ আইচ,কুমুদ রঞ্জন গুহ ঠাকুরতা, বরিশালের বীরমাতা মনোরমা বসু, অগ্নিকন্যা মতিয়া চৌধুরীর মত প্রথিতযশা নেতৃত্বের সহযোগিতায় গোপাল বসু এমপি হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
এমপি হওয়ার পর মুসলিম লীগে যোগদেন গোপাল চন্দ্র বসু।শোনা যায় ঐ সময় নিরোদ বিহারী নাগ গোপাল বসুর মাধ্যমে কিছুটা নির্যাতিত হয়েছিলেন। কিন্তু নীতিবান নেতা নিরোদ বিহারী নাগ শেষ পর্যন্ত নিজের আদর্শ ধরে রেখে সকল প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে নিজের অবস্থানকে আরও প্রশংসিত ভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখতে সমর্থ হন।”আমার বয়স যখন ৮/৯ তখন তাঁকে দেখবার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। সম্ভবত ৮৬ সালের ভয়াবহ ঘূর্নিঝড়ে যখন অনেক লোক মারা গেল,আহত হল,ঘর বাড়ী হারালো তিনি তখন মালিখালীর অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সমবেদনায় সঙ্গী হয়েছিলেন। আর একবার তাঁকে দেখেছিলাম মালিখালী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান সুমন মন্ডল মিঠুর বাবা স্বনামধন্য প্রয়াত চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র মন্ডল মারা গেলে তিনি স্পীড বোটযোগে এসেছিলেন মালিখালীর মাটিতে । সাচিয়াবাজার নদীরপারে বসে জনতার সাথে কথা বলেছিলেন।মাত্র পাঁচ থেকে দশ মিনিটের মত তিনি ওখানে ছিলেন এরপর গিয়েছিলেন রমেশ চন্দ্র মন্ডলের বাড়ীতে।ওটাই ছিল তাঁকে আমার দ্বিতীয় ও শেষ দেখা।সেই সুন্দর গৌরবদীপ্ত মুখশ্রী আজো আমার মনে প্রতিচ্ছবি সম ভেসে ওঠে।এই মহান নেতার স্মৃতির প্রতি জানাই স্বশ্রদ্ধ শ্রদ্ধাঞ্জলি। আমার বাবা প্রয়াত কর্ণধর বিশ্বাসের মুখ থেকে ওনার অনেক সুকীর্তির কথা শুনতাম।
বাবা বলতেন “নিরোদ নাগ ছিলেন অনলবর্ষী বক্তা,ইংরেজিতে বাংলাতে অনর্গল বলে যেতেন তিনি। কোন এক মঞ্চে এমএনএ গোপাল বসু বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেছিলেন আমার ছোট ভাই নিরোদ যে জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য রেখেছে এরপরে আর কোন বক্তব্য থাকতে পারেনা।এভাবে তিনি শেষ করেছিলেন।গোপাল বসু তুখোড় রাজনীতিজ্ঞ হলেও বক্তব্য প্রদানে নীরোদ নাগের মত চৌকস ছিলেননা। এ কারনেই বড় কোন মঞ্চে গেলেই নিরোদ নাগকে সংগে রাখতেনই।” জানা যায় নিরোদ বাবুর বক্তৃতা ছিল জনগনের হৃদয়স্পর্শী। তিনি দীর্ঘ সময় বক্তৃতা দিলেও কেউ বিরক্ত বোধ করতেননা।মন্ত্রমুগ্ধ হয়েই সবাই বক্তৃতা শুনতেন।ইংরেজীতে বক্তব্য দিলেও তা ছিল সহজবোধ্য। তাঁর মত সুবক্তা তখনকার দিনে এ অঞ্চলে দ্বিতীয়টি ছিলনা একমাত্র বর্তমান কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ছাড়া। গোপাল চন্দ্র বসুর সংগে নিরোদ বিহারী নাগের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত মাধুর্যমন্ডিত।নিরোদ বিহারী নাগের সম্পর্কে বলতে গিয়ে নাজিরপুরের কৃতিসন্তান শিক্ষামন্ত্রনালয়ের সুযোগ্য উপসচিব সুবোধঢালী মহোদয় বলেন,” বিনম্র শ্রদ্ধা এই মহান নেতার স্মৃতির প্রতি।মহৎপ্রাণ, নি:স্বার্থ, ত্যাগী এমন রাজনীতিবিদ এখন বড়ই অভাব।এখন নেতানামধারী অধিকাংশের কাছেই রাজনীতি মানে ব্যবসা,রাজনীতি মানে টাউটারি, আপন স্বার্থ আগে উদ্ধার,অনেকে আবার রাজনীতির নামে দিনে দুপুরে ডাকাতি করে।”