জামালপুরের সাতটি উপজেলার প্রায় ৮০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন ১২ দিন ধরে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠদানসহ সব কার্যক্রম। দুশ্চিন্তায় রয়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।
গতকাল সোমবার ইসলামপুর উপজেলার ২০টির মতো প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবনের দেয়ালের অর্ধেক অংশেরও বেশি পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ডেবরাইপ্যাচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেওয়ানপাড়া চিনাডুলি সরকারি প্রাথমিক ও উচ্চবিদ্যালয়ের ভবনের শুধু ছাদ বাদে পুরোটাই পানির নিচে। বেশির ভাগ বিদ্যালয়ের মাঠে বুকসমান পানি। অফিস ও শ্রেণিকক্ষের চেয়ার-টেবিলসহ সব আসবাব পানিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে।
জেলা শিক্ষা কার্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, বন্যার কারণে জেলায় ৭৯৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৫৮৯টি, উচ্চবিদ্যালয় ১৩৫, স্কুল অ্যান্ড কলেজ ১১, কলেজ ৫ এবং মাদ্রাসা রয়েছে ৫৭টি।
ইসলামপুরের ডেবরাইপ্যাচ টেকনিক্যাল অ্যান্ড বি এম কলেজের অধ্যক্ষ মো. আনোয়ারুল কবির বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানটিতে প্রতি বছরই বন্যার পানি ওঠে। কিন্তু এবার সবচেয়ে বেশি পানি উঠেছে। ভবনের টিনের চাল পর্যন্ত পানি উঠে গেছে। পানিতে নষ্ট হচ্ছে চেয়ার-টেবিলসহ কাগজপত্র। এখন পানি অনেকটা কমেছে। পানি পুরোপুরি নেমে গেলেও কলেজে পরিচ্ছন্নতার কাজ করতেও আমাদের পাঁচ-সাত দিন সময় লেগে যাবে।’ কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী শাহনাজ পারভীন বলে, ‘কবে থেকে ক্লাস করতে পারব বুঝতে পারছি না। ক্লাস না হওয়ায় লেখাপড়ায় ক্ষতি হচ্ছে।’
পরিবারসহ বলিয়াদহ সেতুর ওপর আশ্রয় নেওয়া ইসলামপুরের বলিয়াদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রফিকুল ইসলাম বলে, তার স্কুলের ছাদ পর্যন্ত পানি। টানা ১২ দিন স্কুল বন্ধ। ঘরে পানি ঢোকার পর প্রথমে সে তার পাঠ্যবইগুলো মাচার ওপর রেখেছিল। দুদিনের মধ্যেই পানি বেড়ে যাওয়ায় তারা আশ্রয় নেয় বলিয়াদহ সেতুর ওপর।
জামালপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল আলিম বলেন, পানি মাত্রই কমতে শুরু করেছে। তবে বন্ধ হয়ে যাওয়া সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনো পানি আছে। পানি পুরোপুরি কমে যাওয়ার পর পরিষ্কার করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো চালুর ব্যবস্থা করা হবে। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থাও করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জামালপুর কার্যালয় থেকে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ২১ সেন্টিমিটার পানি কমে গতকাল বিকেলে বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। জামালপুরের ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও বকশীগঞ্জ উপজেলার প্রায় ছয় লাখ মানুষ এখনো পানিবন্দী।