সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রপন্থা মোকাবিলায় দিল্লির সঙ্গে সিরিজ আলোচনা চলছে ঢাকার। গত সপ্তাহে ভারত সফর করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি। চলতি সপ্তাহে দেশটি সফরে যাচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আর গতকাল বিকালে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র মতে, দিল্লির সঙ্গে সামপ্রতিক সব আলোচনায় গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলা পরবর্তী নিরাপত্তা পরিস্থিতির বিষয়টি অগ্রাধিকার পেয়েছে। আগামী ২৮শে জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দিল্লি সফর এবং সেখানে অনুষ্ঠেয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকসহ দেশটির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে নিরাপত্তাই মুখ্য আলোচ্য হবে বলে জানা গেছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী দিল্লি সফরকালে দেশটির নবনিযুক্ত পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর এবং ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপি’র সাধারণ সম্পাদক রাম মাধবের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন। নবনিযুক্ত পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে শাহরিয়ার আলম এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরের সঙ্গে তার দপ্তরে আমরা জঙ্গিবাদ দমন, যোগাযোগ, নদীর পানিসহ দুই দেশের সকল স্বার্থ বিষয়ে আলোচনা এবং এক সঙ্গে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছি।’ এদিকে দিল্লি থেকে ফিরে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে প্রতিমন্ত্রী তার সফরের বিস্তারিত উল্লেখ করেন। বলেন, ‘আমার সফরে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় ভারত কিভাবে আমাদের সহায়তা করতে পারে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক সামনে রয়েছে। সেখানে হয়তো সহযোগিতার একটি চূড়ান্ত রূপ পাওয়া যাবে।’ সন্ত্রাস ও সহিংস উগ্রপন্থা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এটি মোকাবিলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ লড়াই করছে। বাংলাদেশও সেই লড়াইয়ে সক্রিয় রয়েছে। ১লা জুলাই গুলশান ও ৭ই জুলাই শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর বাংলাদেশকে এ বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। উদভূত পরিস্থিতিতে সরকার দেশি-বিদেশিদের নিরাপত্তায় অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। অবশ্য এ ইস্যুতে ঢাকার আরো কার্যকর উদ্যোগে সহযোগিতা দিতে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, প্রতিবেশী ভারতসহ বিভিন্ন দেশ আগ্রহ দেখিয়েছে। সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবও এসেছে কারও কারও পক্ষ থেকে। বাংলাদেশ কোনো দেশের কাছ থেকে কি ধরনের সহযোগিতা নেবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোনো জোট নয়, সন্ত্রাসবাদ দমনে নির্দিষ্ট ইস্যুতে আলাদাভাবে বিদেশি দেশগুলোর সহযোগিতা নেবে বাংলাদেশ। এ সহযোগিতার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের ওপর। এদিকে ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক গতকাল সন্ধ্যায় মানবজমিনকে বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠকের প্রস্তুতিসহ দুই দেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে নিরাপত্তা বিশেষ করে গুলশান ও শোলাকিয়ার হামলা পরবর্তী পরিস্থিতি আলোচনায় অগ্রাধিকার পাবে বলে জানান তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দিল্লি সফরকালে দেশটির গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তাকে ব্রিফ করবেন মর্মে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পররাষ্ট্র সচিব এমন তথ্য তার কাছে নেই বলে দাবি করেন। ওদিকে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের এবার দিল্লি সফর হবে ৪ দিনের। সেখানে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে মন্ত্রী পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন। ওই বৈঠকে নিরাপত্তা ইস্যুতে ঢাকা-দিল্লি সহযোগিতা, অভিন্ন সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং জনগণের পর্যায়ে যোগাযোগ আরো বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থার ১২ সদস্যের অফিসিয়াল প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সফরকালে ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মন্ত্রীর সাক্ষাৎ হওয়ার কথা রয়েছে।