পুলিশ ডিপার্টমেন্টের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা গাজীপুরের এডিশনাল এসপি ন্যায়ের পক্ষের বিমূর্ত প্রতীক মনোয়ার হোসেন বলেন “এমন একজন নেতা সম্পর্কে জানতে পেরে খুব ভাল লাগল, শ্রদ্ধাপূর্ন স্যালুট রইল এই মহান নেতার প্রতি।এ ধরনের নেতার সম্পর্কে যত বেশি বর্তমান প্রজন্মকে জানানো যায় ততই ভাল।নতুন প্রজন্মের নেতারা পরিশুদ্ধ হতে তাঁকে অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে গ্রহন করতে সমর্থ হবে।”আসলে একজন সফল রাজনীতিবিদ হতে সমকালের নেতাদের তাঁর বৈশিষ্টের অনুকরনীয় হিসেবে সামনে অগ্রসর করানো যেতে পারে। নেতাদের উচিৎ
বিনয়,বাদল,দিনেশ,ক্ষুদিরাম,চিত্তরঞ্জন, প্রীতিলতা,তীতুমীর সূর্যসেনদের জীবন আলেখ্য থেকে শিক্ষা নেওয়া।লেলিন,কার্লমার্কস, মাওসেতুংদের জানা।এ কে ফজলুল হক,হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আব্দুল হামিদখান ভাসানী,সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রানিত হওয়া। নিরোদ বিহারী নাগের মত মালিখালীর এক অত্যুজ্জ্বল নক্ষত্রের গুনাবলী সম্পর্কে জানা।নিরোদ বিহারী নাগ আমাদের গর্বের জননেতা। তাঁর জীবন এর প্রায় প্রতিটি দিক ছিল প্রশংসনীয়। এডভোকেট হিসেবেও ছিল তাঁর সুনাম।পেশাগত জীবনে বরিশাল জর্জকোর্টের স্বনামধন্য লইয়ার ছিলেন। ফৌজদারি মামলার আসামী জামিন পেয়ে যেত নিরোদ বিহারী নাগ কোর্টে উঠলেই।এজন্য অনেক আইনজীবী ছিলেন তাঁর সাফল্যের প্রতি ঈর্ষান্বিত। সামাজিক বিচারকার্য পরিচালনায় তিনি ছিলেন সুদক্ষ বিচারক। বিচারে বসলে মীমাংসা করেই উঠতেন।সত্য উদঘাটনে তিনি ছিলেন সিদ্ধ বিচারক। বর্তমান সময়ের কিছু অযোগ্য অসাধু সমাজ সেবার নামে সমাজ নির্যাতনকারী মুসলেকার টাকা জমা নিয়ে শালিস এর নামে প্রতারনা করাটা ভাল বোঝে,তাদের উচিৎ নিরোদ বিহারী নাগের জীবন বিধান থেকে শিক্ষা নেওয়া।নিরোদ বিহারী নাগ ছিলেন ন্যায় বিচারক।
জনগনকে কখনো হয়রানির স্বীকার হতে হতোনা তার বিচারে।বিচারে বসলে বিচার শেষ করেই তবে উঠতেন। বিচারের ক্ষেত্রে বাদী/ বিবাদী কে কোন টাকা জমা রাখতে হতোনা।কখনো বিচার প্রক্রিয়া ঝুলিয়ে রাখতেননা। তাঁর বিচারের প্রতি সকলের শ্রদ্ধা থাকত।তিনি বিচার করে দিলে বাদী বিবাদী উভয়পক্ষ সন্তুষ্ট হয়ে মিলে যেতেন।আসলে এটা ছিল তাঁর অসাধারণ যোগ্যতা। ঈশ্বরীয় আশীর্বাদপুষ্ট না হলে এটা সম্ভব নয়।তিনি এমপি হওয়ার পর প্রথম সংসদে প্রস্তাব রাখেন উপকূলীয় মানুষের জান মালের রক্ষায় সরকারী উদ্যোগে দ্বিতল ভবন সৃষ্টি করা প্রয়োজন। তাঁর সেই প্রস্তাবের আধুনিকায়ন বর্তমান ফ্লাড সেন্টারগুলো। এমপি থাকাকালীন তিনি রাশিয়া, নাইজেরিয়া সহ বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রীয় সফর করেন। রাশিয়া বেতার ভাষনে ৬০০ রুবল উপহার পান এই মহান নেতা।বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন আব্দুস সামাদ আসাদের নেতৃত্বে তিনি ঐ রাশিয়া সফরে গিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতি ছিল তাঁর অগাধ শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।তাঁর জীবদ্দশায় তিনি অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপন করতেন।তাঁর পিতা রসিক লাল নাগ ছিলেন শিক্ষানুরাগী ও শান্তিপ্রিয় মানুষ। স্ত্রী পুষ্প নাগ ছিলেন একজন মহীয়সী রমনী।