হিসাব বদলে দিলেন মিশেল ওবামা

Slider টপ নিউজ

8b0ada085228d8b0e8ea0a1d829ef2ab-1-1-US-VOTE-DEMOCRATS-CONVENTION-051452

ফিলাডেলফিয়ায় ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলনের প্রথম দিন সোমবার নানা বিতর্কের ধূম্রজাল ছড়ায়। দলের চেয়ারওম্যান ডেবি ওয়াসারম্যান শুলজের নেতৃত্বে ডেমোক্রেটিক পার্টির সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সকে পরাস্ত করতে গোপন ষড়যন্ত্র হয়েছিল—এই অভিযোগের মুখে ওই দিনের প্রথমার্ধ কাটে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভে। উইকিলিকসের ফাঁস করা ই-মেইলের সূত্রেই ওই অভিযোগ।
ই-মেইল ফাঁসের জেরে শুলজ পদত্যাগে বাধ্য হন। কিন্তু সম্মেলনে স্যান্ডার্স-সমর্থকদের বিক্ষোভ তাতে ঠেকানো যায়নি। তখন হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচনী কমিটি লিখিতভাবে স্যান্ডার্স ও তাঁর সমর্থকদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। স্যান্ডার্সের নির্বাচনী অফিস থেকেও বিক্ষোভ বন্ধ করার অনুরোধ জানানো হয়। তবে রাত ১০টার দিকে ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা ভাষণ দিতে মঞ্চে উঠলে ছবিটা বদলে যায়। শান্ত হয়ে আসে পরিস্থিতি।
মিশেল ওবামা তাঁর ২০ মিনিট স্থায়ী ভাষণে হিলারিকে সমর্থন করার কারণ অত্যন্ত কার্যকরভাবে ব্যাখ্যা করেন। রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করে তিনি কঠোর ভাষায় সব ধরনের বিভক্তির রাজনীতির বিরুদ্ধে মত রাখেন। মিশেল বলেন, আগামী নির্বাচনে শুধু একজন প্রার্থীই রয়েছেন, যিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্যতা রাখেন, তিনি হলেন হিলারি ক্লিনটন। তাঁর ভাষণ শেষ হওয়ার আগেই পুরো সম্মেলন কক্ষ হিলারির পক্ষে মুর্হুমুহু স্লোগানে কেঁপে ওঠে।
এদিন সন্ধ্যায় অন্য দুই প্রধান বক্তা ছিলেন সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন ও সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তাঁরা দুজনেই যুক্তি, তথ্য ও পরিহাস দিয়ে অত্যন্ত শক্ত ভাষায় ট্রাম্প ও রিপাবলিকান দলের নির্বাচনী কর্মসূচির তীব্র সমালোচনা করেন।
সম্মেলনের শেষ বক্তা হিসেবে স্যান্ডার্স যখন মঞ্চে আসেন, তখনো তাঁর অসংখ্য সমর্থক সম্মেলন কক্ষের ভেতরে দাঁড়িয়ে। প্রায় তিন মিনিট পুরো সম্মেলন কক্ষের অধিকাংশ মানুষ দাঁড়িয়ে ও প্রবল করতালিতে তাঁকে অভিনন্দিত করেন। মোট ডেলিগেটের ৪০ শতাংশ স্যান্ডার্সের সমর্থক, তাঁরা হিলারিকে নয়, স্যান্ডার্সকেই দলীয় প্রার্থী হিসেবে চেয়েছিলেন। স্যান্ডার্স মনোনয়ন লড়াইয়ে হেরে যাওয়ার পর ব্যক্তিগতভাবে হিলারির প্রতি সমর্থন জানালেও তাঁর সমর্থকদের অনেকে এই সিদ্ধান্তে প্রতারিত বোধ করছেন। তাঁদের অনেকেই স্যান্ডার্সের ভাষণের সময় হিলারির বিরুদ্ধে স্লোগান দেন, অনেককে প্রকাশ্যে কাঁদতেও দেখা যায়।
প্রায় আধা ঘণ্টা স্থায়ী ভাষণে স্যান্ডার্স তাঁর ‘রাজনৈতিক বিপ্লব’ চালিয়ে যাওয়ার জন্য আবেদন রাখেন ও একটি প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। বাছাই পর্বের ফলাফল পক্ষে না যাওয়ায় তিনি হতাশ—এ কথা স্বীকার করে স্যান্ডার্স সমর্থকদের ফল মেনে নিতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘হিলারি ক্লিনটন একজন অসাধারণ প্রেসিডেন্ট হবেন, এ ব্যাপারে আমার মনে কোনো সন্দেহ নেই।’
বার্নি স্যান্ডার্সের কারণেই ডেমোক্রেটিক পার্টি যে দলীয় প্ল্যাটফর্ম অনুমোদন করেছে, তা এই দলের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রগতিশীল কর্মসূচি।
সম্মেলনের প্রথম দিন শুরু হয়েছিল বিতর্ক, সমালোচনা ও দলীয় বিভক্তির হুমকি নিয়ে। রাত ১১টার পর যখন তা শেষ হলো, তখন কোনো সন্দেহই ছিল না ডেমোক্রেটিক পার্টি সে হুমকি কাটিয়ে উঠে একতাবদ্ধ হয়েছে।
এই দিনের অন্য উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল, উইকিলিকসের ফাঁস করা প্রায় ২০ হাজার ই-মেইলের পেছনে রাশিয়ার সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে তপ্ত আলোচনা। সম্মেলন শুরুর আগে সাইবার বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছিলেন, রুশ হ্যাকাররা ডেমোক্রেটিক পার্টির ডেটাবেইসে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে। ই-মেইল প্রকাশ হওয়ার পর ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, ট্রাম্পকে সাহায্য করার জন্যই রুশ সরকার এ কাজে মদদ জুগিয়েছে। অন্ততপক্ষে দুটি রুশ সাইবার ফার্ম এই অনুপ্রবেশের পেছনে রয়েছে বলে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করেন এমন একাধিক বিশেষজ্ঞ নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, ডোনান্ড ট্রাম্প একাধিকবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন এবং ন্যাটো চুক্তির বিরোধিতা করে বক্তব্য দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *