গ্রাম বাংলা ডেস্ক:নারায়ণগঞ্জে সাত খুননারায়ণগঞ্জের নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল র্যাবের সদর দপ্তর থেকেই। র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল জিয়াউল আহসান র্যাব-১১-এর তৎকালীন অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মাদকে এ নির্দেশ দিয়েছিলেন গত মার্চে। নজরুলকে অপহরণ ও হত্যা করা হয় পরের মাস এপ্রিলের শেষ দিকে।
বহুল আলোচিত সাত খুন মামলার অন্যতম আসামি লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মাদ ১৬৪ ধারায় আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ তথ্য দিয়েছেন বলে তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
একই মামলার আরেক আসামি র্যাব-১১-এর সাবেক উপ-অধিনায়ক মেজর আরিফ হোসেন আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, আটকের পর প্রত্যক্ষদর্শীসহ সাতজনকেই গুম করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তারেক সাঈদ। আর নজরুলের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ র্যাবকে সব ধরনের তথ্য দিয়েছেন আরেক কাউন্সিলর নূর হোসেন। মেজর আরিফ আরও দাবি করেছেন, সাতজনকে গুম করার পর তথ্যদাতা নূর হোসেনকেও মেরে ফেলার নির্দেশ দেন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়া। কিন্তু পালিয়ে গিয়ে রক্ষা পান নূর হোসেন। অবশ্য তারেক সাঈদের জবানবন্দিতে এ কথার উল্লেখ নেই।
গত ৪ জুন আরিফ হোসেন এবং ১৮ জুন তারেক সাঈদ নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম কে এম মহিউদ্দিনের আদালতে ১৬৪ ধারায় এই জবানবন্দি দেন। আদালত সূত্র জানায়, অপহরণ এবং হত্যার পর গুম করার পুরো কাজটি নিজেই করেছেন বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন আরিফ হোসেন। তারেক সাঈদের সরাসরি নির্দেশে এ কাজটি তিনি করেছেন বলেও জানিয়েছেন। আর অধিনায়কের বক্তব্য হচ্ছে, গুম করার নির্দেশ তিনি দেননি। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় দুজনসহ মোট ২৬ জন গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে জেলহাজতে আছেন। ইতিমধ্যে জবানবন্দি দিয়েছেন ১৪ জন।
অপহরণের ঘটনা ঘটেছিল গত ২৭ এপ্রিল দুপুরে। জবানবন্দি অনুযায়ী, ওই রাতেই সাতজনকে হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যায় ইট বেঁধে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। তবে এখন পর্যন্ত এই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি। নূর হোসেন কলকাতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে সেখানেই আছেন।
ঘটনার শুরু: তারেক সাঈদ র্যাব-১১-এর অধিনায়ক বা কমান্ডিং অফিসার হিসেবে ২০১৩ সালের নভেম্বরে যোগ দেন। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জবানবন্দিতে তিনি বলেন যে গত মার্চে র্যাবের সদর দপ্তরে অধিনায়কদের মাসিক সম্মেলন শেষে এডিজি (অপারেশন) কর্নেল জিয়াউল আহসান তাঁকে সন্ত্রাসীদের তালিকা দিয়ে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। ওই তালিকায় নজরুলের নাম বিশেষভাবে চিহ্নিত ছিল। তারেক সাঈদ জবানবন্দিতে বলেন, গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে র্যাবের সদর দপ্তরের এডিজির (অপস) সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হিসেবে বিবেচিত।
লে.কর্নেল তারেক সাঈদ,মেজর আরিফ হোসেনতবে তালিকা দেওয়ার এই তথ্য অস্বীকার করেছেন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান। গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে তিনি বলেন, অধিনায়কদের সম্মেলনে কখনো কোনো তালিকা দেওয়া হয় না; বরং ইউনিট থেকেই তালিকা করা হয়। এটাই নিয়ম। সেই সম্মেলনে আরও অফিসার ছিলেন। সুতরাং তারেক সাঈদ যা বলেছেন, তা সঠিক নয়।
কর্নেল জিয়া আরও বলেন, তিনিই যদি গ্রেপ্তারের কথা বলতেন, তাহলে ২৭ এপ্রিল নজরুলকে আটকের পর কেন তাঁকে তারেক সাঈদ সেই তথ্য জানাল না। তিনি বলেন, সাতজনকে অপহরণের পর তারেক সাঈদকে ফোন করার পর তিনি (তারেক) অস্বীকার করে বলেছিলেন যে অপহরণের ঘটনা তাঁর জানা নেই। এ ছাড়া পুরোটা সময় তারেক সাঈদ তাঁকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বলে জানান জিয়া। এমনকি পুরো কাজটি মেজর আরিফ করলেও তারেক সাঈদ বলেছিলেন যে আরিফকে মুন্সিগঞ্জে পাঠানো হয়েছে।
জবানবন্দিতে মেজর আরিফ বলেন, অধিনায়ক সম্মেলনের পরদিন র্যাব-১১-এর কোম্পানি কমান্ডারদের সম্মেলনে অধিনায়ক তারেক সাঈদ নজরুলকে ধরতে মেজর আরিফকে নির্দেশ দেন এবং আরেক কোম্পানি কমান্ডার লে. কমান্ডার এম এম রানাকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে বলেন। এরপর নজরুলকে ধরতে বেশ কয়েকবার অপারেশন চালিয়েও ব্যর্থ হন মেজর আরিফ। তাঁর দাবি, এর পরই তিনি খবরের সূত্র হিসেবে নূর হোসেনকে ব্যবহার করতে থাকেন। ২৭ এপ্রিল নূর হোসেনই খবর দেয় যে নজরুল আদালতে হাজিরা দিতে আসবেন। বিষয়টি আরিফ অধিনায়ক তারেক সাঈদকে জানালে অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়।
অপহরণ ও খুন: নজরুলকে আটকের অভিযানে নিজ নিজ টিম নিয়ে অংশ নেন আরিফ হোসেন এবং এম এম রানা। এর মধ্যে আরিফ আটক করেন নজরুলসহ পাঁচজনকে, আর দেখে ফেলায় আইনজীবী চন্দন সরকার ও তাঁর গাড়িচালককে আটক করে এম এম রানার দল। নজরুল ও চন্দন সরকার ছাড়াও আটক করা হয় নজরুলের সহযোগী তাজুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান স্বপন, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং চন্দন সরকারের গাড়িচালক ইব্রাহিমকে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, জবানবন্দিতে আরিফ হোসেন জানান, আটক সাতজনকে নিয়ে আরিফ হোসেন বেলা একটা ৫০ এর দিকে তারাব এলাকায় পৌঁছান। এরপর দুটি মাইক্রোবাস নিয়ে নরসিংদী ক্যাম্পের দিকে রওনা দিয়ে আনুমানিক আড়াইটার দিকে তাঁরা নরসিংদী ক্যাম্পের কাছে পৌঁছান। সেখানে ক্যাম্প কমান্ডার সুরুজের সঙ্গে ক্যাম্পের বাইরে দেখা করে তাঁর কাছ থেকে দুই হাজার টাকা নিয়ে সবাই ক্যাম্পের বাইরে দুপুরের খাবার খান। সেখান থেকে বিকেল চারটার দিকে চলে যান শিবপুরে। সেখানে রাত আটটা পর্যন্ত অপেক্ষা করে মেজর আরিফ তাঁর অধিনায়ক তারেক সাঈদকে ফোন করে নারায়ণগঞ্জ ফিরে আসার নির্দেশনা চান। কিন্তু রাস্তায় পুলিশের কড়া নজরদারি থাকায় তারেক সাঈদ মাইক্রোবাসে আসতে নিষেধ করে ট্রাক পাঠাবেন বলে জানান। কিন্তু তা সময়সাপেক্ষ বলে তাঁরা মাইক্রোবাস নিয়েই রওনা দেন। পথে মেজর আরিফের নির্দেশে সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সি সাতটি চেতনানাশক ইনজেকশন ও একটি সিরিঞ্জ কিনে নিয়ে আসেন। রাত সাড়ে ১০টায় সবাই কাঁচপুর পৌঁছে আবারও তারেক সাঈদকে ফোন করে একটি ট্রলার ব্রিজের নিচে পাঠাতে বলেন। এর কিছুক্ষণ পর এম এম রানা অধিনায়কের কার্যালয়ের ল্যান্ডফোন থেকে ফোন করে তাঁকে জানান, ট্রলার কাঁচপুর ব্রিজের নিচে থাকবে। এরপর মেজর আরিফ নূর হোসেনকে ফোনে বলে দেন, যেন ব্রিজের নিচে মানুষের জটলা না থাকে।
আরিফের জবানবন্দি অনুযায়ী, ট্রলারটি আসে রাত সাড়ে ১২টার দিকে। এরপর সিপাহি আবু তৈয়ব আলীকে ইনজেকশন দিতে বলার পর এসআই পূর্ণেন্দু বালা, সৈনিক আবদুল আলিম, তাজুল, কনস্টেবল শিহাব উদ্দিন, ল্যান্স নায়েক বেলাল ও হীরা মিয়াসহ আটজন আটক সাতজনের মুখে পলিথিন পেঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এরপর লাশগুলো ট্রলারে নিয়ে রাত আড়াইটার দিকে মেঘনার মোহনায় গিয়ে প্রতিটি লাশের সঙ্গে এক সেট ইটের বস্তা বেঁধে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। ফেলার আগে লাশের পেট ছিদ্র করা হয়।
এর তিন দিন পর ছয়টি লাশ উদ্ধার করা হয় শীতলক্ষ্যা নদী থেকে। আরেকটি লাশ পাওয়া এর পরদিন।
গুমের নির্দেশ কার?: মেজর আরিফ হোসেন তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, অধিনায়ক তারেক সাঈদের নির্দেশেই তিনি সাতজনকে গুম করেছেন। তবে তারেক সাঈদ জবানবন্দিতে এ ধরনের কোনো কথা বলেননি।
মেজর আরিফ বলেন, আটক সাতজনকে নিয়ে ২৭ এপ্রিল দুপুরে তারাব পৌঁছেই তিনি অধিনায়ককে ফোন করে এ খবর দিয়ে পরবর্তী দিকনির্দেশনা চান। তখন অধিনায়ক বলেন, কোনো প্রত্যক্ষদর্শী রাখা যাবে না, সাতজনকেই গুম করতে হবে।
জবানবন্দির আরেক জায়গায় মেজর আরিফ বলেন, ওই রাতে ট্রলারটি কাঁচপুর ব্রিজের নিচে আসার পর তিনি অধিনায়ককে ফোন করে সর্বশেষ তথ্য দিয়ে জানান, সাতজনকেই গুম করার জন্য তাঁরা প্রস্তুত। তখন তারেক সাঈদ বলেন, এগিয়ে যাও (গো অ্যাহেড)।
তবে তারেক সাঈদ জবানবন্দিতে বলেছেন, অপহরণের দিনেই রাত আড়াইটার দিকে তিনি নৌকা ঘাটে পৌঁছাবার ২০-২৫ মিনিট পর মেজর আরিফ সেখানে আসেন। কিছুক্ষণ কথা বলার পর তিনি মেজর আরিফকে তাঁর লোকজনসহ আসামিদের (অপহৃত সাত) নিয়ে র্যাব সদর দপ্তরে যেতে বলেন। তখন আরিফ জানায়, আসামিদের মেরে ফেলা হয়েছে। কেন মারা হয়েছে জানতে চাইলে আরিফ জানান, তাঁকে চিনে ফেলেছে বলে নজরুলকে মারা হয়েছে। আর অন্যরা দেখেছে বলে ভয়ে সবাইকে মারা হয়েছে।
অতিরিক্ত মহাপরিচালকের সম্পৃক্ততা: দুজনের জবানবন্দিতেই র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বা এডিজি কর্নেল জিয়াউল আহসানের কথা একাধিকবার এসেছে বলে তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। তারেক সাঈদ জবানবন্দিতে বলেছেন, ২৭ এপ্রিল রাত দেড়টার দিকে মেজর আরিফ ফোন করে বলেন যে এডিজি তাঁকে ফোন করছেন। তখন তিনি এডিজির সঙ্গে ফোনে কথা বলতে বললে আরিফ জানান, নৌকার ইঞ্জিনের শব্দে কথা বলা যাচ্ছে না। ইঞ্জিন বন্ধ করে কথা বলার নির্দেশ দেন তিনি। এরই মধ্যে কর্নেল জিয়া তাঁকে ফোন করে জানতে চান, আরিফ কোথায়? উত্তরে তিনি জানান, আরিফ নৌকায় করে ক্যাম্পে আসছে। তখন এডিজি বলেন, আরিফ পাঁচ-ছয় কোটি টাকার বিনিময়ে অপারেশনটি করেছে।
তারেক সাঈদ জবানবন্দিতে আরও বলেন, এর চার-পাঁচ মিনিট পর ফোন করলে আরিফ জানান, এডিজি কর্নেল জিয়া তাঁর কাছে টাকার কথা জানতে চেয়েছেন। কিন্তু টাকার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। এর কিছুক্ষণ পর এডিজি তাঁকে ফোন করে জানান, মোবাইল ফোনে আরিফের সব কথা রেকর্ড করা হয়েছে। আরিফকে যেন সদর দপ্তরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি এরপর নারায়ণগঞ্জ নৌকা ঘাটে এসে আরিফকে সদর দপ্তরে গিয়ে সব সত্য কথা এডিজিকে বলতে বলেন।
সূত্র জানায়, একই বিষয়ে জবানবন্দিতে মেজর আরিফ বলেন, লাশ নদীতে ফেলে আসার পথে এডিজি জিয়া তাঁকে ফোন করতে থাকলে তা না ধরে তিনি তারেক সাঈদকে ফোন করে জানতে চান, এডিজি কেন তাঁকে ফোন করছেন। তারেক সাঈদ জানান, তিনি এডিজির সঙ্গে কথা বলে জানাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর অধিনায়ক ফোন করে বলেন, তাঁকে (আরিফ) র্যাবের সদর দপ্তরে যেতে হবে। এরপর রাত সাড়ে তিনটার সময় নারায়ণগঞ্জ ঘাটে পৌঁছালে সেখানে তারেক সাঈদের দেখা পান। তারপর চারটার দিকে তিনি র্যাবের সদর দপ্তরে পৌঁছান।
সদর দপ্তরে কর্নেল জিয়া মেজর আরিফের কাছে জানতে চান, নজরুল কোথায়। এ বিষয়ে আরিফ হোসেন জবানবন্দিতে বলেন, এই প্রশ্ন শুনে তিনি অবাক হন। কারণ, তিনি জানতেন যে এডিজি সবই জানেন। তারপর একই প্রশ্ন করলে তিনি (আরিফ) বলেন, অধিনায়কের আদেশ ছাড়া কোনো কিছুই করেননি। এ বিষয়ে অধিনায়ক তারেক সাঈদকে জিজ্ঞেস করতে হবে। এরপর জিয়া অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলেন এবং ওই ফোনে তাঁকে কথা বলতে দেন। তিনি ফোনেই অধিনায়কের কাছে জানতে চান, নজরুল কোথায়, এ কথা এডিজি কেন তাঁকে জিজ্ঞেস করছেন। তখন তারেক সাঈদ বলেন, এডিজি এখন কেন এমন করছেন, তিনি বুঝতে পারছেন না। এরপর এডিজিকে সব ঘটনা বলে তিনি চলে যেতে বলেন।
টাকার জন্য গুম-খুন?: তারেক সাঈদ ও আরিফ হোসেনকে কর্নেল জিয়া সদর দপ্তরে ডেকে পাঠান ২৯ এপ্রিল। তদন্ত সূত্র জানায়, তারেক সাঈদ এ বিষয়ে বলেছেন যে এডিজি জিয়া তাঁকে মেজর আরিফ ও নূর হোসেনের মধ্যে কথোপকথনের সিডি ও লিখিত বিবরণ দেখান। এরপর এডিজি আরিফকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তিনি আরিফকে টাকা, ফ্ল্যাট ও ব্যবসার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন। তিনি জানতে চান, মেজর আরিফ সোর্স হিসেবে নূর হোসেনকে কত দিন ধরে ব্যবহার করছেন। এ ছাড়া আরিফ ও নূর হোসেনের কথোপকথনের মধ্যে কিছু সাংকেতিক শব্দ থাকায় সে নিয়েও প্রশ্ন করেন। এর জবাবে মেজর আরিফ বলেন, টাকার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। আর ঢাকার ফ্ল্যাটের বিষয়ে বলেন, ঢাকায় তাঁর একটা ফ্ল্যাট আছে, নূর হোসেনের মাধ্যমে ফ্ল্যাটের টাকা তিনি জমা দেন। নজরুলের সঙ্গে নূর হোসেনের শত্রুতা থাকায় সোর্স হিসেবে তাঁকে ব্যবহার করা হয়েছে। ঘটনার শুরু থেকে হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত নূর হোসেনের সঙ্গে কেন সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা হয়েছে প্রশ্ন করলে আরিফ হোসেন চুপ থাকেন।
এই বৈঠকটির বিষয়ে আরিফ হোসেন জবানবন্দিতে বলেন, বেলা দেড়টার দিকে সদর দপ্তরে পৌঁছার পর এডিজি জিয়া প্রথমে তারেক সাঈদের সঙ্গে কথা বলেন। তারপর আরিফকে ডেকে নেন। জানতে চান, নূর হোসেনের সঙ্গে কী কী কথা হয়েছে, ব্যাংক বিষয়ে নূর হোসেনের সঙ্গে কী কথা হয়েছে, সে কত দিন ধরে তথ্য দিচ্ছে, লাশগুলো কী করা হয়েছে ইত্যাদি। জবাবে নূর হোসেন যে নজরুলের বিষয়ে দেড় মাস ধরে তথ্য দিচ্ছেন তা জানান।
নূর হোসেনকে গুমের নির্দেশ!: আদালত সূত্রে জানা গেছে, আরিফ হোসেনের জবানবন্দি অনুযায়ী, নূর হোসেনকেও গুমের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আর ২৯ এপ্রিলের বৈঠকেই এই নির্দেশটি দেন এডিজি কর্নেল জিয়া। আরিফ হোসেন বলেছেন, তাঁর কথা শেষ হওয়ার পর এডিজি ওই দিনের মধ্যেই নূর হোসেনকে মেরে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তখন মেজর আরিফ বলেন, নজরুলের বিষয়টি নিয়ে নারায়ণগঞ্জ এমনিতেই গরম। এই অবস্থায় নূর হোসেনকে মারলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না। তখন এডিজি অধিনায়কের দিকে তাকিয়ে বলেন, এ কাজ করতেই হবে। তবে এই নির্দেশ আর কার্যকর হয়নি। ওই দিনই র্যাব-১১-এর সদস্যদের সদর দপ্তরে ক্লোজ করে নিজ নিজ বাহিনীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে কর্নেল জিয়া প্রথম আলোকে বলেন, নূর হোসেনকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ তিনি দিয়েছিলেন, গুম করার নির্দেশ নয়। তা ছাড়া তখন অপহরণের সঙ্গে নূর হোসেনের নাম আসায় গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়াটাই স্বাভাবিক। আর নূর হোসেনকে ধরার জন্য ওপর থেকেই নির্দেশ এসেছিল। এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘তাহলে আপনাদের এটাও লিখতে হবে যে আপনারাই আগে লিখেছিলেন, আমি নূর হোসেনকে পালিয়ে যেতে বলেছি। আর এখন বলছেন গুম করতে বলেছি।’
২৯ তারিখের বৈঠক প্রসঙ্গে কর্নেল জিয়া বলেন, সেই বৈঠকের ভিডিও তাঁর কাছে আছে। সেখানেই প্রমাণ আছে, বৈঠকে কী কথা হয়েছিল।