তাঁর আদর্শের তিন সন্তান প্রত্যেকেই সুপ্রতিষ্ঠিত। তাঁর ছেলের নাম দিপংকর নাগ দীপক, দুই কন্যা যথাক্রমে লোপামুদ্রা ও লিপি। ব্যক্তিজীবনে নিরোদ বিহারী নাগের জনপ্রিয়তা এতটা বেগবান ছিল যে মালিখালী ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্র বলে বিবেচিত সাচিয়া বাজারটি তাঁর বংশের নামানুসারে প্রথমশ্রেনির নাগরিক থেকে শুরু করে সর্বস্তরের জনগনের নিকট নাগের বাজার হিসেবেই পরিচিতি লাভ করে।তিনি মালিখালীর তথা বাংলাদেশের অহংকার।
১৯৯১ সালে মারাত্মকভাবে ব্যাধিগ্রস্ত হয়ে ভারতে চিকিৎসা নিতে যান,কিন্তু সেখানকার চিকিৎসক তাঁকে আরোগ্য করতে ব্যর্থ হন,মুমুর্ষ অবস্থায় তাঁকে লাইফ সেভিং ইনজেকশন প্রয়োগ করত: বাংলাদেশে আনা হয় এবং এখানেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।তাঁর পিতৃভূমিতে তাঁকে সমাহিত করা হয়। মালিখালীর ঝনঝনিয়ার কৃতিসন্তান সুনজর পত্রিকার প্রকাশক ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জনাব মো: হুমায়ুন কবির মালিখালীর কৃতিসন্তানদের নিয়ে যেকোন লেখা দিতে আগে থেকে অবহিত করলেও নানা ব্যস্ততায় ভুলে গিয়েছিলাম।শেষে আমার লেখালেখি জগতের গুরুস্থানীয় হুমায়ুন কবির স্যারের কঠোর তাগাদা বিষয়টি নিয়ে লিখতে প্রেরণা যোগাল।আর সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে এমন একজন নেতার সম্পর্কে লিখতে যাওয়া মনেকরি ধৃষ্টতা বৈ কিছুই নয়। এমন মহান মানুষ সম্পর্কে লিখতে হলে অনেক জেনেশুনে তবে লিখতে হয়। আশা রাখছি আগামীতে আরো তথ্যবহুল লেখাদিয়ে নিরোদ বিহারী নাগ সম্পর্কে পাঠককে জানাতে সচেষ্ট হব।নিরোদ বিহারী নাগ এক আদর্শবান নেতার নাম।তাঁর কথা অনন্তকাল আমাদের হৃদয়ে রবে চির জাগ্রত।এই মানুষটিকে আমরা ভুলি নাই, ভুলবোনা কোন কালে।তাঁর পিতৃভূমিতে প্রতিবছর হাজার হাজার লোকের আগমন ঘটে।এই মহান নেতার পূন্যভূমিতে তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর সুযোগ্য সন্তান দিপংকর নাগ প্রতিষ্ঠিত পুষ্প-নিরোদ ফাউন্ডেশনই হাজার হাজার লোকের উপস্থিতিতে দিনটি মহাসমারোহে পালন করে থাকেন।পুষ্প-নিরোদ ফাউন্ডেশন প্রতিবছর এলাকার শিক্ষার উন্নয়নে মেধাবী ও গরীব শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান, সংবর্ধনা সহ এলাকার গরীব মানুষের চিকিৎসার্থে মেডিকেল টিমের মাধ্যমে সেবা দিয়ে থাকেন।উল্লেখ্য তাঁর ছেলে একজন প্রথম শ্রেনির সফল চিকিৎসক (এমবিবিএস)।
আমরা নীরবে নিরোদ বিহারী নাগের মত এমন আদর্শবান ব্যক্তিত্বের স্মৃতির প্রতি অমনোযোগী রয়ে যাচ্ছি। মালিখালীবাসী বর্তমান প্রজন্মকে এগিয়ে নিতে হলে তাঁর আদর্শ লালন করার যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে। দিপংকর নাগকে আরো যত্নশীলতা নিয়ে তাঁর অসমাপ্ত কাজকে পূর্নাঙ্গতা দিতে এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে তাঁর স্মৃতি সংরক্ষনে তৎপর হওয়াটা অত্যন্ত জরুরী বলে মনে করি। নিরোদ নাগ জাতীর এক অমূল্য আদর্শ। তাঁর অবদান কোনদিন ভুলে যাবার নয়।এই মহান মানুষটি ১৯৯১ সালের ১১ জুন পরলোকগমন করেন।আমরা ইউনিয়নবাসী গর্ববোধ করি এমন একজন গুনী ব্যক্তির এলাকায় জন্মগ্রহণ করে।পরিশেষে নিজের এই উদ্ধৃতিটুকু দিয়ে এ লেখার শেষ টানতে চাই…
তোমার আদর্শে নব প্রজন্মের হবে নব নব উত্থান
যাঁদের চেতনায় তুমিই রবে সগৌরবে মহীয়ান ।