জানা গেছে, বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন ও নাগরিক সমাজের দাবির মুখে ২০১০ সালের পর বাটালী পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বস্তি উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০১৩ সালে বড় ধরনের বাধা ছাড়াই বস্তি উচ্ছেদ করা হয়। তবে এ জন্য বস্তিবাসীর সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করতে হয়েছে। ওই সব বৈঠকে তাদের স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যাপারে আশ্বস্ত করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ৩৩ জনের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি নেওয়া হয়। অ্যাপার্টমেন্টের অগ্রিম বাবদ ১০ হাজার টাকা করে নিয়ে তাদের একটি রসিদ দেওয়া হয়। পরে ১২ কাঠা আয়তনের জায়গার ওপর সাত কোটি টাকা ব্যয়ে বহুতল ভবন নির্মাণকাজ শুরু করে সিটি করপোরেশন। ওই ভবনে ১৬১ পরিবারকে পুনর্বাসন করার কথা ছিল। সে অনুযায়ী ২৫০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাটগুলো তৈরি করা হয়। চলতি বছরের শুরুতে ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। তবে ফ্ল্যাটগুলো বিত্তবানদের বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চসিক। এরই মধ্যে নির্মাণকাজের ঠিকাদারকে ফ্ল্যাটগুলো বিত্তবানদের উপযোগী এক হাজার বর্গফুট আয়তনে তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সাততলা ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এখনও ভবনটিতে রঙ করা হয়নি। ২৫০ বর্গফুট আয়তনের প্রতিটি ফ্ল্যাটে একটি থাকার ঘর, একটি শৌচাগার ও ছোট আকারের রান্নাঘর রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ‘পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের উচ্ছেদের পর বাস্তুহারা না করে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা ছিল। অলাভজনক প্রকল্প হিসেবে এটি নেওয়া হয়েছিল। যাদের পুনর্বাসন করা হবে, তাদের কাছ থেকে শুধু ভবন নির্মাণের খরচ নেওয়া হবে। সামর্থ্য অনুযায়ী ১৫ বছর মেয়াদি মাসিক কিস্তিতে তা পরিশোধ করে ফ্ল্যাটের মালিক হতে পারতেন বস্তিবাসী। কী কারণে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে, জানা নেই।’
ভবন নির্মাণের আগে যাদের উচ্ছেদ করা হয়েছিল, তাদের একজন রমজান আলী। তিনি বলেন, ‘৫০ বছরের পুরনো বস্তি ছিল এটি। পুনর্বাসনের কথা বলে উচ্ছেদ করা হয়। প্রতিজনকে ৩০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়ার কথা ছিল। মূল্য ধরা হয়েছিল ছয় লাখ ১০ হাজার টাকা, যা কিস্তিতে শোধ করার কথা ছিল। প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার টাকা নেওয়া হয়।’
এ প্রসঙ্গে সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, ‘যাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে, তাদের বরাদ্দ দিয়ে বাকি ফ্ল্যাটগুলো মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্তদের বরাদ্দ দেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। এরই মধ্যে ফ্ল্যাটগুলোর আকারও বড় করার জন্য ঠিকাদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ সমকালকে বলেন, একটা গৃহীত সিদ্ধান্তকে রাতারাতি আমূল পরিবর্তন করে ফেলা যায় না। সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর যে উদ্দেশ্যে করপোরেশন অর্থ ব্যয় করেছে, সে উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে হবে। অন্যভাবে ব্যবহার করা বেআইনি।