জার্মানির মিউনিখের একটি বিপণিকেন্দ্রে গতকাল শুক্রবার রাতে বন্দুক হামলা সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করেছে দেশটির পুলিশ। তারা বলছে, ব্যস্ত ওই শপিং মলে হামলাকারী ছিল একজনই। তাঁর বয়স ১৮ বছর। তিনি ইরানি বংশোদ্ভূত জার্মান নাগরিক। পুলিশের কাছে তাঁর বিষয়ে আগের কোনো তথ্য নেই। তাঁর বিরুদ্ধে অপরাধের কোনো রেকর্ডও নেই। তিনি মিউনিখেরই বাসিন্দা বলে জানিয়েছে পুলিশ। হামলাকারীর পরিচয় নিশ্চিত করেছেন মিউনিখের পুলিশপ্রধান হুবার্টাস আন্দ্রে।
পুলিশের ভাষ্য, বিপণিকেন্দ্রে হামলা চালানো ওই তরুণ আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। তাঁর মাথায় গুলির চিহ্ন রয়েছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, হামলাকারী ওই তরুণের দেহ অলিম্পিয়া শপিং সেন্টার নামের ওই বিপণিকেন্দ্র থেকে এক কিলোমিটার দূরে পড়ে ছিল।
পুলিশ জানায়, গতকাল রাতে ঘটনার পরপরই পুলিশ তিনজন হামলাকারী সম্পর্কে ধারণা পায়। তবে আজ শনিবার সকালে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ বলেছে, হামলাকারী একাই এ হামলা চালান। হামলার উদ্দেশ্য এখনো পরিষ্কার নয়।
পুলিশ বলছে, হামলাকারী আগে ফাস্ট ফুডের দোকানে হামলা চালান। এরপর বিপণিকেন্দ্রের দিকে এগিয়ে যান। এতে শিশুসহ ১৬ জন আহত হয়। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
জার্মানির তৃতীয় বৃহত্তম শহর মিউনিখ। ঘটনার পরপরই পুলিশ সতর্ক অবস্থান নেয়। স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে শহরে ম্যাকডোনাল্ডসের একটি রেস্তোরাঁয় গুলির ওই ঘটনা শুরু। পরে তা আশপাশের সড়কেও ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে বন্দুকধারী সেখানকার অলিম্পিক স্টেডিয়ামের পাশে অলিম্পিয়া শপিং মলে ঢুকে পড়েন। দ্রুত বিপণিবিতানটি ঘিরে ফেলে পুলিশ। আকাশে চক্কর দিতে থাকে হেলিকপ্টার। গুলির এ ঘটনার পর খালি করা হয় শহরের প্রধান রেলস্টেশনটি। এ ছাড়া বন্ধ করে দেওয়া হয় শহরের বাস, পাতালরেলসহ অন্যান্য গণপরিবহনও। এতে আটকা পড়ে লোকজন। শহরবাসীকে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়ে টুইট করে পুলিশ।
মিউনিখের পুলিশ তাদের ফেসবুক পেজে হামলায় ছয়জন নিহত হওয়ার খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে এ ঘটনাকে ‘সন্দেহজনক সন্ত্রাসী হামলা’ বলে উল্লেখ করে।
পশ্চিম ইউরোপে গত আট দিনে এটি তৃতীয় সহিংসতার ঘটনা। এর আগে ফ্রান্স ও জার্মানিতে হামলার দায় স্বীকার করে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে সাম্প্রতিক এ ঘটনার উদ্দেশ্য নিয়ে বলা হয়, ঘৃণ্য এ কাজের উদ্দেশ্য এখনো পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে, এর সূত্র নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
গতকালের হামলার দায় স্বীকার করেনি কোনো জঙ্গিগোষ্ঠী বা সংগঠন।
তবে একটি টুইটে বলা হয়েছে, ‘ইউরোপে আইএস বিস্তৃত হচ্ছে।’
নাম প্রকাশ না করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সূত্র বলেছে, বন্দুকধারীর সঙ্গে আইএসের কোনো যোগসূত্র নেই। পুলিশ বলছে, ওই বন্দুকধারীর যেহেতু আগের কোনো অপরাধের রেকর্ড নেই, তাই তাঁর নাম জানা যায়নি।
গতকালের এ ঘটনার আগে গত সোমবার জার্মানির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ভুর্সবুর্গে ট্রেনে কুঠার নিয়ে হামলা চালিয়ে চার যাত্রীকে আহত করে এক কিশোর। পরে পুলিশের গুলিতে ওই আফগান কিশোর নিহত হয়। ওই ঘটনার সঙ্গে এর কোনো যোগসূত্র নেই বলে নিশ্চিত করেছেন হুবার্টাস আন্দ্রে। সূত্র: রয়টার্স।