সম্পাদকীয়: আবার মৃত্যুর মিছিল

Slider জাতীয় টপ নিউজ সম্পাদকীয় সারাবিশ্ব

file

 

আতশবাজির রোশনাই দেখছি। সঙ্গে রয়েছে কনসার্টও। হঠাৎ দেখি শ’য়ে শ’য়ে মানুষ ছুটছে এদিক-সেদিক। কেন ছুটছে। কি কারণে ছুটছে। প্রশ্নটা নিজের মধ্যেই। জীবনেতো কখনও এমন উন্মত্ততা দেখিনি। এমন বিভীষিকা চোখে পড়েনি। নিসের ঘটনা এভাবেই বর্ণনা করছিলেন একজন প্রত্যক্ষদর্শী। নাম তার ইসমালি খালিদি। ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভুত  মার্কিন লেখক। সংবাদ মাধ্যমকে ঘটনার তরজাতা বর্ণনা দিয়েছেন।  যারা এই বর্ণনা পড়বেন বা শুনবেন সবাই হবেন হতবাক। এমন নারকীয় ঘটনা, মৃত্যুর মিছিল কী দেখা যায়?

খালিদি বলছিলেন, বোনের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম। হোটেলে উঠেছি। হোটেলের কাছেই বাস্তিল উৎসব। বহুকাল ধরে জানি এটা অন্য এক ধরণের উৎসব। হোটেল থেকে মাত্র  ৮০০ মিটার দুরে। বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে। কেউ জানে না। শুধু দৌঁড়াচ্ছে। বিপদটা কি। কোন পথে গেলে বাঁচতে পারবো। এক যুবককে দেখলাম, ভয়ে নিজের দুটো বাচ্চাকে ছুঁড়ে ফেলছে। দৌঁড়ঝাপের মধ্যে পদদলিত হয়ে মারা যাবে এটিই তার ভয়। কেন জানি মনে হচ্ছিল-সে এমন পথই খুঁজছিল যে, তার বাচ্চা দুটি বেঁচে যায়। তার নিজের কোন চিন্তা নেই। বাচ্চা ছুঁড়ে দেয়ার পর নিজে বেড়া ডিঙাল। বাচ্চাদের নিয়ে আবার দৌঁড় শুরু করল সে।
ভূমধ্যসাগর তীর বরাবর এই নিস শহরে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন উৎসব দেখতে। প্রতিবারই তারা এই উৎসব দেখতে আসেন। লিড আন্ডাম্যান একজন অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক। থাকেন নিস শহরেই। তিনিও ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন সংবাদ মাধ্যমকে। বলেছেন, বান্ধবি শ্যালিকে নিয়ে দেখতে গিয়েছিলেন উৎসব। হঠাৎ দৌঁড়ঝাপ। মানুষ ছুটছে তো ছুটছেই। এক পর্যায়ে শুয়ে পড়লাম। ডান কান ঘেঁষে চলে গেলো ট্রাকটি। উঠে দেখি রক্ত আর মৃত দেহের স্তুপ। প্রতি মূহুর্তেই খবর আসছে নিস থেকে। এসব খবরে উৎসবটা কিভাবে নিথর মাংসপি-ে পরিণত হলো তার বর্ণনা আসছে।
এই জঙ্গি হানায়, কেউ হারিয়েছেন বাবা, কেউ মা, কেউ সন্তান, কেউ বন্ধু, কেউ বান্ধবি। আপাতত যে খবর আসছে তাতে দেখা যায় হত্যাকারী একজন তিউনিসিয়ান মুসলিম। যিনি ফরাসি নাগরিকত্ব পেয়েছেন অনেক আগেই। এই জঙ্গি হামলায় একজন মুসলিম মহিলা প্রথম নিহত হন। তার দুই ছেলে মায়ের লাশ ঘিরে কাঁদছিল। এই মাসের ১৫ তারিখের মধ্যেই ঢাকার গুলশানসহ ৮৩টি জঙ্গি হানা হয়েছে। ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১২টি হামলা হয়েছে ইউরোপে।  এর মধ্যে সাতটিই  হয়েছে ফ্রান্সে। এতে ২৪৪ জনের প্রাণ গেছে। কিন্ত  এভাবে ট্রাক নিয়ে হামলা নজিরবিহীন। আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরাও তাজ্জব। তারাও কোন হিসাব মেলাতে পারছেন না। ৮৪ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে ফরাসি সরকার। ১৬ জনের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক।  আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। আচমকা হামলার পর আতশবাজির এই উৎসব পরিণত হয় মৃত্যুর মিছিলে। ফরাসি সরকার খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে বার বার কেন ফ্রান্সেই হামলা হচ্ছে। ইউরো কাপ শেষ হওয়ার পর ফরাসি সরকার বাহবা পেয়েছিল দেশ বিদেশ থেকে। কিন্তু এতো বড় উৎসবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা যে দুর্বল ছিল তা ফরাসি সংবাদ মাধ্যমই জোর গলায় বলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *